নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের মতভেদের মধ্যে বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন চাওয়ার কথা জানাল ভারত।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বৃহস্পতিবার নয়া দিল্লিতে দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেশী দেশটির নির্বাচন প্রশ্নে এই অবস্থান জানান।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এর পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের নাক গলানোর যে অভিযোগ অন্তর্বর্তী সরকার করছে, তাও প্রত্যাখ্যান করেন জয়সওয়াল।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে সরকার পতনের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিলে ঢাকা ও দিল্লির সম্পর্কে টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়।
অভ্যুত্থানকারী তরুণরা শেখ হাসিনাকে ‘দিল্লির আজ্ঞাবাহী’ হিসাবে চিহ্নিত করে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে জন্য তাকে ফেরত দেওয়ার দাবি তোলে।
শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দিল্লিতে চিঠি পাঠালেও তার কোনও জবাব ছয় মাসেও পাওয়া যায়নি। বরং ভারতে বসে মেখ হাসিনা বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশে অস্থির করে তুলতে চাইছেন বলে অন্তর্বর্তী সরকারের অভিযোগ।
সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এক আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ তোলেন বলে দিল্লির নজরে আসে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিার প্রতিক্রিয়া জানান জয়সওয়াল।
গত রবিবার ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন, “তিনি (ড. ইউনূস) আলোচনা শুরু করেছেন এই কথা বলে যে আমরা অনেক বড় সংকটের মধ্যে আছি।
“এই সংকট বলতে উনি ভারতীয় আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। ভারতীয় আধিপত্যবাদ আমাদের এই পরিবর্তনকে একেবারেই স্বীকার করতে চায় না। পারলে আমাদের এক দিনে ধ্বংস করে দিতে চায় এবং সেই জন্য যা যা করবার দরকার, সব তারা করছে। এই ছিল তার কথা।”
এর প্রতিক্রিয়ায় জয়সওয়াল বলেন, এসব কথা বলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তাদের অভ্যন্তরের আসল সমস্যা থেকে মনোযোগ সরানোর চেষ্টা করছে।
“সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা এবং শাসনের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সেই সরকারের। এমন পরিস্থিতিতে যদি কেউ বলে যে বাইরের কারণ বা অন্য কেউ গোলযোগের জন্য দায়ী, তাহলে মনে হয় তারা আসল সমস্যা থেকে মনোযোগ সরিয়ে অন্যের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।”
এই ধরনের কথা সমস্যার সমাধান দেয় না বলে মন্তব্য করেন ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র।
তিনি বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে বলেন, “বাংলাদেশে জনগণের ইচ্ছা ও ম্যান্ডেট নিশ্চিত করতে অতি দ্রুত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করা প্রয়োজন।”
বাংলাদেশে বিএনপি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছে। অন্যদিকে অভ্যুত্থানকারী ছাত্রদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি নির্বাচনের আগে সংস্কারে জোর দিচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
তবে নির্বাচন যেন কোনোভাবে ডিসেম্বরের পরে না যায়, সেজন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে বিএনপি। আর তা ধরে বিএনপিকে এখন ভারতমুখী তকমা দিচ্ছে অভ্যুত্থানে সক্রিয়রা, যা এক সময় আওয়ামী লীগকে দেওয়া হতো।
ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র অন্তর্ভুক্তিমুলক নির্বাচনের কথা বললেও তার কোনো ব্যাথ্যা দেননি।
অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে বলে আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।