টেলিফোনে আড়িপাতা বন্ধের দাবি উঠেছে একটি নাগরিক সংলাপ থেকে। এজন্য জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি), ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশন (ডট) বিলুপ্তির দাবিও উঠেছে।
শনিবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে বেসিসের সভাকক্ষে সিভিল ‘রিফর্ম গ্রুপ- বাংলাদেশ ২.০’ এর আয়োজনে ‘নতুন বাংলাদেশে আড়িপাতা, গোপনীয়তার অধিকার ও বাক স্বাধীনতা’ শীর্ষক এক নাগরিক সংলাপে এই দাবি ওঠে।
সংলাপে বক্তারা নাগরিক গোপনীয়তা রক্ষার সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানায়। একই সঙ্গে গত দিনে ফোনে আড়িপাতায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন তারা।
সংলাপে বক্তব্য রাখেন আইনজীবী সারা হোসেন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, সাংবাদিক আশরাফ কায়সার, রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, রাজনীতিক জোনায়েদ সাকি, সাইবার বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির, ফয়েজ আহমেদ তৈয়ব, সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, আইনজীবী মিতি সানজানা, সাংবাদিক জাকারিয়া স্বপন। আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন তথ্য প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান সামি, সোশ্যাল মিডিয়া প্রাইভেসি বিশেষজ্ঞ শাবনাজ রশিদ দিয়া।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এনটিএমসির প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা আর বিরোধী মত দমনের হাতিয়ার এক জিনিস না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা আগের সংস্কৃতিতে যেন ফিরে না যায়।”
সারা হোসেন বলেন, “আমরা গত দুই সপ্তাহে নারীবিদ্বেষী, ভিন্ন সম্প্রদায়বিদ্বেষী বক্তব্য শুনছি। এসব রোধ করতে হবে। আমরা কীভাবে ইতিহাসকে উপস্থাপন করব, তাও নির্ধারণ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, কেউ যেন আদালতকে ব্যবহার করতে না পারে।
“প্রেস কাউন্সিলকে ঢেলে সাজাতে হবে। তবে সেখানে নিয়মকানুন আরোপ করতে গিয়ে যখন-তখন মামলা ঠুকে দেব এর-ওর নামে এমনটি যেন না হয়।”
জুলকারনাইন সায়ের বলেন, “বিগত সময়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের ফেইসবুক, মেইল হ্যাক করে সব তথ্য নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হতো। আর্মি, র্যাব ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের এভাবে ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে। এসব কাজের জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা দরকার, যাতে ভবিষ্যতে কোনও সরকার এ ধরনের কাজ করতে না পারে।”
মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “১৭ আগস্ট আমরা এনটিএমসি বিলুপ্তি করার বিবৃতি দিয়েছি। এনটিএমসির কার্যক্রম সম্পর্কে মানুষ জানেই না। গণমাধ্যমে যেসব গোপন ভিডিও ক্লিপ, অডিও প্রকাশ হয় আমরা কি কখনও প্রশ্ন করেছি, তারা এগুলো কোথায় পায়?
“চলতি বছর বিটিআরসি একটি বিদেশি কোম্পানিকে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের দায়িত্ব দেয়। আমরা বলেছি এগুলো দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে।”
জোনায়েদ সাকি বলেন, “ফোনে আড়িপাতা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা দরকার। তারা কী কী করেছেন জানতে হবে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নামে সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। আদালতের অনুমতি ছাড়া এবং শুধু আদালতের ব্যবহারের উদ্দেশ্য ছাড়া কারও গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা হবে না, এমন আইন করতে হবে।”