জুলাই আন্দোলনের অনেক গ্রাফিতি স্থান পেয়েছে নতুন পাঠ্যবইয়ে; তার মধ্যে একটি ছিল আদিবাসীদের নিয়ে। একটি সংগঠনের আপত্তির মুখে তা সরিয়ে ফেলায় প্রতিবাদ জানিয়েছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সমর্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি পাঠায়।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অন্বেষ চাকমার স্বাক্ষরে এই যৌথ বিবৃতিটি আসে।
তাতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফসল বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই পদক্ষেপ তাদের আশাহত করেছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবারের পাঠ্যবইয়ে অনেক পরিবর্তন আনার পাশাপাশি এই আন্দোলনের বহু গ্রাফিতি সংযোজন করে।
নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পাঠ্যবইয়ে রাখা হয় বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক সম্বলিত একটি গ্রাফিতি। যেখানে একটি গাছের পাঁচটি পাতা ছিল মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, আদিবাসীর পরিচয়বাহী। তার পাশে লেখা ছিল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’।
পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালিদের সংগঠনগুলোর সদস্যরা ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ ব্যানারে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ঘেরাও করার পর ১২ জানুয়ারি রাতে ওই বইয়ের অনলাইন ভার্সন থেকে গ্রাফিতিটি সরিয়ে ফেলা হয়।
‘উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী’ গোষ্ঠীর চাপে এনসিটিবির এই পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, আদিবাসী জনগোষ্ঠী আশা করেছিল যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের নতুন শাসক গোষ্ঠী রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে আদিবাসীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
“কিন্তু বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাষ্ট্রের নতুন শাসকগোষ্ঠী তার কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা বললেও পাহাড় ও সমতলে বসবাসরত আদিবাসীদের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের গৃহীত পদক্ষেপগুলোতে সেটির যথাযথ ও সঠিক প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।”
“পিসিপি ও এইচডব্লিউএফ মনে করে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আদিবাসীদের অস্বীকৃতি জানানো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মূল চেতনার পরিপন্থী। সংবিধানের দোহাই দিয়ে পাঠ্যপুস্তক থেকে আদিবাসী শব্দ সম্বলিত গ্রাফিতি বাতিল করে এনসিটিবি উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাথে আপস করেছে।”
নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে আদিবাসী শব্দ সম্বলিত ওই গ্রাফিতি পুনর্বহালের পাশাপাশি পাঠ্যবইয়ে আদিবাসীদের সঠিক ইতিহাস ও পরিচিতি তুলে ধরার দাবি জানানো হয় সংগঠন দুটির যৌথ বিবৃতিতে।
সেই সঙ্গে সাংবিধানিকভাবে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ িনতেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পাহাড়ি সংগঠন দুটি।
আদিবাসী হিসাবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শুরু েথকেই করে আসছে জনজাতি গোষ্ঠীগুলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আদিবাসী শব্দটি বললেও সরকারি নথিপত্রে এখনও ‘ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী’, উপজাতি কথাগুলোই লেখা আছে।