Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

চট্টগ্রাম চেম্বারে পরিবারতন্ত্র বিলোপে বিক্ষোভ  

রবিবার সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার চট্টগ্রামের সামনে মানববন্ধন করেন ব্যবসায়ীরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
রবিবার সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার চট্টগ্রামের সামনে মানববন্ধন করেন ব্যবসায়ীরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিকে (সিসিসিআই) পরিবারতন্ত্রের কবল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এবং বর্তমান কমিটির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

তাদের অভিযোগ, সাবেক দুই সভাপতি এম এ লতিফ ও মাহবুবুল আলম ১৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম চেম্বারকে স্বৈরশাসনের আজ্ঞাবহ ও পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। এর ফলে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সাবেক দুই সভাপতির কবল থেকে চট্টগ্রাম চেম্বারকে মুক্ত করে সাধারণ ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বশীল চেম্বারে পরিণত করতে বিভিন্ন দাবিও মানববন্ধনে তোলা হয়।             

নগরীর আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার চট্টগ্রামের সামনে রবিবার সকালে আয়োজিত মানববন্ধনে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক নেতা, গার্মেন্ট ব্যবসায়ী নেতা থেকে শুরু করে চেম্বারে বিভিন্ন সময়ে চাকরিচ্যুত কর্মচারী-কর্মকর্তারা যোগ দেন।     

শনিবার সকালে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার মাজার গেট এলাকা থেকে চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিনই বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

এর পরদিনই মানববন্ধনের আয়োজন করেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।

মানববন্ধনে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, “১৭ বছর ধরে এই চেম্বারকে স্বৈরশাসনের আজ্ঞাবহ ও পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন এম এ লতিফ এবং মাহবুবুল আলম।

“এর ফলে চট্টগ্রাম চেম্বার অনেকটা মরা বাঘে পরিণত হয়েছে। তাদের কারণে এই চেম্বার তার ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা হারিয়েছে। আর ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে।”

ব্যবসায়ী নেতা এম এ লতিফ ও মাহবুবুল আলমের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা অনেকদিন লুটেপুটে খেয়েছেন, আর নয়। এবার সম্মান থাকতে পদত্যাগ করুন। তা না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিব।”

এম এ লতিফের ছেলে ওমর হাজ্জাজ বর্তমানে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি। ২০১৯-২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ২০১৭-২০১৯ সাল পর্যন্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

মানববন্ধনে ওমর হাজ্জাজসহ পরিচালনা পর্ষদ নেতাদের অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানান চেম্বারের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এস এম নুরুল হক।  

তিনি বলেন, “আজ এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আমরা নির্যাতিত অবহেলিত ব্যবসায়ীরা একত্র হয়েছি। নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি ঘুরেফিরে চট্টগ্রাম চেম্বারে দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করে আসছেন। নির্বাচনবিহীন এবং আজ্ঞাবহ নেতৃত্বের কবলে এই চেম্বার।

“আমরা চট্টগ্রাম চেম্বারকে পরিবারতন্ত্রের কবল থেকে মুক্ত করে সাধারণ ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বশীল চেম্বারে পরিণত করতে চাই। চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদ নেতাদের দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে।”

২০১৩ সাল থেকে চট্টগ্রাম চেম্বারের নেতৃত্ব নির্ধারণ করে আসছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। তার বলয়ের বাইরের কারোর চেম্বারের পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ ছিল না।

একই সময়ে চট্টগ্রাম চেম্বারে প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করেন টানা পাঁচ মেয়াদের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম।

সর্বশেষ ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম চেম্বারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ২৪ জন পরিচালক। এই পরিচালকদের প্রায় সবাই এম এ লতিফ ও মাহবুবুল আলমের বলয়ের বা তাদের পরিবারের সদস্য।

মানববন্ধনে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, “পরিবারতন্ত্রের কবলে পড়ায় চট্টগ্রাম চেম্বার সাধারণ ব্যবসায়ীদের হয়ে কথা বলতে পারেনি। ব্যবসায়ীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত দীর্ঘদিন ধরে।

“ব্যবসায়ীরা যদি ঠিকভাবে ব্যবসা করতে না পারে, তাহলে তাদের পক্ষে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।”

মানবন্ধনের পর বারভিডার সদস্য হাবিবুর রহমানকে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি হিসেবে চট্টগ্রাম চেম্বার কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

সেখানে উপস্থিত চট্টগ্রাম চেম্বার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা সবাই চেম্বারের কর্মী। কারও দলীয় বা পরিবারের কর্মী নন। আগে যা হয়েছে, হয়েছে। আজ থেকে চেম্বারের কর্মী হিসেবে কাজ করতে শিখুন।”

চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদ নেতাদের পদত্যাগের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে কি না-এই প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান বলেন, “আমরা তাদের বলেছি, মান-সম্মান থাকতে দ্রুত পদত্যাগ করুন। এখন থেকে আমরা ক্ষণগণনা শুরু করছি।”

সমাবেশে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম চেম্বার সংস্কারে কয়েকটি দাবি তোলা হয়।

এগুলোর মধ্যে আছে চট্টগ্রাম চেম্বারে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে পুনর্বহাল, চট্টগ্রাম চেম্বারের সদস্যপদ প্রাপ্তি সব সদস্যের জন্য সহজীকরণ, বর্তমান সদস্য তালিকা যাচাই করে সেখান থেকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির পকেট ভোট ব্যাংক বিলুপ্ত করে একটি সঠিক ভোটার তালিকা তৈরি।

দাবির মধ্যে আরও রয়েছে দক্ষ নেতৃত্ব বাছাইয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতকরণ, একই নেতৃত্ব যাতে একাধিকবার নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে তার জন্য আইন সংশোধন ও বিগত ১৬ বছরে চেম্বারের আর্থিক লেনদেনের নিরপেক্ষ অডিট করা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত