Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছাড়াল ৫০০

Dengue cases break annual record in Bangladesh as death toll nears 500
[publishpress_authors_box]

দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। দেশে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটা এক বছরের হিসেবে দ্বিতীয় সর্বাধিক সংখ্যা।

এর আগে ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল এক হাজার ৭০৫ জনের। যা দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। সে হিসেবে চলতি বছরের অবস্থান দ্বিতীয়, যদিও ২০২৪ সাল এখনও শেষ হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও সাত জনের প্রাণ গেছে। তাদের নিয়ে চলতি বছরের ১১ মাস তিন দিনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৪ জনে। আর নভেম্বরের প্রথম তিন দিনে মৃত্যু হলো ১৬ জনের।

সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া সাত জনের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, উত্তর সিটি করপোরেশন এবং খুলনা বিভাগের হাসপাতালে েচিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে দুইজন করে আর বরিশাল বিভাগের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে মৃত্যু হয়েছে একজনের।

মৃতদের মধ্যে চারজন পুরুষ আর তিনজন নারী। মারা যাওয়াদের মধ্যে পাঁচ বছরের মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে।

এখন পর্যন্ত মৃত ৫০৪ জনের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকার বাসিন্দা ছিলেন সবচেয়ে বেশি, ২১২ জন।

অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬২৯ জন। তাদের নিয়ে মাসের প্রথম তিনদিনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী সংখ্যা দুই হাজার ২১৬ জন। আর মোট রোগীর সংখ্যা ৯৩ হাজার ৬৮৫ জন।

এছাড়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন দুই হাজার ৫৫৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি এক হাজার ১৪ জন আর ঢাকা বিভাগের বাইরের হাসপাতালে আছেন এক হাজার ৫৪৫ জন।

মোট ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি এলাকার রোগী সংখ্যা ৩৭ হাজার ৪৩৫ জন আর ঢাকার বাইরের রোগী ৪৫ হাজার ২৫০ জন।

 ডেঙ্গু পরীক্ষায় ‘এনএস১ এলিসা’ বেশি কার্যকর

ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষায় এতদিন এনএস১ পরীক্ষার উপর নির্ভর করা হলেও নতুন গবেষণা বলছে ডেঙ্গু শনাক্তে এনএস১ এলিসা বেশি নির্ভরযোগ্য ও নির্ভুল। এনএস১ এর চাইতে এই পরীক্ষার খরচ কিছুটা বেশি হলেও তা অসহনীয় নয়।

জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করছেন, খরচের কথা না ভেবে সরকারের উচিত দেশ জুড়ে এই পরীক্ষা সহজ করা।

মঙ্গলবার ঢাকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার (এনআইএলএমআরসি) মিলনায়তনে ডেঙ্গু শনাক্তকণে বিভিন্ন পরীক্ষার তুলনামূলক বিশ্লেষণে একথা জানানো হয়।

সেখানে বলা হয়, দেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার কাজে এই ফলাফল ব্যবহার করা উচিত।

অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. আরিফা আকরাম গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারে ডেঙ্গু শনাক্তকণে বিভিন্ন পরীক্ষার তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারে ডেঙ্গু শনাক্তকণে বিভিন্ন পরীক্ষার তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

দেশে ডেঙ্গু শনাক্তে এনএস১ আইসিটি, এনএস১ এলিসা ও আরটি-পিসিআর এই তিন ধরনের পরীক্ষা রয়েছে জানিয়ে এনআইএলএমআরসিতে এই তিন পরীক্ষার কার্যকারিতার তুলনা তুলে ধরা হয়।

ডা. আরিফা বলেন, তিন ধরনের পরীক্ষার মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্তে এনএস১ এলিসা তুলনামূলক ভালো ফল দেয়।

সকাল সন্ধ্যাকে এই চিকিৎসক বলেন, “এনএস১ আইসিটি  এনএস১ নামে সর্বাধিক পরিচিত) পরীক্ষায় খরচ ৫০ টাকা, কিন্তু এখানে অনেক বেশি ফলস নেগেটিভ হয় অর্থাৎ ডেঙ্গুতে কেউ সংক্রমিত হলেও পরীক্ষায় সেটা আসে না। অন্যদিকে, আরটি পিসিআর পরীক্ষা নির্ভরযোগ্য, কিন্তু এর পেছনে খরচ করতে হয় সাড়ে তিন হাজার টাকা। আর এনএস১ এলিসা পরীক্ষায় শনাক্তের নির্ভরযোগ্যতা বেশি, খরচ হয় ৪০০ টাকার মতো।”

২০২৩ সালে ডেঙ্গু মহামারির সময় অনেক রোগী এনএস১ নেগেটিভ ছিল, কিন্তু পরে তাদের ডেঙ্গু ডায়াগনোসিস হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন দেশের গবেষণাতেও দেখা গেছে, এনএস১ ৩৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ ক্ষেত্রে পজিটিভ হয়, অনেক পজিটিভ কেইসের ডায়াগনোসিস হয় না।

“এই বছরেই ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ডেন-২ সংক্রমণের ক্ষেত্রে এনএস১ পরীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়, ফলস নেগেটিভ নিয়ে আলোচনা হয়।”

কিন্তু ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কমাতে রোগটির দ্রুত শনাক্তকরণের বিকল্প নেই জানিয়ে ডা. আরিফা বলেন, “মহামারী রোধে এর সঠিক তথ্য পাওয়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।  ফলস নেগেটিভের কারণে মানুষ জানতে পারে না তার ডেঙ্গু হয়েছে। ফলে তিনি চিকিৎসা নেন না এবং একসময় তার জটিলতা তৈরি হয়, পরিস্থিতি খারাপ হয়।”

গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ডেঙ্গু দ্রুত শনাক্তের জন্য এনএস১ এলিসা ৯৪ শতাংশ কার্যকর, যেখানে এনএস১ ৫৬ ক্ষেত্রে কার্যকর।

অনুষ্ঠানে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান  আইইডিসিআর) এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “দেশের সব এলাকায় এনএস১ এলিসা পরীক্ষা ব্যবস্থা করা উচিত এবং এখানে সরকারের ভর্তুকি দেওয়া উচিত।

“কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও খরচের কথা সরকারের ভাবা উচিত। কারণ, সংক্রমিত ব্যক্তি ও মৃত্যুর ক্ষতি বিবেচনায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি বেশি হবার কথা নয়।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত