একদিনের ব্যবধানে আবারও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সর্বোচ্চ রোগী দেখল দেশ। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ২ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সোমবার জানিয়েছে, এইডিস মশাবাহিত এই জ্বর নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৯২ জন। যা কিনা চলতি বছরে একদিনে সর্বোচ্চ রোগী। এর আগে গত শনিবার ৩৫২ জনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আর গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩৯২ জনকে নিয়ে টানা তৃতীয় দিনের মতো হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। এর আগে রবিবার ৩২৯ জন, শনিবার ৩৫২ জনের কথা জানানো হয়েছিল।
এর আগে মাঝে একদিন বাদ দিয়ে টানা ৫ দিন রোগী ছিল ২০০ এর বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩৯২ জনের মধ্যে বরিশাল বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১২৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮০ জন, ঢাকা বিভাগের ৩১ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬৪ জন, খুলনা বিভাগে ২৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪১ জন আর রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ জন করে।
তাদের নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত কেবল সরকারি হিসাবেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়ে গেল; মোট রোগী সংখ্যা ৮ হাজার ১৫০ জন।
মোট ৮ হাজার ১৫০ জনের মধ্যে বরিশাল বিভাগের আছেন ৩ হাজার ৭০৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১ হাজার ২৫৪ জন, ঢাকা বিভাগের ৭৬১ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬৪০ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১ হাজার ১৫৭ জন, খুলনা বিভাগের ২৫১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের ১১৩ জন, রাজশাহী বিভাগের ২১৭ জন, রংপুর বিভাগের ২৬ জন সিলেট বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২১ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা দুইজনই নারী। তাদের একজন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে আরেকজন ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে মারা যাওয়া নারীর বয়স ছিল ১০০ বছর আর কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা যাওয়া নারীর বয়স ৪০ বছর।
তাদের নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ৩৪ জনের মৃত্যু হলো। আর চলতি মাসে মৃত্যু হলো ১১ জনের। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে মৃত্যু হয়েছিল ১০ জনের। অর্থাৎ মৃতুতে পুরো জানুয়ারি মাসকে ছাড়িয়ে গেল জুন মাস।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি এবং মে মাসে মৃত্যু হয়েছিল ৩ জন করে, আর এপ্রিলে মৃত্যু হয়েছিল ৭ জনের।
চলতি বছরে মোট মারা যাওয়া ৩৪ জনের মধ্যে পুরুষ ১৭ জন আর নারী ১৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানাচ্ছে, এই ৩৪ জনের মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৪ জন, ঢাকা বিভাগ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের আছে একজন করে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোশনের ১৬ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোশন আর খুলনা বিভাগের আছেন ২ জন।
২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গুর তথ্য রাখতে শুরু করে সরকার, সে বছরে রোগী ছিল পাঁচ হাজার ৫৫১ জন। ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ রোগীর সঙ্গে সর্বোচ্চ মৃত্যুও দেখে দেশ।
অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন; তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ৫৭৫ জনের।
২২ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২৩ সালে দেশে ডেঙ্গু রোগী হয় তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন, মৃত্যু হয় এক হাজার ৭০৫ জনের। তার আগে ২০১৯ সালে রোগী ছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ২০২০ সালে রোগী ছিল এক হাজার ৪০৫ জন।
সে বছরেই করোনা মহামারির মুখোমুখি হয় বিশ্ব। ভাইরোলিজস্টদের ব্যাখ্যা ছিল, যখন কোনও ভাইরাস মহামারির আকার ধারণ করে তখন অন্য ভাইরাসের প্রকোপ কমে যায়।
এর পরের বছর ২০২১ সালে ডেঙ্গু রোগী ছিল ২৮ হাজার ৪২৯ জন এবং ২০২২ সালে ছিল ৬২ হাজার ৩৮২ জন।