ঢাকায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বটি সিটি করপোরেশনের; আর চিকিৎসার দায়িত্বটি বর্তায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর।
কিন্তু মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেনের সভাপতিত্বে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব হ্রাসকরণ ও চিকিৎসাসেবা সমন্বিতকরণ শীর্ষক এক বিশেষ সভায় বিপরীত দিক থেকে কথা এল দুই দপ্তরের দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে।
রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার আগে মশা নিধনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন ও প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস গুরুত্ব দিয়েছেন চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ওপরে।
দেশে আগে থেকেই ডেঙ্গু রোগী থাকলেও ২০০০ সালে তা প্রথম সবার নজরে আসে। তখন থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেখা যায় ২০২৩ সালে। তাই এবার আগে থেকেই ডেঙ্গু বিষয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।
সভায় তিনি ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, “ডেঙ্গু রোগী নিয়ে আমাদের এবার আগে থেকেই সতর্ক না হয়ে কোনও উপায় নেই।”
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনি একদিকে মশা নিধন, অন্যদিকে আগে থেকেই সতর্ক ও সচেতন থাকার আহ্বান জানান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “নিজ এলাকার কমিউনিটি সম্পৃক্ততা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে।”
মশা নিধনের জন্য মানসম্পন্ন ওষুধ কেনার পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রতিও জোর দেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে শুরু হওয়া উদ্যোগ চলমান রেখে সরকারের সব অংশীজনদের এক হয়ে কাজ করার প্রতিও গুরুত্ব দেন তিনি।
সভায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে এইডিস মশার লার্ভার বিষয়ে তথ্য নিতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে আহ্বান জানান। নিয়ম না মানলে জরিমানার ব্যবস্থা করার কথাও বলেন। সেইসঙ্গে যারা স্বাস্থ্যসেবায় বাধা তৈরি করবে তাদের প্রতি আরও কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেন।
অন্যদিকে সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “ডেঙ্গু আক্রান্ত সব রোগীকে সময়মতো চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। কোনও রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পাঠানো যাবে না।”
গত বছরে কেন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নারী ও শিশুর মৃত্যু বেশি হলো, তা নিয়ে গবেষণা করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
২০২৩ সালে যখন দেশে ডেঙ্গু রোগের বাহক এইডিস মশার তাণ্ডব চলছিল। তখন মেয়র তাপস বলেছিলেন, “ডেঙ্গু কেউ নির্মূল করতে পারবে না। কোনও দেশ করতে পারেনি। আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। চিকিৎসা সেবার মান পরিধি আরও বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে মৃত্যুর হার কমাতে পারব।”
অথচ বিশেষজ্ঞরা বছরের শুরু থেকেই মশা নিধনে কীটনাশক ছিটানো কার্যক্রমে প্রাধান্য দেওয়ার উপর জোর দিচ্ছিলেন। তার ওই বক্তব্যের পরে সিটি করপোরেশন ওষুধ ছিটানোর কাজ কতটুকু করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
সভায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের(ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “এ বছর আরও বেশি সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করে আমাদের ওষুধ কেনার উদ্যোগ নিতে হবে।”
সভার শুরুতেই বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব ও সমস্যা নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।