বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিবন্ধন সনদ পেয়েও চাকরি না পাওয়ায় এই দাবি আদায়ে আগামী ১৫ জুলাই এনটিআরসিএ কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন বঞ্চিতরা।
সোমবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন এনটিআরসি নিবন্ধিত নিয়োগ বঞ্চিত শিক্ষক ফোরামের সভাপতি নীলিমা চক্রবর্তী।
তিনি বলেন, ১-১৭তম ব্যাচের নিবন্ধিত শিক্ষকদের অনেকেই চাকরি পায়নি। এদের অনেকের বয়স ৩৫ ছাড়িয়ে গেছে। এর জন্য দায়ী এনটিআরসিএ। এই নিবন্ধিত শিক্ষকরা যোগ্য ছিলেন বলেই তাদের সনদ দেওয়া হয়েছিল। এখন চাকরি না পাওয়ায় তারা অনেক ধরনের বিড়ম্বনার মধ্যে রয়েছে।
নীলিমা চক্রবর্তী বলেন, “আমরা নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে সনদ পেয়েছি। এই সনদ আমাদের যোগ্যতা প্রমাণ করে। এরপরও কেন আমাদের চাকরি দেওয়া হলো না, তা আমরা জানতে চাই।”
ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি নাসরিন সুলতানা বলেন, “আমি ১০ বছর আগে সনদ পেয়েছি, কিন্তু এখনও চাকরি পাইনি। আমার মতো আরও অনেকেই আছেন, যারা এনটিআরসিএ থেকে নিবন্ধন সনদ পেয়েছে। চাকরি না পেয়ে এখন তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করব মানবিক দৃষ্টি থেকে হলেও আমাদের যেন চাকরি দেওয়া হয়।”
এনটিআরসি নিবন্ধিত নিয়োগ বঞ্চিত শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম বলেন, “আমরা যোগ্যতা থাকায় সনদ পেয়েছি। চাকরি পাওয়ার অধিকারও আমার আছে। এদেশের গ্রামে-গঞ্জে শিক্ষিত তরুণ-তরুণিরা বেকার থাকলে তাদের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। সনদপ্রাপ্তরাও এ ধরনের বঞ্চনার মধ্যে রয়েছে।”
নীলিমা চক্রবর্তী বলেন, “১-১৭তম সকল নিয়োগ বঞ্চিতদের নিয়োগ কার্যকর করতে হবে, নিয়োগের ঘোষণা দিতে হবে। আজকে আমাদের নিয়োগ বঞ্চিত হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা রয়েছে এনটিআরসিএ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনা, সিদ্ধান্তহীনতা, নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী আইন পরিবর্তন, সংযোজন, বিয়োজন, ও সর্বোপরি সদিচ্ছার অভাব।
“১৮তম ব্যাচের থেকে পাস করলেই সরাসরি নিয়োগ। আমরা এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই। তবে ১৮তমদের নিয়োগ কার্যকর করার আগে যে সকল নিয়োগ বঞ্চিত সনদধারীরা আছে তাদের নিয়োগ আগে কার্যকর করতে হবে। এটা আমাদের দাবি, আমাদের অধিকার। সনদ যার নিয়োগ হোক তার।”
নীলিমা চক্রবর্তী আরও বলেন, “গত ২০ মার্চ এনটিআরসিএ অফিসের সামনে ৫ ঘণ্টাব্যাপী অবরোধের ফলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান আমাদের নিয়ে গোল টেবিল বৈঠক করেন। সে সময় তিনি সমঝোতার প্রস্তাব দেন, আমরা যদি আন্দোলন ও কর্মসূচির বিরতি নেই, তবে রোজার ঈদের পরে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আমাদের আলোচনায় বসার ব্যবস্থা তিনিই করবেন।
“সেই সঙ্গে চেয়ারম্যান আরও জানান লক্ষাধিক শূন্য পদ আছে, তাই আমাদের নিয়োগে তার আপত্তি নেই। তিনি বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীকে জানাবেন। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মানবিক দিক থেকে নিয়োগ সুপারিশ করে দেবেন। আমরা এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে আন্দোলন ও কর্মসূচি থেকে বিরতি নিয়েছি। কিন্তু সময় অতিবাহিত হলেও চেয়ারম্যান কথা রাখতে পারেনি। তিনি বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী রাজি নয়। একজন সম্মানিত চেয়ারম্যান তার কথা রাখেনি। তারা কোনও প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। একজন সম্মানিত মানুষের সম্মান অন্য সম্মানিত মানুষ রক্ষা করে থাকেন। তাদের কাছে থেকে সাধারণ মানুষ কী শিখবে?”
তিনি বলেন, “এখানে অনেকেই আছে যারা নন-এমপিও স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ও কারিগরি শাখায় শিক্ষকতা করছে, কেউবা আবার খণ্ডকালীন হিসেবে শিক্ষকতা করছে। তাই যারা নিয়োগ বঞ্চিত আছে তারা যেমন যোগ্যতা সম্পন্ন, তেমনি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। এই নিয়োগ বঞ্চিতদের নিয়োগ দিলে নিয়োগ বঞ্চিতদের সাথে সাথে এই সরকার ও লাভবান হবে।”