Beta
বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫

রূপচর্চায় ফিটকারি নিয়ে কী বলছেন ডার্মাটোলজিস্টরা  

fitkari-skincare-010724-02
[publishpress_authors_box]

রূপচর্চার ঘরোয়া পরামর্শ নিয়ে ভিডিও ও রিলস খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সোশাল মিডিয়াতে। দারুচিনি থেকে হলুদের জাদুকরি গুণ নিয়ে এসব কনটেন্ট প্রচুর ভিউ কামিয়ে নিচ্ছে। কনটেন্ট ক্রিয়েটররা নতুন করে ভাইরাল করে তুলেছে অতি পরিচিত ফিটকারি বা পটাশ অ্যালাম; এ কথা জানাচ্ছে ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন।    

অনেকের মনে থাকবে, পানি বিশুদ্ধ করতে অথবা  দাঁড়ি শেভ করার পর এক কালে ফিটকারি দেওয়ার চল ছিল খুব। উঠতি বয়সীদের ব্রণ সারানোর টোটকা ছিল ফিটকারি।  গ্রাম থেকে শহরের ঘরে ঘরেও এক খণ্ড ফিটকারি থাকতই। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও ফিটকারির উপকারিতার কথা বলা আছে।

পরীক্ষিত গুণের ফিটকারি নিয়ে এবার সোশাল মিডিয়াতে খুব চর্চা চলছে।

“ফিটকারির অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ ত্বকের যত্ন ও শরীরের পরিচ্ছন্নতায় কাজের বলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবারও এর জনপ্রিয়তা দেখা যাচ্ছে।”

ইন্ডিয়া টুডের কাছে এ কথা বললেন ভারতের  গুরুগ্রামের নাইন মিউজেস ওয়েলনেস ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা ও কসমেটোলজিস্ট গিতা গ্রিওয়াল।

ব্রণ সারাতে, তারুণ্য ধরে রাখতে এবং ডিওডোরেন্ট হিসাবে এক ফিটকারি দিচ্ছে সব প্রাকৃতিক প্রতিকার।  

এখন সোশাল মিডিয়াতে ডিআইওয়াই বা  ‘ডু ইট ইয়োরসেলফ’ নিয়ে মেতে থাকেন সবাই। ঘর সাজানোর নানা জিনিস বানানো থেকে রূপচর্চায় ঘরোয়া উপায় নিয়েও  ডিআইওয়াই ভিডিও চলছে ইউটিউব ও ফেইসবুকে।

সোশাল মিডিয়ার ইনফ্লুয়েন্সারদের কারণে ফিটকারির কথা আবারও মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন মুম্বাই শহরে ডক্টর এলএইচ হিরানানদানি হসপিটালের ডার্মাটোলজিস্ট  গীতিকা সনদীয়া বিয়ানি।      

ফিটকারির যত গুণ

ত্বকের মরা চামড়া তুলে ফেলা, ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা, সংক্রমণ রোধ করার গুণ রয়েছে ফিটকারির। ফিটকারি দিলে মুখের ত্বকের ছিদ্র ছোট হয়ে আসে, অতিরিক্ত তেলের নিঃসরণ কমে; তাতে চেহারায় জেল্লা বাড়ে এবং ত্বক অনেক মসৃণ দেখায়।

চিকিৎসকরা বলছেন, এই অ্যালাম বয়স ধরে রাখতে পারে; ত্বক টান টান রাখে বলে বলিরেখা ও ভাঁজ পড়ে না সহজে।

ফিটকারির গুণাগুণ বলতে গিয়ে বিয়ানি বলেন, শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে এই অ্যালাম। এ কারণেও ত্বক বুড়িয়ে যায় না সহজে।    

ফিটকারির অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে সহায়ক হয়ে ওঠে। সেসব ব্যাকটেরিয়া বগলে ও গায়ের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী তা সহজেই ধ্বংস করে দেয় ফিটকারি। এ কারণে ফিটকারিকে প্রাকৃতিক ডিওডারেন্ট বলা হচ্ছে। ফিটকারি মাখলে বাড়তি ঘামের সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে।  

ফিটকারি কীভাবে ব্যবহার করা যায়?

ব্রণের সমস্যা হলে ছোট এক টুকরা ফিটকারি পানিতে গুলে নিয়ে তুলা পানিতে ভিজিয়ে ত্বকে ব্রণের উপর চেপে চেপে বসাতে হবে। এভাবে ১৫-২০ মিনিট থাকার পর মুখ ধুয়ে নিতে হবে।    

ফিটকারি গুঁড়া করে সামান্য পানি মিশিয়ে ঘন গোলা করে নিতে হবে। এবার মুখে ও ঘাড়ে মেখে নিতে হবে। ১০-১৫ মিনিট পর হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। তারুণ্য ধরে রাখতে রূপচর্চায় ফিটকারি এভাবে  ব্যবহার করা যায়।

ত্বকে সামান্য কেটে গেলে ওই জায়গায় ফিটকারি দিলে রক্তপাত বন্ধ হয় এবং ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে ওঠে।

যাদের ঘাম ও দুর্গন্ধের সমস্যা আছে তারা এক টুকরা ভেজা ফিটকারি নিয়ে বগল ও ঘামের জায়গায় ঘষবেন। এছাড়া পানিতে ফিটকারি গুলে নিয়ে স্প্রে হিসাবেও ব্যবহার করা যায়।  

ফিটকারির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে?

যাদের ত্বক খানিক স্পর্শকাতর, তাদের বেলায় ত্বক জ্বালাপোড়া করতে পারে, শুষ্ক অনুভব হতে পারে। কারও কারও এলার্জির মতো চুলকানি দেখা দিতে পারে অথবা র‌্যাশ উঠতে পারে।  

ফিটকারি ঘন ঘর ত্বকে মাখলে ত্বক শুষ্ক হতে পারে।

ফিটকারি মাখার সময় চোখের কাছাকাছি ঘষা এড়াতে হবে।

ডার্মাটোলজিস্টরা কী বলছেন?

চিকিৎসক বিয়ানি ইন্ডিয়া টুডের কাছে বলেন, “ফিটকারি যুগ যুগ ধরেই ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ডার্মাটোলজিস্টরা ফিটকারি দিতে বলেন না।

“যদি সাধারণ কিছু যত্নআত্তিতে, যেমন মুখের ব্রণ, গায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে ডার্মাটোলজিস্টরা ফিটকারির গুণের কথা বলে থাকেন। তবে অবশ্যই ফিটকারি মুখে ও গায়ে সঠিক উপায়ে ও পরিমাণে মাখতে হবে।”

জ্বালাপোড়া ও এলার্জির মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে চিকিৎসায় ফিটকারি ব্যবহার করেন না ডার্মাটোলজিস্টরা।

আর এ কারণেই ডার্মাটোলজিকাল চিকিৎসায় ফিটকারি এখনও যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনুমোদিত নয় বলে জানালেন চিকিৎসক গ্রেওয়াল।   

ফিটকারির উপকারিতা একেকজনের বেলায় একেক রকম হতে পারে। ত্বকের সামান্য সমস্যায় ফিটকারি দিলেও গুরুতর সমস্যায় ফিটকারির ব্যবহার এড়ানো দরকার বলে পরামর্শ দিচ্ছেন এই চিকিৎসকরা।  

একজন ডার্মাটোলজিস্টের সঙ্গে আলাপ করে তবেই ত্বকে ফিটকারির ব্যবহার করা ভালো।  

ফিটকারির বিকল্প কী?

ফিটকারির বদলে টি ট্রি ওয়েল দিয়েও ব্রণ থেকে মুক্তি মিলবে। আর গায়ের দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পেতে বেকিং সোডা, নারিকেল তেল, সুগন্ধী তেল দেওয়া যেতে পারে।

প্রথমবারের মতো এই অ্যালাম ত্বকে মাখলে অবশ্যই পানিতে গুলে নিতে হবে এবং খুব বেশিক্ষণ ত্বকে ফিটকারি মেখে থাকা যাবে না।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, আগে ত্বকের সামান্য অংশে ফিটকারি মেখে দেখতে হবে চুলকানি, র‌্যাশ দেখা দেয় কি না।

মুখে ফিটকারি দিলে এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে কোনো ক্রিম বা লোশন মেখে নিতে হবে। এতে করে ত্বকের শুষ্কভাব এড়ানো যাবে। সপ্তাহে দুই-তিন দিনের বেশি ফিটকারি দেওয়া ঠিক হবে না মুখে।

ফিটকারি কি খাওয়া যায়?

সোশাল মিডিয়াতে অনেকে এই অ্যালাম খাওয়ার কথা জানাচ্ছে। ফিটকারি খাওয়া নিরাপদ কি না সেই প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের কাছে রেখেছিল ইন্ডিয়া টুডে।

গুরুগ্রামের পরশ হেলথ প্রতিষ্ঠানের প্রধান ক্লিনিকাল নিউট্রিশন নীলিমা বলেন, “বাজারে যে অ্যালাম পাওয়া যায় তা খাওয়ার উপযোগী নয়। ফিটকারি খাওয়ার কথা চিকিৎসকরা কখনও বলেন না।”

ফিটকারি ত্বকের উপরে মাখা যায়, স্প্রে করা যায়; কিন্তু খাওয়া যাবে না। ভুল করে, অজ্ঞতা থেকে অথবা সোশাল মিডিয়াতে বিভ্রান্তিকর ভিডিও দেখে উৎসাহি হয়ে ফিটকারি খেয়ে নিলে মাথা ঘোরা, বমি এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত