মাজার ও ইসলামের বিভিন্ন মতাদর্শের প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মাহফুজ আলম।
বিভিন্ন স্থানে মাজারে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রেক্ষাপটে শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই আহ্বান জানান।
শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর এলাকায় একটি মাজারে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর আগে ২৯ আগস্ট সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় একটি মাজারে ভাংচুর করা হয়। তারও আগে গত ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ভেঙে ফেলা হয় একটি মাজার।
এই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার রাতে ‘খারেজি জাহেলিয়াত বন্ধ করেন/আমরা মরব, তবু মাথা নোয়াবো না’ শিরোনামের মাহফুজ আলমের ফেইসবুক পোস্টে বলা হয়, “মাজার ও ইসলামের বিভিন্ন তরিকা (মতাদর্শ) এবং মাসলকের (পথ) প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা বন্ধ করতে হবে।
“আজ মাজার ভাঙবে, কাল সত্যপন্থী পীরদের দরগা দরবার ভাঙা হবে, পরশু ভিন্ন তরিকার মসজিদ ভাঙা হবে– এ সকল নৈরাজ্য যারা করে বেড়াচ্ছেন, তারা ইসলাম ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন। বাংলাদেশের জনগণকে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ইসলামের বৈচিত্র্য রক্ষা করতেই হবে।”
পোস্টে মাহফুজ আলম আরও লিখেছেন, “এক জালেম আজকে আমাকে নাস্তিক ইসলামবিদ্বেষী বলেছেন। এ মিথ্যুক ফাসিক খোঁজ নিয়ে কথা বলে নাই। ইন্নাজ জন্না আকযাবুল হাদিস। অনুমান নির্ভর কথা বলে ওরা আমাদেরকে হত্যাযোগ্য করে তুলছে। ওরা তো বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষকেই মুসলমান মনে করে না।
“আমরা ইসলামবিদ্বেষের বিরুদ্ধে, ট্যাগিংয়ের রাজনীতির বিরুদ্ধে, বাঙালি মুসলমান, সর্বোপরি বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যাযোগ্য করার বিরুদ্ধে লড়েছি। নিপীড়িত হয়েছি। কিন্তু, আজ আমাদেরকে এ জাহেলরা হত্যাযোগ্য করে তুলেছে।”
তাদেরকে ভিনদেশের এজেন্ট আখ্যায়িত করে পোস্টে বলা হয়েছে, “তারা আগামীকালকে আমাদের হত্যা করে, প্রথমে শিয়াদের হত্যা করবেন, তারপর কাদিয়ানী, তারপর পীর ও পীরের মুরিদদের, তারপর গণতন্ত্রপন্থী আলেমদের, তারপর পাবলিক প্লেসে হাজির মুসলিম নারীদের, তারপর কোনোভাবে তাদের ‘ইসলামে’র বিরুদ্ধে যায় সবাইকে হত্যা করে দেশটা হিন্দুত্ববাদীদের বিচরণক্ষেত্র বানিয়ে ফেলবেন। এ দেশের না ইনারা, উনারা ভিনদেশের এজেন্ট। খুবই স্পষ্ট ইনাদের মিশন।”
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লিখেছেন, “এদেশকে মুজিববাদী এবং খারেজি তাকফিরি ইসলামপন্থীদের খেলার জায়গা বানাতে দেয়া হবে না। এ মাটি তাদের না! তারা এ মাটির সাথে বেঈমানি করেছেন। ভুলে যাবেন না, জঙ্গিবাদীরাই সাবেক বিএনপি-জামায়াত সরকারকে ব্যর্থ করে দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের দীর্ঘদিনের জন্য ক্ষমতায় বসিয়েছিল। এ দুই ক্যাম্পকে সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করতে হবে।”
পোস্টে বলা হয়, “আমরা মরব, তবু এ দুই ক্যাম্পের লোকদের বাংলাদেশে কোনোভাবে বাঙালি মুসলমান, বৃহদার্থে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিকদের রক্ত হালাল করতে দেব না। মুজিববাদীরা আমাকে অভ্যুত্থানের আগে খুঁজেছে, এখন জঙ্গিবাদী খারেজিরা খুঁজবে। আল্লাহর কাছে আমার জবাবদিহি করতে হবে। আমি কোনও খারেজি তাকফিরি ইসলামপন্থীর ফতোয়াবাজির অধীন না।”
জামায়াত এবং অন্যদের নিয়ে সমালোচনামূলক ভূমিকায় থাকার কথা জানিয়ে মাহফুজ আলম পোস্টে লিখেছেন, “আমি ইসলাম বুঝি, আল্লাহ ও দরদি নবীজির সাথে সম্পর্ক আকারে। এর বাইরে জামায়াত, হেফাজত, খেলাফত ইত্যাকার গোষ্ঠীর ইসলাম নিয়ে আমার আবেগ বা বিদ্বেষ নাই।
“জামায়াত ও অন্যদের ইসলামী রাষ্ট্রকল্প ও ফ্যাসিবাদী প্রবণতা নিয়ে আমরা ক্রিটিকাল আছি, থাকব। যেমন ক্রিটিকাল আছি মুজিববাদী বামপন্থীদের রাষ্ট্রকল্প ও ফ্যাসিবাদী প্রবণতা নিয়ে। আমাদেরকে ডিবেট ও ডায়ালগের মাধ্যমে সবার মধ্যকার ফ্যাসিবাদ দূর করার আগ পর্যন্ত ক্রিটিকাল থাকতেই হবে।”
তিনি আরও লিখেছেন, “এ দেশের লোকায়ত নদীময় ইসলাম, মাজার-দরগা-দায়রায় ঘেরা এ বেঙ্গল বেসিন, মক্তব-মসজিদ-মাদ্রাসার তেলাওয়াত তাহলিলে মুখর গ্রাম বাংলা, জারি-সারি-মুর্শিদি গান আর বাঙালি মুসলমানের লোকাচার অক্ষত থাকবে, কিন্তু জাহেল খারেজিদের জাহেলিয়াত কবর দেয়া হবে।
“আমাদের হত্যার পরিস্থিতি তৈরি করে লাভ নাই। নবীজির ভালোবাসায় আমরা হাসতে হাসতে মরে যাব। আমরা তো মরতেই রওনা দিছি। এ দায়িত্ব, পদবি আর খ্যাতি ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু, আবেহায়াত তো আখেরাতে নবীজির সাথে দিদার!”
গত ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মাহফুজ তার ফেইসবুক পোস্টে আরও বলেন, “আগামীকাল (শনিবার) থেকে নীতি নির্ধারণ ও রাজনৈতিক লড়াইয়ের জায়গায় ঐক্যের জন্য আমাদের আপনাদের প্রস্তাবনা নিয়েই কাজ করব।”