ফের দরপতনের ধারায় ফিরেছে দেশের পুঁজিবাজার। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও কমছে। কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।
টানা দশ কার্যদিবস বাড়ার পর সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার থেকে বাজারে পতন শুরু হয়। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারও পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ নিয়ে টানা চার দিন দরপতন হলো বাজারে।
আর এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ ছোট বিনিয়োগকারীরা। তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, ভয়ের কিছু নেই, আস্তে আস্তে বাজার ঠিক হয়ে যাবে। টানা দশ দিন সূচক বাড়ার পর মূল্যসংশোধন হচ্ছে বাজারে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকেই মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। সে কারণে বাজারে সূচক ও লেনদেন কমছে বলে মনে করছেন তারা।
বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৫ দশমিক ২৮ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩৩৬ দশমিক ২৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আরেক বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৭ দশমিক ৪১ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ হয়েছে ১৮ হাজার ২৯০ দশমিক ৬৮ পয়েন্টে।
ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যসীমা তুলে নেওয়ার পর কয়েকদিন বাজারে পতন হলেও সেই ধাক্কা কাটিয়ে তেজিভাব ফিরেছিল বাজারে। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেন বাড়ায় বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে এসেছিল। দীর্ঘ মন্দায় যারা এতদিন বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারা ফিরে আসতে শুরু করেছিলেন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের পাঁচ দিনই ডিএসইর সূচকে উল্লম্ফন দেখা যায়। তার আগের সপ্তাহের প্রথম দিন (রবিবার) ছাড়া পরের চার দিনই সূচক বেড়েছিল।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার ডিএসইএক্স ৭৩ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বেড়েছিল। সব মিলিয়ে দশ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৭০ পয়েন্টের মতো বেড়েছিল।
সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার সেই সূচক ২২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে। মঙ্গলবার কমে ৩০ দশমিক ১১ পয়েন্ট। বুধবার কমেছে ২৩ দশমিক ২৭ পয়েন্ট। সবশেষ বৃহস্পতিবার কমেছে ৩৫ দশমিক ২৮ পয়েন্ট।
সব মিলিয়ে এই চার দিনে ডিএসইএক্স ১১০ পয়েন্টের বেশি কমেছে।
টানা চার দিনের এই দরপতনে হতাশ ও ক্ষুব্ধ ছোট বিনিয়োগকারী গোবিন্দ শীল। রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা গোবিন্দ মিরপুর-১০ নম্বরের একটি ব্রোকারেজ হাউসে শেয়ার লেনদেন করেন।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “বেশ ভালোই চলছিল। দশ দিনের উত্থানে লোকসান কিছুটা কাটিয়ে উঠেছিলাম। আবার সেই দরপতন, মন্দা। আমাদের বাজারটা বোধ হয় কোনও দিনই ভালো হবে না।”
তবে টানা চার দিনের এই পতনে ‘উদ্বিগ্ন’ নন বাজার বিশ্লেষক ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি মোশতাক আহমেদ সাদেক।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “ফ্লোর পাইস বসিয়ে বাজারটাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। তুলে নেওয়ায় এখন স্বাভাবিক হচ্ছে। টানা দশ দিন বাজার চড়ার পর সূচক কমবে—এটাই স্বাভাবিক। এটা মূল্যসংশোধন (কারেকশন)। পৃথিবীর সব বাজারেই এটা হয়ে থাকে। কয়েক দিন বাড়বে, পরে দু-একদিন কমবে—এটাই বাজারের স্বাভাবিক গতি।”
বাজারের হালচাল
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৫ দশমিক ২৮ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩৩৬ দশমিক ২৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ৮ দশমিক ৮২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৮২ দশমিক ২১ পয়েন্টে। ডিএস-৩০ সূচক ১৫ দশমিক ২৮ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৫৭ দশমিক ১৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয় ৩৯৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৯২টির, কমেছে ২৫০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৪টির দর।
লেনদেনও খানিকটা কমেছে। বুধবার এই বাজারে এক হাজার ১৭৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। বৃহস্পতিবার তা কমে এক হাজার ৭৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকায় নেমে এসেছে।
সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার ডিএসইতে এক হাজার ৮৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। সোমবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল এক হাজার ৬৯৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৬৪৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
আরেক বাজার সিএসইতে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৭ দশমিক ৪১ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ হয়েছে ১৮ হাজার ২৯০ দশমিক ৬৮ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৫৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৭টির, কমেছে ১৫৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির দর।
সিএসইতে বৃহস্পতিবার ২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বুধবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৪৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা।