সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ঢল নামে বাণিজ্য মেলায়। শুক্রবার সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলার অন্তত এক লাখ ৫০ হাজার টিকেট বিক্রি হয়েছে বলে জানান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কর্মকর্তারা।
ঢাকার পূর্বাচল নিউ টাউনে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না এক্সিবিশন সেন্টারে এবারে আয়োজিত ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় সাড়াও মিলছে আশানুরূপ। ইপিবির মহাপরিচালক (যুগ্মসচিব) মাহবুবুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মেলা শেষ হয়ে আসছে। চাকরিজীবীদের অনেকেই সাপ্তাহিক ছুটির অপেক্ষায় ছিলেন। এ কারণে শুক্রবার মেলায় অনেক ভীড় দেখা গেছে।”
মাহবুবুর রহমান বলেন, “গত শুক্রবার এক লাখ ২০ হাজারের মতো টিকেট বিক্রি হয়েছিল। এই শুক্রবারে যে সংখ্যাটা দেড় লাখ ছাড়িয়ে যাবে, তা আমাদের প্রত্যাশাই ছিল।”
শীতের প্রকোপ কমে আসায় অনেকেই মেলায় এসেছেন ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করতে । খুঁজে খুঁজে কেনার আনন্দে তারা ভুলে যাচ্ছেন ক্লান্তি।
মেলায় আগত জসিম উদ্দিন কাজ করেন একটি বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেনাকাটার ফাঁকে সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “মেলায় আসা-যাওয়ার ঝক্কি আছে। শাটল বাসে ওঠার জন্য সারি ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ঠেলাঠেলি ছাড়া বাসে ওঠা যায় না। বাস থেকে নেমে আরও ৫ মিনিটের পথ হাঁটতে হয়। ভীড়ের মধ্যে ৫ মিনিটের পথ যেতে লাগে ১০ মিনিটেরও বেশি। এরপর টিকেট কেটে মেলায় ঢুকতেই মনে হয় যেন আমি চ্যাম্পিয়ন। আর স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তখন ক্লান্তির কথা আর মনে থাকে না।”
কেনাকাটা না করলেও অনেকে মেলায় আসেন শুধুই ঘুরতে। কিন্তু খাওয়া-দাওয়া কিছু না কিছু করেন। এমনটাই বলছিলেন ঢাকার একটি বেসরকারি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের রেস্টুরেন্টের মালিক মো. আতাউর। তিনি বলেন, “বাগেরহাট থেকে ভাই আর ভাতিজা এসেছে ঢাকায় বেড়াতে। তাদের শখ বাণিজ্য মেলা দেখবে। শুক্রবার ক্যাম্পাস বন্ধ, রেস্টুরেন্টও বন্ধ। তাই তাদের নিয়ে মেলায় এসেছিলাম। অনেক ভীড়। কোনওরকমে সব ঘুরে দেখে ফেরত যাচ্ছি।”
প্রতিবছর ১ জানুয়ারি বাণিজ্য মেলা শুরু হলেও এবার জাতীয় নির্বাচনের কারণে তা শুরু হয় ২১ জানুয়ারি। প্রথম দিকে ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। মেলায় পোশাক, জুতা, গৃহস্থালী সামগ্রী, খাবার, শিশুদের খেলনার দোকানে ভীড় বেশি ছিল ক্রেতাদের।
ক্রেতারা বলছেন, এক মাসের এই মেলা উপলক্ষে অনেক প্রতিষ্ঠানই বিশেষ ছাড় ঘোষণা করেছে। ছাড়ের দামে পণ্য কিনতেও বাণিজ্য মেলায় আসেন অনেকে।
বিদেশি বাহারি পণ্যের ক্রেতাও রয়েছেন বেশ। এর মধ্যে তুরস্কের প্যাভিলিয়নে ছিল উপচে পড়া ভীড়। ক্রেতা সমাগমের দিক থেকে এগিয়ে ছিল আইসক্রিমের স্টলগুলো। শীত একটু কমে আসায় ইগলু, পোলার বা সেভয়ের আইসক্রিম স্টলে ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
ইগলুর প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোমেন লিমিটেডের টেরিটরি সেলস ম্যানেজার মো. আল-আমিন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “প্রথম দিকে বিক্রি কিছুটা কম ছিল। তবে এই শুক্রবার ক্রেতাদের উপস্থিতি ভালো।”
মেলায় নগদ টাকার সংকট মেটাতে সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অস্থায়ী এটিএম বুথ বসানো হয়েছে। শুক্রবার ক্রেতা বেশি হওয়ায় এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার জন্য কার্ডধারীদের সারি ধরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবি আয়োজিত মেলায় হোমটেক্স, প্রাণ-আরএফএল, নাবিস্কো, বেঙ্গলের মতো দেশীয় বড় বড় ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি ভারত, থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যও প্রদর্শিত হচ্ছে।
মেলায় হোমটেক্সের প্যাভিলিয়নে বিছানার চাদরে ১০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যাচ্ছে। বেঙ্গলের প্লাস্টিকে পাঁচ শতাংশ ছাড়ের পাশাপাশি কিছু পণ্যে একটা কিনলে আরেকটি ফ্রিও পাওয়া যাচ্ছে। অলটাইমের ব্রেড ও কুকিজসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্যে ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
মেলায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়নে পাটজাত পণ্যের প্রদর্শনী করছে বেশ কয়েকটি হস্তশিল্প প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের স্টলে রয়েছে পাটের তৈরি ব্যাগ, জুতা, বিভিন্ন ধরনের ঘর সাজানোর সামগ্রী, কার্পেট, লন্ড্রিবক্স, দোলনাসহ নানা ধরনের কারুপণ্য।
মেলায় বড় ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি কমদামি বিভিন্ন পণ্যের কিছু স্টলও চোখে পড়ে। প্রাঙ্গণের বাইরেও রয়েছে হকারদের আনাগোনা। বিভিন্ন ধরনের খেলনা, বেলুন, আচার, পিঠাসহ নানাকিছু বিক্রি হচ্ছে মেলার প্রবেশপথেই।
এবারের মেলায় স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৩৫১টি। মেলায় কেনাকাটার পাশাপাশি রয়েছে বিনোদনেরও নানা আয়োজন। শিশুদের জন্য রয়েছে রাইড ও খেলার ব্যবস্থা।
পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির আদলে করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নও।
২৮তম বাণিজ্য মেলায় বড়দের প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা, ১২ বছরের নিচে হলে প্রবেশমূল্য ২৫ টাকা। ঢাকার কয়েকটি পয়েন্ট থেকে বিআরটিসি শাটল বাস সার্ভিসের মাধ্যমে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মেলায় যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করেছে।