Beta
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

বাবার লাশের জন্য ১৪ ঘণ্টা মর্গের সামনে

dhaka-medical-morgue-290724-01
[publishpress_authors_box]

ঢাকা মেডিকেল কলেজের লাশকাটা ঘরের ভেতরে বাবার লাশ আর বাইরে একা বসে শোকগ্রস্ত ছেলে। দুজনের মাঝে ব্যবধান শুধু একটি দেয়ালের।

আগের দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রাণ হারানো বাবা বাবুল হাওলাদারের মৃতদেহ তখন লাশকাটা ঘরে। কিন্তু নির্ধারিত চিকিৎসক না আসায় ময়নাতদন্ত শুরু হয়নি। তাই লাশকাটা ঘরে থাকা বাবার লাশ দ্রুত বুঝে পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন মো. পারভেজ হাওলাদার।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঘিরে সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ বাবা মৃত্যুর সঙ্গে ১০ দিন লড়াই করে হার মেনেছেন। লড়াই এখনও শেষ হয়নি ছেলের।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে কথা হয় পারভেজ হাওলাদারের সঙ্গে।

প্রাইভেট কার চালক পারভেজ জানান, তার বাবা বাবুল হাওলাদারের বয়স ৬০ বছরের মতো। তিনি ছিলেন রং মিস্ত্রি। রামপুরার উলন রোডে থাকেন তারা। দুই ছেলে আর এক মেয়ে নিয়েই ছিল বাবুল হাওলাদার আর মনোয়ারা বেগমের সংসার।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত ১৯ জুলাই ছিল শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সহিংসতা হয়।

পারভেজ জানান, সেদিন জুম্মার নামাজের পরপরই এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। তার বাবা এলাকার মসজিদেই নামাজ পড়েন। বের হওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই কোথা থেকে যেন গুলি এসে লাগে তার গলায়।

পারভেজ বলেন, “গুলি লাগার পর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আব্বা। প্রথমে তাকে আইসিইউয়ে, পরে লাইফ সাপোর্ট নেওয়া হয়। ২৮ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে মারা যান।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “বাবার লাশ এসেছে ঢাকা মেডিকেল থেকেই, সব কাগজপত্র সঙ্গে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখান থেকে এখন হয়রানি করা হচ্ছে। সবই টাকা-পয়সার খেলা। যে যত টাকা দিতে পারবে, তত তাড়াতাড়ি লাশের ময়নাতদন্ত হয়ে সব হয়ে যাবে। টাকা না দিলে লাশ ফেলে রাখা হয়।”

‘একজন রঙ মিস্ত্রী কী আন্দোলন করবে’ এমন প্রশ্ন রেখে সকাল সন্ধ্যাকে পারভেজ বলেন, “সেদিন আমিও গাড়ি নিয়ে বের হইছিলাম। নামাজের আগে আগে এলাকায় আসি। এলাকার দোকানে বসে মাত্র চায়ে চুমুক দিছি, তখনই এক বড় ভাই ফোন দিয়া বলে, তোর আব্বুর গায়ে গুলি লাগছে।

“সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে গিয়ে দেখি রক্ত। তারপর আব্বাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করি। কাল রাতে হাসপাতাল থেকে ফোন দিয়ে তাড়াতাড়ি আসতে বলে। আসার পর ডাক্তার বলেন, তোমার আব্বু আর নাই।”

পারভেজ বলেন, “কিন্তু তার তো কোনও দোষ ছিল না। আমরা গরীব, বাপ-ছেলে মিলে সংসার চালাতাম। তাও আমাদের ঘরে শান্তি ছিল। এখন আমার মাকে আমি কী বলব, সেটাই খুঁজে পাচ্ছি না।”

এক সময় বাবুল হাওলাদারের ময়নাতদন্ত করার জন্য নির্ধারিত চিকিৎসক আসেন। এসময় এই প্রতিবেদককে পারভেজ অনুরোধ করেন, কাউকে বলে তার বাবার মরদেহের ময়নাতদন্ত একটু আগেআগে করে দিতে।

আক্ষেপের সুরে পারভেজ আরও বলেন, “হাসপাতাল থেকে জীবিত আব্বাকে নিতে পারলাম না। অন্তত মৃত আব্বাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি আম্মার সামনে যেতে চাই। আম্মা আশা করে আছেন আব্বাকে দেখার জন্য।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত