Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সকালে থমথমে ঢাকায় মোড়ে মোড়ে তল্লাশি

কারফিউর মধ্যে সোমবার সকালে ঢাকার মহাখালীর সড়ক।
কারফিউর মধ্যে সোমবার সকালে ঢাকার মহাখালীর সড়ক।
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

রক্তক্ষয়ী সংঘাতের চিহ্ন নিয়ে সকাল হয়েছে ঢাকায়। ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে, তার মধ্যেও কড়া পাহারায় রয়েছে সেনা ও পুলিশ, বন্ধ করে রেখেছে শাহবাগ মোড়সহ বিভিন্ন পথ। সড়ক সড়কে গাড়ির সংখ্যা নেই বললেই চলে। যারা নেমেছে, তাদের পুলিশের তল্লাশির মুখে পড়তে হচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি সোমবার। সারাদেশ থেকে মানুষকে রাজধানীতে আসার আহ্বান রয়েছে তাদের। তাদের শাহবাগে জড়ো হওয়ার কথা। সরকারের পদত্যাগ দাবিতে একদিন আগেই অসহযোগ কর্মসূচি শুরু করে তারা।

অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিনেই ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের। তাতে প্রায় একশজন নিহত হয়। এই আন্দোলনের মধ্যে একদিনে এত মৃত্যুর ঘটনা আগে ঘটেনি।

এই আন্দোলন কঠোরভাবে দমনের সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে নিয়েছে সরকার। তার ছাপ দেখা গেছে সোমবার সকালে ঢাকা ঘুরে।

গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সেনা-পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। শাহবাগের আগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়েই অবস্থান নিয়ে আছে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা। রিকশারোহী কিংবা পথচারী কাউকে শাহবাগের দিকে যেতে দিচ্ছে না।

শাহবাগ থানার সামনেও রয়েছে পুলিশ, সেনাবাহিনীর একটি সাঁজোয়া যানও রয়েছে সেখানে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এক যুবক শাহবাগের দিকে এলে তাকে পেটাতে দেখা যায় পুলিশকে।

মৎস্য ভবন এলাকায়ও একটি সাঁজোয়া যান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ। সেখানে দাড়ি-টুপি পরা কাউকে দেখলেই থামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নীরব হয়ে আছে। তবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি দলকে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে মেডিকেল শিক্ষার্থীও ছিল। তাদের কারও কারও হাতে লাঠি ছিল, যা নিরাপত্তার জন্য বলে তাদের দাবি।

বিজয় সরণিতে বিপুল সেনা-পুলিশের অবস্থান রয়েছে। ফার্মগেইট থেকে বাংলামোটরের সড়কে জমে আছে ইটের টুকরোগুলো। রবিবার সেখানে ভয়াবহ সংঘাত হয়েছিল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

সড়কে পড়ে আছে পোড়া একটি গাড়ি, আগের দিন জ্বালিয়ে দেওয়া এই গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে খুলে নিচ্ছিল ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের একটি দল। ফার্মগেইট থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত সড়কের পাশের দোকানগুলোর সামান্য সংখ্যকেরই সাইনবোর্ড অক্ষত আছে।

মহাখালীতে রেলগেইটে অবস্থান নিয়ে আছে ৩০ জনের মতো সেনা সদস্য। সেখানে পথ আটকে দেওয়া হয়েছে। পথচারীদেরও যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে মহাখালীর পর উভয় দিকেই পথ খোলা রয়েছে।

মহাখালী থেকে গুলশান-১ নম্বর হয়ে বাড্ডা লিংক রোড পর্যন্ত কিছু রিকশা, মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। এই সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়নি।

মেরুল বাড্ডায় পুলিশের উপস্থিতিও ছিল। তাদেরকে সড়ক থেকে লোকজনকে সরিয়ে দিতে দেখা গেছে।

রামপুরা থেকে হাতিরঝিলে ঢোকার মুখে সেনাবাহিনীর একটি চেকপোস্ট বসিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রামপুরা থেকে কেউ হাতিরঝিলে ঢুকতে পারছে না। এছাড়া রামপুরা সেতুর ওপরও সেনা সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।

বনশ্রী থেকে রামপুরা প্রধান সড়কে ওঠার মুখে সেনাবাহিনীর একটি পোস্ট বসানো হয়েছে। সেখান দিয়ে কাউকেই যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া রামপুরা থেকে বাড্ডামুখী সড়কেও রয়েছে সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট।

বনশ্রীর ফরাজী হাসপাতালে কাছে পুলিশের চেকপোস্ট রয়েছে। খুব জরুরি না হলে কোনও যানবাহন চেকপোস্ট পার হতে দিচ্ছে না।

বনশ্রীর এলাকার রাস্তা ফাঁকা। হাতে গোনা দু-একটি যানবাহন যা চলছে, সেগুলোও জরুরি সেবায় নিয়োজিত। কিছু রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে সে অনুপাতে যাত্রীর দেখা মেলেনি।

গুলিস্থান এলাকায় দোকান-বিপণি বিতান সবই বন্ধ। সচিবালয় এলাকা সকালে ছিল জনমানবশূন্য। তবে পল্টন থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত পুলিশ দেখা গেছে শুধু বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে।

বঙ্গভবনের দক্ষিণ পাশের গুলিস্থান থেকে টিকাটুলির দিকে যাওয়ার পথ বন্ধ করে রেখেছে সেনাবাহিনী। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে ওঠার পথও বন্ধ।

গুলিস্থানের পূর্ব দিকে জয়কালী মন্দিরের সামনে পুলিশে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে। দাড়ি-টুপি পরা কাউকে দেখলেই থামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনেও পুলিশ সদস্যরা পথচারী ও রিকশারোহীদের তল্লাশি করছিল।

ঢাকার অন্য সড়কেও অ্যাম্বুলেন্স ও হাতেগোনা ব্যক্তিগত কিছু গাড়ি দেখা গেছে। রিকশা-অটোরিকশা চলছে, তবে যাত্রীর অপেক্ষায় বসে আছে সেগুলো।

রবিবারের সংঘাতের সরকার তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। একইসঙ্গে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউও জারি করেছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত