ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে বাংলাদেশের অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে সংঘোতের জন্য প্রস্তুত থাকার জন্য বলেছেন, যা ‘উস্কানিমূলক’ মন্তব্য বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।
রাজনাথের এই মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সংঘাতের হুমকি দেখতে পাচ্ছেন না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাজনাথ সিং সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “আমি উদ্বিগ্ন হওয়ার চেয়ে বেশি বিস্মিত। আমি বুঝতে পারছি না, কেন তিনি (সিং) এমন মন্তব্য করেছেন… আমি এর পিছনে কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।”
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের মতো বৈশ্বিক বিষয়গুলো উল্লেখ করে রাজনাথ সম্প্রতি ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন।
তিনি গত বৃহস্পতিবার উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রথম যৌথ কমান্ডার সম্মেলনের সময় মন্তব্যটি করেন। এ সময় তিনি ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের সেই বৈশ্বিক ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করার পরামর্শ দেন।
উপদেষ্টা বলেন, “তার (রাজনাথ) বক্তব্য নিজ দেশের জনগণের জন্য ছিল কি না, তা আমাদের বিবেচনা করা দরকার। কোনোভাবেই আমি বিশ্বাস করি না যে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা আছে।”
রাজনাথের বক্তব্য বাংলাদেশের জন্য হুমকি কি না—জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন এ ব্যাপারে অনুমান করা থেকে বিরত থাকেন।
তিনি বলেন, “তবে কী ঘটছে ও কেন ঘটছে, তা বোঝার জন্য আমরা অবশ্যই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব।”
রাজনাথের মন্তব্য সম্পর্কে তৌহিদ বলেন, “তিনি (রাজনাথ) তার নিজের দেশের কনজাম্পশনের জন্য বলেছেন কি না, সেটা আমাদের বুঝতে হবে। আর তিনি যেভাবে বলেছেন, তা অনেকটা বিটিং অ্যারাউন্ড দ্য বুশের (কথা এড়ানো) মতো। ইউক্রেনের যুদ্ধের ব্যাপারে ভারতের সামরিক প্রস্তুতির কোনও কারণ দেখছি না। হামাসের ব্যাপারেও এটি অসংলগ্ন বলে মনে হচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি না যে, এই বিষয়গুলোকে বাংলাদেশের সাথে কীভাবে তুলনা করা হয়।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্ভাব্য রাজনৈতিক আশ্রয় প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, যে কোনও দেশেরই রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার অধিকার রয়েছে।
তিনি বলেন, “সে রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আমরা পর্যবেক্ষণ করব।”
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে : ড. ইউনূস
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক দরকার, তবে সেই সম্পর্ক হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রবিবার রাজধানীর তেজগাঁও অবস্থিত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ছাত্র সংগঠক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষাথীদের এক প্রশ্নের উত্তরে ভারত-বাংলদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা দক্ষিণ এশীয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে সার্ক পুনরুজ্জীবনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কাজ করতে আগ্রহী।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। গত ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়ত্ব নেয়। আজ রবিবার সরকারের এক মাসপূর্তি উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ১৫০ জন ছাত্র প্রতিনিধি সরকার প্রধানের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
তথ্যসূত্র : বাসস