Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

অনেকের অফিস টাইম গেল রাস্তায়

বিমানবন্দর সড়কে ছিল তীব্র যানজট। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বিমানবন্দর সড়কে ছিল তীব্র যানজট। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

বেসরকারি চাকরিজীবী যুবায়েদ আল মাসুম। পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলায়। অন্যান্য দিন বাসা থেকে কর্মস্থল কল্যাণপুরে পৌঁছতে তার সময় লাগে ৩০ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ৪০ মিনিট। কিন্তু বুধবার দেড় ঘণ্টায়ও মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকাই পার হতে পারেননি তিনি। শুধু মাসুম নন, তীব্র যানজটের কারণে রাজধানীর আরও অনেককেই বুধবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থাকতে হয়েছে।

কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা কাটিয়ে সাধারণ ছুটি শেষ হলেও অফিস সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। সাপ্তাহিক ও সাধারণ ছুটি মিলিয়ে পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর বুধবার সব অফিস খুলেছে। তবে কর্ম সময় ছিল বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা। স্বাভাবিক সময়ে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সরকারি অফিস চলে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কারফিউ চলায় অফিস সময় কমিয়ে আনা হয়েছে।

পাঁচ দিন পর বুধবার অফিস খোলায় সকাল থেকেই সড়কে ছিল যানবাহন ও মানুষের ভিড়। কিন্তু অনেক স্থানেই ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন চলাচলের কারণে তীব্র যানজট তৈরি হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু স্থানে ট্রাফিক পুলিশকে সক্রিয় হতে দেখা যায়। এতে যানজট ধীরে ধীরে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় যানজটে বসেই কথা বলেন যুবায়েদ আল মাসুম।

মোটরসাইকেলে বসে বিরক্তি নিয়ে সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলাম সকাল ১০টায়। দেড় ঘণ্টায়ও মোহাম্মদপুর পার হতে পারলাম না। অথচ অফিস শুরুর সময় ছিল ১১টায়, চলবে ৩টা পর্যন্ত। এখন মনে হচ্ছে, অফিসে যেতে যেতেই ছুটির সময় হয়ে যাবে।”

‘এখন সব রাস্তা বন্ধ হইয়া সবাই রাস্তায় বসে আছে’

মাসুমের পাশেই অটোরিকশা নিয়ে যানজটে আটকা পড়েছিলেন চালক মো. লিটন।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “গত কয়েকদিন গণ্ডগোলের কারণে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হতে পারিনি। আজ অফিস খোলা দেখে সাহস নিয়ে বের হয়েছিলাম। ভাবছিলাম কিছু ভাড়া মারতে পারব। কিন্তু জ্যামের কারণে সেটা হইলো না।

“একটা ভাড়া তুলে রাস্তায় বসে আছি। মোড়ে কোনও ট্রাফিক পুলিশ নাই। যে যেভাবে পারছে যাওয়ার চেষ্টা করতেছিল। এখন সব রাস্তা বন্ধ হইয়া সবাই রাস্তায় বসে আছে।”

কারফিউ থাকায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়কের মোড়ে বুধবারও পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর টহল ছিল। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় বুধবারের টহল ছিল অনেকটা ঢিলেঢালা।

মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, গাবতলী, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, তেজগাঁও, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে কর্মজীবী মানুষের চাপ থাকলেও গণপরিবহন ছিল খুবই কম। ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেল চলাচল ছিল অনেক বেশি।

‘হেঁটেই শ্যামলী থেকে মহাখালী’

রাজধানীতে গণপরিবহন কম থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অনেক মানুষকে। অনেককেই বাস না পেয়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয়। তাদের একজন সানজিদুল ইসলাম সাফা। শ্যামলীতে বাস না পেয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে মহাখালী এসেছিলেন তিনি।

সানজিদুল ইসলাম সাফা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ব্যক্তিগত জরুরি কাজে শ্যামলী থেকে মহাখালী যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ঘণ্টা খানেক চেষ্টা করেও কোনও বাসে উঠতে পারিনি। সেই সুযোগে অটোরিকশাগুলো আজ গলাকাটা ভাড়া দাবি করছে।

“সেজন্য কোনও উপায় না পেয়ে হেঁটেই মহাখালী চলে এসেছি। এখন চিন্তায় আছি, কাজ শেষে ফিরব কী করে?

দূরপাল্লার বাসে নেই যাত্রীদের চাপ

গণপরিবহনের মতো দূরপাল্লার বাসও বুধবার খুব একটা চলেনি বলে জানালেন পরিবহন শ্রমিকরা। ঢাকা থেকে যেসব দূরপাল্লার বাস ছেড়েছে সেগুলোয় যাত্রীও ছিল অনেক কম। 

কল্যাণপুর, গাবতলী ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীর চাপ না থাকায় বাসের কাউন্টারগুলোতে অলস সময় পার করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। কেউ মোবাইলে গেমস খেলছেন, কেউ কেউ আড্ডা দিয়ে সময় পার করছেন।

তাদের একজন গাবতলীর ইকোনো পরিবহনের কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মো. খোকন। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আজ রাস্তায় কোনও গণ্ডগোল নাই। কিন্তু যাত্রীর অভাবে বাস ছাড়া হচ্ছে না।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত