Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

তেহরানে হামলার খবর কি যুক্তরাষ্ট্র আগেই জানত

irans
[publishpress_authors_box]

ইসরায়েল দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান নিয়ে ইরানে হামলা চালায়। এতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারসহ বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে তেহরানও ইসরায়েলে ড্রোন হামলা চালায়।

তেহরানে ইসরায়েলের হামলার ঘটনা এমন এক সময়ে হলো, যখন পরমাণু ইস্যু নিয়ে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা চলছিল। কূটনৈতিক চ্যানেলে আলোচনার চলার মধ্যেই হামলাটি করা হয়েছে। আর এজন্যই এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, সেবিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, ইসরায়েলের একতরফা হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। তবে ইসরায়েল এই হামলাকে তাদের আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বলে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউজে বার্ষিক পিকনিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় তেহরান থেকে ইসরায়েলি হামলার খবর আসে।

এক বিবৃতিতে মার্কো রুবিও বলেন, “ইরানে হামলার সঙ্গে আমরা জড়িত নই এবং আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা আমাদের বাহিনীকে রক্ষা করা। ইসরায়েল আমাদের জানিয়েছে, তারা মনে করে এই পদক্ষেপ তাদের আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল।”

ইসরায়েল হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ঠিক কতটা তথ্য দিয়েছে বা কত আগে দিয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র যে খবরটা আগেই পেয়েছিল, তা বোঝা যায় তাদের নেওয়া আগাম পদক্ষেপে।

যুক্তরাষ্ট্র ইরাক থেকে বুধবার তাদের কূটনীতিকদের সরিয়ে নিয়েছিল। ইরাক ইরানের পশ্চিম পাশের দেশ। একই সঙ্গে, মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পরিবারের সদস্যদের স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী বর্তমানে কাতার ও বাহরাইনে অবস্থিত ঘাঁটিগুলোতে বড় একটি যুদ্ধবিমান বহর, নৌযান ও হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছে। এই ঘাঁটিগুলো ইরান থেকে মাত্র ১৫০ মাইল দূরবর্তী উপসাগরীয় এলাকায় অবস্থিত।

ইসরায়েলের তেহরানে হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিজের গা বাঁচানোর চেষ্টা করলেও তেহরান থেকে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টারের গবেষক আলি আকবর দারেইনি বলেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলাটি ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সামিল। এই হামলা সম্ভবত হোয়াইট হাউসের অনুমোদন নিয়েই হয়েছে।

তিনি বলেন, “এটি একটি যুদ্ধ ঘোষণা। এর ভয়াবহ পরিণতি হবে… ইরান কোনোভাবেই এই আগ্রাসনের জবাব না দিয়ে থাকতে পারে না।

“গত কয়েক ঘণ্টায় কী ঘটেছে, একটু নজর দিন। যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূতাবাসের কর্মীদের ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে সরিয়ে নিয়েছে… প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইরানের ওপর সম্ভাব্য ইসরায়েলি হামলার কথা বলেছিলেন। এতে কী বোঝা যায়?”

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আগেই এই হামলার বিষয়ে জানত। সম্ভবত এই হামলা তাদের সমন্বয়েই হয়েছে। আমরা এই হামলাকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখলে ভুল করবো। এটি একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক পরিকল্পনার অংশ, যা মধ্যপ্রাচ্যকে আরও একবার উত্তেজনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যার ফলাফল অনিশ্চিত।”

হামলার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যে ভিডিও ভাষণ দিয়েছেন, সেখানে তিনি দাবি করেছেন, ইরান শুধু যে ইসরায়েলের জন্য হুমকি , তা নয়, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও হুমকি।

ভাষণে তিনি ‘লং লিভ ইসরায়েল’ বলার পাশাপাশি ‘লং লিভ আমেরিকা’ বলে স্লোগানও দেন।

গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির দুই বিপরীত মেরুর নেতারাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সতর্ক করেছেন যেন তিনি ইসরায়েলের কারণে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে না জড়িয়ে পড়েন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন মিত্র, যেমন প্রভাবশালী রক্ষণশীল ভাষ্যকার টাকার কার্লসন ও কংগ্রেস সদস্য মারজোরি টেলর গ্রিন যুক্তি দিয়েছেন যে তেহরানের সঙ্গে সংঘাত ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির পরিপন্থী হবে।

মারজোরি টেলর গ্রিন সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “আমেরিকানরা ইরানে বোমা ফেলতে চায় না। কারণ ইসরায়েলের ধর্মনিরপেক্ষ সরকার বলছে ইরান যেকোনও মুহূর্তে পারমাণবিক বোমা বানিয়ে ফেলবে। কিন্তু আমাদের গত ২০ বছর ধরে এ কথাই বলা হচ্ছে।”

ট্রাম্প যখন তেহরানের সঙ্গে কূটনীতিতে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছিলেন, তখনই ইসরায়েল ইরানের ওপর প্রথম দফার হামলা চালায়। এই হামলা ট্রাম্পের বক্তব্যের মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যেই হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন এখনও শক্তিশালী। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই সমর্থনে ফাটল দেখা যাচ্ছে—সাধারণ জনগণের মধ্যেও, বিশেষ করে প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট রাজনীতিকদের মধ্যে।

তবে ইরানের সঙ্গে সংঘাত ডানপন্থীদের মধ্যে এ ধারণা আরও শক্ত করবে যে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সবসময় এক নয়। এতে করে তথাকথিত “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতিতে বিশ্বাসীরা ইসরায়েলের সঙ্গে মিত্রতার বিষয়টিই প্রশ্নবিদ্ধ করতে শুরু করতে পারেন।

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলে ইসরায়েলকে নিরঙ্কুশ সমর্থনের প্রবণতা কমতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।

তেহরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলোর ওপর অনেকদিন ধরেই নজর ছিল ইসরায়েলের। সম্প্রতি এনিয়ে একাধিকবার কথা বলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বিশেষ করে গত অক্টোবরের সাংঘর্ষিক অবস্থার পর তিনি ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলার হুমকিও দিয়েছিলেন।

এসব হুমকি স্বত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চেয়েছিলেন তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে একটি চুক্তি করতে। এজন্য তিনি নেতানিয়াহুর কাছে সময়ও চেয়েছিলেন। এমনকি ইসরায়েলে বিশেষ দূতও পাঠিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ইরানের ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলা সব সমীকরণ পাল্টে দিচ্ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত