Beta
বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ঢাকা-দিল্লি টানাপড়েনের মধ্যে আক্রান্ত দূতালয়

ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনের সামনে সোমবার হিন্দুদের একটি সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ হয়। পরে ডেপুটি কমিশনে হামলাও হয়।
ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনের সামনে সোমবার হিন্দুদের একটি সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ হয়। পরে ডেপুটি কমিশনে হামলাও হয়।
[publishpress_authors_box]

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ঢাকার সঙ্গে নয়া দিল্লির সম্পর্কে চলছে টানাপড়েন; হিন্দু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর তা ওঠে উত্তুঙ্গে। দুই দেশের মানুষের মধ্যে বাক্যবাণ তো চলছিলই, তা এবার গড়াল বাংলাদেশ মিশন আক্রমণে।

সোমবার বাংলাদেশের চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলাম ভারতের সহকারী হাই কমিশন ঘেরাওয়ে কর্মসূচি দিয়ে তা থেকে পিছু হটলেও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনে গিয়ে হামলা চালিয়েছে ‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি’। তারা মিশনের কিছু সাইনবোর্ড ভাংচুরের পাশাপাশি বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এই ঘটনার বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ভারত সরকার দুঃখ প্রকাশ করে বাংলাদেশের সব মিশনে নিরাপত্তা জোরদারের কথা জানিয়েছে।

বাংলাদেশের যে পাশে ত্রিপুরা, তার বিপরীত পাশের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিনই বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়কে রক্ষায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষী মোতায়েনের আওয়াজ তুলে এই চলমান বিতর্ক আরও উসকে দেন।

বাংলাদেশ সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে তার বক্তব্যের নিন্দা জানানো হয়। আগরতলায় হামলার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

আগরতলায় হামলার প্রতিবাদে সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ।

ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে গত ৫ আগস্ট ভরতে গিয়ে আশ্রয় নেন বাংলাদেশের গত দেড় দশকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার শাসনকালে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সর্বোচ্চ মাত্রায় ছিল বলে দুই পক্ষের তরফেই বলা হতো।

তবে এখন যে সম্পর্ক আগের মতো নেই, তা এক দিন আগেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন স্বীকার করে নেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ভারত সরকার। তারপর বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করে আবার বাংলাদেশে চলতে থাকে প্রচার।

প্রতিবেশী দুই দেশের শীতল সম্পর্কের মধ্যে গত ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর নয়া দিল্লির পক্ষ থেকে আবার প্রতিবাদ আসে।

এরপর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য দিয়ে মাঠে নামে। কলকাতায় বিজেপির রাজ্য বিধানসভার সদস্যরাও বিক্ষোভে নামে।

তার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে ইসলামী সংগঠনগুলো ভারতের বিরুদ্ধে সরব হয়। তার মধ্যে ভারতের জাতীয় পতাকা পদদলনের ঘটনা ঘটে ঢাকায়। তার প্রতিক্রিয়ায় আবার কলকাতায় বাংলাদেশের পতাকা পোড়ানো হয়।

আগস্ট থেকেই বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে সরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমান্ত অবরোধের হুমকিও এসেছে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতাদের কাছ থেকে। শুধু তাই নয়, এর মধ্যে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা না দেওয়ার ঘোষণাও দিচ্ছে ভারতের বিভিন্ন চিকিৎসক।

এই হম্বিতম্বির মধ্যে আগরথায় বাংলাদেশ দূতাবাস আক্রান্ত হলো।

আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে সমাবেশ আয়োজনকারী চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারে ভারত সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছিল।

তার মধ্যেই সোমবার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি দেয় হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামে একটি সংগঠন। ভারতের সংবাদমাধ্যমে এটিকে উগ্রবাদী সংগঠন হিসাবেই পরিচয় দেওয়া হয়েছে।

বিবিসি বাংলা জানায়, সোমবার দুপুরের দিকে বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশ মিশনের সামনে যায়। ওই ঘটনার সময়কার কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলার পর তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, মিশনের সামনে সমাবেশের পর সংগঠনটির ছয়জনের একটি প্রতিনিধি দল হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে গিয়েছিল স্মারকলিপি জমা দিতে। এসময় বাইরে থাকা কিছু যুবক হঠাৎ কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিড়ে ফেলে। পরে হাইকমিশন কার্যালয়ের কিছু সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে ও আগুন লাগিয়ে দেয় তারা।

এই বিষয়ে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির কার্যকরী সদস্য বি কে রয় বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তারা ভেতরে থাকার সময় বাইরে কী ঘটনা ঘটেছে, তা তারা দেখেননি।

ঘটনার খবর পেয়ে ত্রিপুরা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান, তারা হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাও বলেন।

বিক্ষোভের সময় আগরতলায় বাংলাদশ মিশনের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনাও ঘটে।

ভারতের নর্থ ইস্ট টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন। একজন নারী বিক্ষোভকারী বলেন, “হিন্দুরা বাংলাদেশে ক্রমাগতভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। চিন্ময় প্রভুকে কোনও কারণ ছাড়াই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”

“শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে এই অবস্থা। সেখানে পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে,” বলছিলেন ওই নারী।

নর্থ ইস্ট টুডে জানায়, বাংলাদেশে হিন্দু নিপীড়নের প্রতিবাদ জানাতে বিক্ষোভকারীরা আগরতলার ধর্মনগর দীঘির পাড়ে নেতাজির প্রতিমুর্তির সামনে জড়ো হয়েছিল।

আসামের সংবাদপত্র দ্য সেনটিনেল জানায়, বিক্ষোভে বিজেপির ত্রিপুরা রাজ্যের সহসভাপতি সুবল ভৌমিকও যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরও সমালোচনা করেন।

একদিন আগে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাও বাংলাদেশে হিন্দুদের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন বলে ভারতের সংবাদ সংস্থা এএনআই জানায়।

তিনি বলেছিলেন, “বাংলাদেশে পরিস্থিতি ভালো নয়। সেখানে সরকার কী করছে? আমরা যে খবর পাচ্ছি, তাতে দেখছি সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন চলছে।”

এদিকে ত্রিপুরার সংবাদপত্র জানায়, হিন্দুদের ওপর নির্যাতন ও চিন্ময় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গত ৩০ নভেম্বর আগরতলার একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করে একদল। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশি রোগীদের আর চিকিৎসা দেওয়া হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।

এছাড়াও সোশাল মিডিয়ায় ভারতের বিভিন্ন চিকিৎসক বাংলাদেশি রোগীদের আর চিকিৎসা না দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে।

বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের ব্যানারে সোমবার আসামের কোচবিহার, চ্যাংড়াবান্ধা, যশোরের বেনাপোল বন্দরের ওপারেও বিক্ষোভ হয়েছে। কোচবিহারে ড. ইউনূসের কুশপুতুলও পোড়ানো হয়।

পেট্রাপোল সীমান্তে বিক্ষোভ সমাবেশ হয় পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে। সেই সমাবেশ থেকে সীমান্ত অবরোধের হুমকিও দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদ, নয়া দিল্লির দুঃখ প্রকাশ

আগরতলায় সহকারী হাই কমিশন আক্রান্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কড়া ভাষায় একটি বিবৃতি আসে। সেখানে বলা হয়, যে কোনও দেশে ভিনদেশি দূতাবাস রক্ষার দায়িত্ব ওই দেশের সরকারের, যা ভারত সরকার পালনে ব্যর্থ হয়েছে।

হামলার ধরন বর্ণনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, হামলাকারীদের দূতাবাসে ঢোকার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। কারণ সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকলেও তারা ঠেকানোর কোনও চেষ্টা করেনি। দূতাবাস রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরাও ছিল নিষ্ক্রিয়।

দূতাবাসে হামলা, ভাংচুর, জাতীয় পতাকা নামিয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে কূটনীতিক এবং মিশনের সব কর্মকর্তার নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়।

এদিকে এই ঘটনার পরপরই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে আগরতলায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনে হামলার নিন্দা জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, কূটনৈতিক স্থাপনা কোনোমতেই হামলার লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিৎ নয়।

নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশন এবং ভারতের অন্যান্য স্থানে বাংলাদেশে উপ ও সহকারী হাই কমিশনগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়।

চট্টগ্রামে হেফাজতের বিক্ষোভ

সোমবার ভারতে হিন্দু সংগঠনগুলোর বিক্ষোভের দিন বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাই কমিশন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।

ইসকন নিষিদ্ধের দাবি এবং ভারতের সংবাদমাধ্যমে অপপ্রচারের প্রতিবাদে ভারতের উপ দূতালয় অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা ছিল তাদের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই ঘোষণা থেকে সরে গিয়ে নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে সমাবেশ করে তারা। পরে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেয় হেফাজত নেতারা।

সমাবেশে উপস্থিত কয়েকজন নেতা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ঝামেলা এড়াতেই হাই কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি থেকে সরে আসেন তারা।

চট্টগ্রামে জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
চট্টগ্রামে জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

সমাবেশে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব হারুন ইজহার বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী’ শেখ হাসিনার সরকারের পেছনে মূল চালিকাশক্তি ছিল ‘হিন্দুস্থানি আধিপত্যবাদ’। এখনও ভারতে বসে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারা। প্রতিবিপ্লবের নেশায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করতে ইসকনকে তারা মাঠে নামিয়েছে।

ভারতের আধিপত্য মেনে না নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই- ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে না পারলে এদেশের দাসত্ব থেকে মুক্তি মিলবে না।”

হেফাজতের সমাবেশস্থল থেকে তিন কিলোমিটার দূরের ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনে এদিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কঠোর। সাদা পোশাকের পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও ছিলেন নিরাপত্তার দায়িত্বে।

মমতার বক্তব্য, বাংলাদেশের নিন্দা

বাংলাদেশ পশ্চিম সীমান্ত লাগোয়া রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার রাজ্য বিধানসভায় ভাষণে বাংলাদেশে হিন্দুদের রক্ষায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষী মোতায়েনের আওয়াজ তোলেন বলে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার জানিয়েছে।

তৃণমূল নেত্রী বলেন, “রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে এই বিষয়ে ভারত সরকার কথা বলুক, যাতে সেখানে তারা শান্তি সেনা পাঠাতে পারে। আমাদের এই বিষয়ে অনুরোধ রইল।”

ভারতে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের নেতারা বেশ সোচ্চার বাংলাদেশ নিয়ে। তারা যখন পশ্চিমবঙ্গে মাঠ গরম করতে চাইছে, তখন দিল্লির নরেন্দ্র মোদী সরকারের পদক্ষেপ চেয়ে দৃশ্যত বল বিজেপির মাঠে ছুড়ে দিলেন মমতা।

তিনি বলেন, “বর্ডার সিকিউরিটি কেন্দ্রের আওতায়। আমাদের এখতিয়ার বা দায়িত্বে নেই। আমরা হাউজের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানাচ্ছি, প্রধানমন্ত্রী যেন সংসদে বাংলাদেশের বিষয়ে কথা বলেন। যদি প্রধানমন্ত্রীর অসুবিধা থাকে কোনও ব্যাপারে তাহলে বিদেশমন্ত্রী যেন সংসদে বিবৃতি দিয়ে জানান যে কেন্দ্র এই বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিয়ে।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ঢাকায় সাংবাদিকেদর বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন এমন বক্তব্য দিলেন আমরা জানি না। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তার রাজনীতির জন্য বিষয়টি ঠিক হয়নি। পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে আমরা স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে চাই।”

মমতার বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংবাদমাধ্যমে খবর দেখে তিনি লন্ডন থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, ওই বক্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ।

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে অপপ্রচার চলছে বলেও দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে অন্তর্বর্তী সরকারও মনে করে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সোমবার রংপুরে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে (বাংলাদেশে) কোনও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। পাশ্বর্বর্তী দেশের মিডিয়া আমাদের সম্পর্কে অনেক মিথ্যা প্রচার করে।”

এদিকে আগরতলায় বাংলাদেশ উপ-হাই কমিশনে হামলার প্রতিবাদে রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলের ডাক দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

অপপ্রচারে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম : উপদেষ্টা

বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে একটি গোষ্ঠী বিশ্বব্যাপী সর্বশক্তি নিয়োগ করে অপপ্রচার চালাচ্ছে- এমন বার্তা ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।  

সোমবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনীতিকদের ডেকে এনে এ বার্তা দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। পরে তিনি সাংবাদিকদেরও তা জানান।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “গণমাধ্যমের একটি অংশ, বিশেষ করে ভারতের গণমাধ্যম, এই প্রচারণায় জড়িত। (কূটনীতিকদের) আমরা বলেছি, আমাদের সমাজ বরাবরই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে এসেছে।

“আমরা বলছি না যে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কোনও ঘটনাই ঘটেনি। কিন্তু, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং সব সরকারের আমলেই কমবেশি ঘটে থাকে। আমাদের লক্ষ্য রয়েছে- এই ঘটানাগুলোর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা।”

সোমবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ছবি : পিআইডি

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতা চিন্ময় ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তার নিয়ে তৌহিদ বলেন, “তাকে গ্রেপ্তার এবং আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়টি নিয়ে কূটনীতিকদের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। তাদের আমরা জানিয়েছি, তার (চিন্ময়) অনুসারীরা বিক্ষোভ করতে পেরেছে, কারণ এর স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।”

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “প্রধানত ভারতীয় মিডিয়ায় অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এর বাইরেও অনেক মিডিয়া ভারতীয় মিডিয়াকে উপজীব্য করে অপতথ্য ছড়াচ্ছে।

“আমরা বার্তা দিতে চাই, বর্তমান সরকার সাম্প্রদায়িক কোনও অপতৎপরতা বরদাশত করবে না। আমরা হিন্দু-মুসলিম কোনও ভেদ করতে চাই না। কোনও বিশৃঙ্খলা দেখা গেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।”

গত ৫ আগস্টের পর ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতিশীলতায় পরিবর্তন এসেছে স্বীকার করে উপদেষ্টা বলেন, “আমরা জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত