Beta
বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

পুরান ঢাকায় সার্কুলার রোড করে পুরো ঢাকা যুক্তের পরিকল্পনা   

মঙ্গলবার ডিসিসিআই আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ছবি: সকাল সন্ধ্যা
মঙ্গলবার ডিসিসিআই আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ছবি: সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

পুরান ঢাকার চারদিকে সার্কুলার সড়ক তৈরি করে সেটিকে পুরো ঢাকার সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এই উদ্যোগ ঢাকার ওই অংশে যানজট কমাবে, প্রত্যাশা প্রতিষ্ঠানটির।

মঙ্গলবার মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ভবনে এক মতবিনিময় সভায় ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আক্তার এই প্রত্যাশার কথা জানান।

‘পুরান ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে যানজটের প্রভাব ও উত্তরণের উপায় চিহ্নিতকরণ’ শীর্ষক ওই সভার শুরুতে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ।

সেখানে উঠে আসে ব্যবসা-বাণিজ্যে পুরান ঢাকার অর্থনৈতিক গুরুত্ব। এতে বলা হয়, পুরান ঢাকা বাংলাদেশের জিডিপিতে আনুমানিক ২০ শতাংশ অবদান রাখছে। মৌলভীবাজার, চকবাজার, বেগম বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রতিদিন গড়ে হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। তবে যানজটের কারণে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে।

পুরান ঢাকায় যানজটের কারণ নিয়ে মতবিনিময় সভায় অলোচনা হয়। সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি ও মেরামতের কাজে বিলম্ব, ফুটপাত দখল, অপরিকল্পিত গাড়ি পার্কিং, অপ্রতুল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, চাঁদাবাজি, সরু রাস্তা, অপরিকল্পিত নগরায়ন-পুরান ঢাকায় যানজটের কারণ হিসেবে সভায় উল্লেখ করা হয়।

গণপরিবহনব্যবস্থা পুরান ঢাকার চলমান যানজট নিরসনের বিকল্প হতে পারে বলে মনে করেন ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আক্তার।

তিনি বলেন, “আমরা পুরান ঢাকার চারদিকে একটি সার্কুলার রোড তৈরি করতে চাই, যার মাধ্যমে সমগ্র ঢাকার সঙ্গে সংযোগ তৈরি হবে। অনেকে রিকশা তুলে দেওয়ার কথা বলেন। পুরান ঢাকায় আমরা যতদিন বিকল্প গণপরিবহনব্যবস্থা তৈরি করতে না পারছি, ততদিন মানুষের কষ্টের লাঘব হবে না।

“গণপরিবহনব্যবস্থা কীভাবে পুরান ঢাকায় চালু করা যায়, তা নিয়ে আলাদা করে আমাদের কাজ চলছে। সময় লাগলেও আমরা আশা করছি, প্রকল্পগুলো শেষ হলে যানজটের পরিস্থিতি পালটে যাবে।”

ডিসিসিআইয়ের সভায় আলোচকরা ঢাকার যানজট নিয়ে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনের অংশবিশেষ নিয়ে আলোচনা করেন। সেই প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ঢাকায় যানবাহনের গড় গতিবেগ ঘন্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে কমে ৭ কিলোমিটারে নেমে এসেছে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে গতিবেগ ৪ কিলোমিটারে নেমে আসবে।

এর নেতিবাচক প্রভাব ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে পড়েছে বলে মনে করছে ডিসিসিআই। তাদের মতে, ঢাকায় প্রতিদিন যানজটের কারণে হারানো কর্মঘণ্টার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৪০ কোটি টাকা, যা বছরে ৫১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

ডিটিসিএ অ্যাকাডেমিক উপায়ে পুরান ঢাকাসহ পুরো রাজধানীজুড়ে এই যানজট সমস্যার সমাধান করতে চায় জানিয়ে নীলিমা আক্তার বলেন, “পুরান ঢাকায় যানজট নিরসনে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে বিদেশে এরকম একটা কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন যত সহজ, আমাদের এখানে তা কঠিন। কারণ জনসংখ্যার ঘনত্ব। এত মানুষ এই শহরে বাস করে যে, যানজট মোকাবিলাসংক্রান্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এখানে কঠিন।”

পুরান ঢাকার সঙ্গে মানুষের আবেগ জড়িয়ে উল্লেখ করে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক বলেন, “পুরান ঢাকার প্রতি এলাকার সঙ্গে মানুষের বহু আবেগ জড়িত। এখানে চাইলেই আমরা মেট্রোরেল বা বাস স্টেশনের কাজ করতে পারি না। এটা করতে গেলে পুরান ঢাকার চরিত্র হারিয়ে যাবে।”

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক আব্দুল বাকী মিয়া।

পুরান ঢাকার যানজটের সমাধান দেন তিনিও। বলেন, “ঢাকা শহরে সব মেট্রোরেলের রুট খুলে দিলে যানজট অনেকখানি কমবে। গোলাপশাহ মাজার থেকে নয়াবাজার হয়ে সদরঘাটে একটি ব্রাঞ্চ লাইন তৈরি করার আলোচনা চলছে। এসব যদি শেষ করা যায়, তাহলে পুরান ঢাকার যানজট কিছুটা কমবে। বুড়িগঙ্গা পার হওয়ার জন্য আরও কিছু সেতু নির্মাণ করা যেতে পারে। এতেও যানজট হ্রাস পাবে।”

পরিবহন পরিকল্পনার অভাবে বিদ্যমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সাবেক পরিচালক ড. এস এম সালেহ উদ্দিন।  

ডিসিসিআইয়ের সভায় তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বে খারাপের তালিকায় এক বা দুইয়ে থাকছি। রাস্তা, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা- সবকিছুতেই আমরা খারাপের তালিকায় উপরের দিকে আছি। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। আমরা আগে ভূমি পরিকল্পনা করেছি; পরিবহন পরিকল্পনা করিনি।

“আমরা ইচ্ছেমতো বাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, দোকান তৈরি করেছি কিন্তু এগুলো ব্যবহারের রাস্তা কেমন হবে, তা ভাবিনি। মানুষ আগে রাস্তা ঠিক করে; সে অনুযায়ী ভবন নির্মাণ হয়। আমরা করেছি উল্টো। তাই আজকে ঢাকা শহরে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।”-যোগ করেন ড. এস এম সালেহ উদ্দিন।  

কামরাঙ্গীরচর হবে ম্যানহাটন-সাংহাই

ডিসিসিআইয়ের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

যানজটের জন্য অপরিকল্পিত নগরায়ণকে দায়ী করে তিনি বলেন, “৪০০ বছরের পুরাতন শহরকে আমরা সবাই ভালোবাসি। আমাদের জন্ম এ শহরে, বেড়ে ওঠা এ শহরে। কিন্তু আজকে শহরের এ অবস্থার জন্য দায়ী কে? বহির্বিশ্বের কোনও শত্রু বা ষড়যন্ত্রকারী তো দায়ী নয়, দায়ী তো আমরাই। অপরিকল্পিত নগরায়ণকে উৎসাহিত করা হয়েছে এতদিন। আজকে তাই বসবাসের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে এ শহর।”

কামরাঙ্গীরচর ম্যানহাটন-সাংহাই শহরের মতো দেখতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কামরাঙ্গীরচরকে আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। ভৌগোলিকভাবে এর ম্যানহাটন বা সাংহাই হওয়ার যোগ্যতা আছে। একইসঙ্গে চকবাজার ও মতিঝিলকে আমরা আবার পুনরুজ্জীবিত করার কাজ করছি।”

তিনি বলেন, “ঢাকা শহরের পরিকল্পনা কে করবে, তা নিয়েই তো দ্বন্দ্ব। এতগুলো সংস্থার মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা। আমরা এসে এটা বন্ধ করেছি। আমরা প্রথমেই এটা ঠিক করে নিয়েছি যে, শহরের পরিকল্পনা করার দায়িত্ব কেবল সিটি কর্পোরেশনের।”

সিটি কর্পোরেশনের দুর্নীতির কারণে এতদিন কাজ হয়নি জানিয়ে মেয়র বলেন, “আমরা এসেই সিটি কর্পোরেশনের দুর্নীতি দূর করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। অনেককে আমরা ছাঁটাই করে নতুন নিয়োগ দিয়েছি। এজন্য তিন বছরে কোনও কর না বাড়িয়ে সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আয় হয়েছে ১০৩১ কোটি টাকা, যা রেকর্ড।”

সিটি কর্পোরেশনের জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার জমি দখল ছিল। সেগুলো আমরা মুক্ত করেছি। ২০২১ সাল থেকে আমরা খাল ও নর্দমার দায়িত্ব ওয়াসার কাছ থেকে বুঝে নিয়েছি। এখন সব খাল পরিষ্কার করা হয় নিয়মিত। এর ফলে কিছু চিহ্নিত এলাকা ছাড়া বাকি শহরে জলাবদ্ধতা নেই।”

ঢাকা শহর নিয়ে দীর্ঘ পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “রায়েরবাজার সুয়েজগেট থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত রাস্তাকে প্রশস্ত করার কাজ শুরু হচ্ছে। এখানে ৮ সারি রাস্তা হবে। এই এক্সপ্রেসরোড দিয়ে যাত্রাবাড়ি থেকে সরাসরি গাবতলী দিয়ে বের হয়ে যাওয়া যাবে। এর ফলে বাস বা ট্রাকের ঢাকা শহরের ভেতরে ঢোকার প্রয়োজন হবে না। এতে যানজট অনেক কমে আসবে।”

তিনি আরও বলেন, “সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি আমরা তা উদ্বোধন করব। উদ্বোধনের পর ঢাকা শহরের কোথাও বাসের কাউন্টার কেউ বসাতে পারবে না। টার্মিনালের বাইরে কারও কাউন্টার থাকলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।”


আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত