Beta
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

শ্রীলঙ্কায় গণঅভ্যুত্থানের পর বাম নেতা দিসানায়াকের উত্থান 

ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সামনে জনতা বিমুক্তি পেরামুনার (জেভিপি) নেতা অনুরা কুমারা দিসানায়াকে।
ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সামনে জনতা বিমুক্তি পেরামুনার (জেভিপি) নেতা অনুরা কুমারা দিসানায়াকে।
[publishpress_authors_box]

গণঅভ্যুত্থানের পর শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গণনায় এগিয়ে আছেন মার্ক্সবাদী নেতা অনুরা কুমারা দিসানায়াকে।

দেশটির নির্বাচন কমিশন বলছে, এখন পর্যন্ত অর্ধেকের কাছাকাছি ভোট গণনা শেষে দিসানায়াকে ৩৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রয়াত রানাসিংহে প্রেমাদাসার ছেলে সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন ৩৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ ভোট।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে ১৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছেন।

২০২২ সালে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া রাজাপাকসে পরিবারের প্রতিনিধি সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের বড় ছেলে নামাল রাজাপাকসের ঝুলিতে এখন পর্যন্ত জমা পড়েছে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ ভোট।

ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে হলে একজন প্রার্থীকে অন্তত ৫০ শতাংশ ভোট পেতে হয়। তবে কোনও প্রার্থী তা না পেলে অগ্রাধিকার ভোটের ভিত্তিতে বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়।

এজন্য নিয়ম অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সময় ভোটাররা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পছন্দের প্রার্থীও বাছাইয়ের সুযোগ পায়। তবে চাইলে কেউ শুধু একজন পছন্দের প্রার্থী বা প্রথম ও দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে দুজনকেও বাছাই করতে পারে।

ভোটদান শেষে গণনার সময় প্রথম ধাপে ভোটারদের প্রথম পছন্দের প্রার্থী বাছাই করা হয়। তাতে কেউ এককভাবে অন্তত ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে ভোটপ্রাপ্তিতে প্রথম ও দ্বিতীয় হওয়া প্রার্থীকে রেখে বাকি প্রার্থীদের বাদ দেওয়া হয়। এরপর বাদ পড়া প্রার্থীদের ব্যালটগুলোতে অগ্রাধিকার ভোট বা দ্বিতীয় পছন্দের প্রার্থী হিসেবে পাওয়া ভোট গণনা করে বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়।

এখন পর্যন্ত ভোটের ফলে ৫৫ বছর বয়সী দিসানায়াকের বিজয় সুনিশ্চিত না হলেও তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা পরাজয় মেনে নিয়ে তাকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করে দিয়েছে।

শ্রীলঙ্কায় এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ। নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, শনিবারের নির্বাচনে ভোট পড়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ।

দেশটির এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৩৮ জন হলেও মূল লড়াই যে দিসানায়াকে, বিক্রমাসিংহে আর প্রেমাদাসার মধ্যেই হবে, সে আভাস আগেই পাওয়া গিয়েছিল। 

২০২২ সালে গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল অনুরা কুমারা দিসানায়াকের দল জেভিপির।

২০২২ সালে অর্থনীতি ভেঙে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে অন্য ধরনের উত্থান ঘটে দিসানায়াকের দল জেভিপির।

মার্ক্সবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে সত্তর ও আশির দশকে দুবার বিপ্লবের ডাক দেওয়া এই দল একপর্যায়ে বিপ্লবের পথ থেকে সরে সংসদীয় গণতন্ত্রের অন্যতম প্রবক্তা হয়ে ওঠে। সেই আদর্শে ধরে ২০২২ সালে ক্ষমতাসীন রাজাপাকসে পরিবারকে উৎখাতে গণঅভ্যুত্থান গড়ে তুলতে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় জেভিপি ও তাদের জোট ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি)।

গণঅভ্যুত্থানের একপর্যায়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার ছোট ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পলায়নের পর দ্রুতই শ্রীলঙ্কানদের আস্থার জায়গায় চলে যান দিসানায়াকে। দুর্নীতি নির্মূল, অর্থনৈতিক সংস্কার, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মতো জনতুষ্টিবাদী কর্মসূচি দিসানায়াকের নেতৃত্বেই হাতে নেয় জেভিপি।

তারই প্রতিফলন দুবছর পর পড়েছে ব্যালট পেপারে।           

প্রতিপক্ষ শিবিরের কাছ থেকে এরই মধ্যে ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন দিসানায়াকে। পেয়েছেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রনিল বিক্রমাসিংহে ও সাজিথ প্রেমাদাসার সমর্থকদের কাছ থেকে অভিনন্দনবার্তা ।

শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি সাবরি এক এক্স বার্তায় বলেছেন, “ভোটের প্রাথমিক ফল স্পষ্টতই দিসানায়াকেকেই বিজয়ী ঘোষণা করছে।

“আমি প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের পক্ষে প্রচারে অংশ নিলেও শ্রীলঙ্কার জনগণ তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। অনুরা কুমারা দিসানায়াকের পক্ষে তাদের রায়কে আমি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা জানাই।”                             

আরেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সাজিথ প্রেমাদাসার সমর্থক ও সংসদ সদস্য হারশা ডি সিলভা ভোটের ফল দেখে দিসানায়াকেকে অভিনন্দন জানিয়ে সোশাল মিডিয়ায় বলেন, “আমরা প্রেমাদাসার হয়ে ব্যাপক প্রচার করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। এটা পরিষ্কার, দিসানায়াকেই শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন।”

তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত