জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীলঙ্কার ইতিহাস নতুন করে রচনার প্রত্যয় জানিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন বামদল জনতা বিমুক্তি পেরামুনার (জেভিপি) নেতা অনুরা কুমারা দিসানায়াকে।
ডেইলি মিরর ও দ্য হিন্দু জানিয়েছে, সোমবার সকাল ১০টার দিকে প্রেসিডেন্ট সচিবালয়ে এক অনাড়ম্বর পরিবেশে শ্রীলঙ্কার নবম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দিসানায়াকেকে শপথ পড়ান প্রধান বিচারপতি জয়ন্ত জয়সুরিয়া।
২০২২ সালে গণঅভ্যুত্থানের পর শনিবার শ্রীলঙ্কায় প্রথম ভোট হয়। পরদিন ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, দিশানায়াকে পেয়েছেন সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রয়াত রানাসিংহে প্রেমাদাসার ছেলে সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট। বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে পেয়েছেন ১৭ শতাংশ ভোট।
কোনও প্রার্থীই প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশের বেশি ভোট নিশ্চিত করতে না পারায় ভোট গণনা দ্বিতীয় দফায় গড়ায়।
শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীর পাশাপাশি পছন্দক্রম অনুযায়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রার্থীকে ভোট দিতে হয় ভোটারদের। কোনও প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে তখন ভোটারদের এই পছন্দক্রম গণনা করে বিজয়ী নির্ধারণ করতে হয় দ্বিতীয় দফায়।
রবিবার রাতে সেই দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনা শেষে নির্বাচন কমিশন জানায়, দিসানায়াকে পেয়েছেন ৫৭ লাখ ৪০ হাজার ১৭৯টি ভোট। আর প্রেমাদাসা পেয়েছেন ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ৯০২টি ভোট।
নির্বাচন কমিশন দিসানায়াকেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করার পর শ্রীলঙ্কার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে তার উত্তরসূরিকে অভিবাদন জানিয়ে বলেন, “প্রিয় মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অন্তরে ধারণ করে নতুন প্রেসিডেন্টের কাছে তার ভবিষ্যৎ তুলে দিচ্ছি।”
শপথ গ্রহণের আগে এক বিবৃতিতে ৫৫ বছর বয়সী দিসানায়াকে বলেন, “এই জয় আমাদের সবার। নতুন করে সবকিছু শুরু করবে শ্রীলঙ্কা।
“আশা ও প্রত্যাশায় ভরা কোটি কোটি চোখ আমাদের এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। শ্রীলঙ্কার ইতিহাস আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নতুন করে লিখব।”
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় এরই মধ্যে দেশ-বিদেশের নেতাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন দিসানায়াকে। শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি সাবরি থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষ শিবিরের অনেকে রবিবার সকালে প্রথম দফায় ভোট গণনার মাঝেই তাকে অভিনন্দন জানান।
এরপর রবিবার রাতে দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনা শেষে দিসানায়াকেকে বিজয়ী ঘোষণা করার পর প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছ থেকে অভিবাদনবার্তা পান তিনি।
শনিবার ভোটের আগে নির্বাচনী প্রচারে জেভিপি নেতা দিসানায়াকে শ্রীলঙ্কার জনগণকে দেশে সুশাসন ও কঠোর দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপের ওয়াদা করেছিলেন।
তিনি সেসময় বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে শ্রীলঙ্কার কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি ও উৎপাদন পদ্ধতিতে উন্নয়ন ঘটাবেন।
এছাড়া শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের করে আনতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চুক্তি অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন দিসানায়াকে। পাশাপাশি আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী সরকারি ব্যয় কমানোর পদক্ষেপের জেরে দেশটির সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগের মাত্রা যাতে কম হয়, সেই ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেন।
বিবিসি জানিয়েছে, সোমবার দিসানায়াকের শপথ গ্রহণের আগে পদত্যাগ করেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী দিনেশ গুণবর্ধন। এর মধ্য দিয়ে দেশটির পার্লামেন্ট বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
নির্বাচনের আগে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দিসানায়াকে বলেছিলেন, নির্বাচিত হওয়ার পরপরই সংসদ ভেঙে দেবেন তিনি।
“জনগণ কী চায়, তা বুঝতে অক্ষম- এমন সংসদ রাখার কোনও অর্থ নেই,” এমনটাই তিনি বলেছিলেন সাক্ষাৎকারে।