Beta
মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪

ছাত্র আন্দোলনকে দলীয়করণ করবেন না, রাজনৈতিক দলগুলোকে হাসনাত

চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে মতবিনিময়ে হাসনাত আবদুল্লাহ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে মতবিনিময়ে হাসনাত আবদুল্লাহ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে পথে নামা ছাত্রদের আন্দোলন থেকে সরকার পতনের পর সেই আন্দোলনকে কেউ যেন দলীয়করণের চেষ্টা না করে, সে বিষয়ে হুঁশিয়ার করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

রবিবার বিকালে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে ছাত্র-নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

হাসনাত বলেন, “আন্দোলন পরবর্তী সময়ে রাস্তা-ঘাটে অমুক দল, তমুক দল ছিল না। কিন্তু আপনি যদি এখন রাস্তায় বের হন, দেখবেন দেয়াল পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের সময়ে যেভাবে পোস্টার ছিল ঠিক একইভাবে পোস্টার ছাপানো হয়েছে। শুধু ছবিগুলোর পরিবর্তন হয়েছে।

“আপনাদেরকে বলতে চাই ছাত্র আন্দোলনকে পুঁজি করে আপনারা সেই আন্দোলনকে দলীয়করণ করার চেষ্টা করবেন না। ছাত্রদের আন্দোলনটি হয়েছিল ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অসাম্যের বিরুদ্ধে, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে, টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে।”

টেন্ডারবাজ ও দুর্নীতিবাজদের সতর্ক করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, “আপনারা ১৬ বছর একটি দলের ছত্রছায়ায় ছিলেন। এখন যদি আরেকটা দলের ছত্রছায়ায় এসে দুর্নীতি করার চেষ্টা করেন, তাহলে ছাত্র-জনতা দেখে নেবে।”

তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয় এক ধরনের অরাজক পরিস্থিতি। জনরোষের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলো, হামলার শিকার হয় দলটির নেতাদের বাড়ি-অফিস-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিকৃতি থেকে শুরু করে রাস্তার পাশে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ছবি সম্বলিত পোস্টার-ব্যানারও ছিঁড়ে ফেলা হয়।

রাজনৈতিক এই পট পরিবর্তনের পর যখন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা চলে যান আত্মগোপনে, তখন মাঠে দেখা যায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি। আদালতের আদেশে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাজামুক্ত হন, তুলে নেওয়া হয় তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারের নিষেধাজ্ঞাও। দেশের নানা জায়গার দেওয়ালে পোস্টার-ব্যানার সেঁটে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে শুরু করেন দলটির নেতাকর্মীরা।

চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়েও বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যানারে ছেয়ে গেছে।

এমন বাস্তবতায় কোনও রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ না করলেও, কেউ যেন ছাত্র আন্দোলনের ফলাফলকে দলীয়করণ করতে না পারে, সে বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেন হাসনাত আবদুল্লাহ।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থান পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সফরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেন তিনি। বলেন, “প্রভু চলে গিয়েছে কিন্তু প্রভুর দাসরা আমাদের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে। তারা বিভিন্ন রূপে আমাদের মাঝে এসে ইউনিটিকে ভাঙতে চাইবে। আপনাদেরকে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।”

চট্টগ্রামের মানুষকে ধর্মভীরু উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “কিন্তু আমরা দেখেছি তাদেরকে (চট্টগ্রামের মানুষ) রাষ্ট্রীয়ভাবে সবসময় ধর্মীয় গোঁড়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দাঁড়ি-টুপি যাদের রয়েছে তাদেরকে সবসময় প্রান্তিকীকরণ করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, দাঁড়ি-টুপির মানুষগুলো যেদিন উত্তরায় নেমে এসেছিল, যাত্রাবাড়ীতে দুর্গ গড়ে তুলেছিল তাদের সমন্বয়কের পরিচয় লাগেনি। ঠিক একইভাবে এ রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে আমাদের সমন্বয়ক হওয়ার প্রয়োজন নেই।”

এর আগে সকালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানপরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন হাসনাত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে আয়োজিত সেই সভায় সমন্বয়কদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করা নিয়ে হট্টগোল ও হাতাহাতি হয়। পরে হাসনাত আবদুল্লাহর অনুরোধে তা নিয়ন্ত্রণে আসে।

দেশের প্রতি জেলায় অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা মতবিনিময় করবেন বলে শনিবার ঘোষণা দেওয়া হয়। যার ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে যান হাসনাত আবদুল্লাহ।

লালদিঘী মঞ্চে তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, মোহাম্মদ আলী, ফজলুল হক শ্রাবণ, রিয়াজুর রহমজান ও পুষ্পিতা নাথসহ অন্যান্যরা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত