Beta
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিয়ে-জন্মদিন-দাওয়াত: উপহার দেওয়ার সময় যা খেয়াল রাখা উচিৎ

উপহার দিতে গিয়ে যত উচাটন
উপহার দিতে গিয়ে যত উচাটন
[publishpress_authors_box]

বিয়ের মৌসুমে মাসে দুটো করে বিয়ের দাওয়াত পড়ে গেলেই মধ্যবিত্তের বারবার পকেট হাতড়ে দেখতে হয়। আবার বড় অনুষ্ঠানে ছোট প্যাকেট হাতে যেতেও সংকোচ হয় অনেকের। তাই সীমিত বাজেটের মধ্যে খুঁজে নিতে হয় আকারে বড় কোনও উপহার।

সাধ্যের মধ্যে টেবিল ল্যাম্প নয়তো সিরামিকের বড় বাটি কিনলে উপহারের বাক্স মাপে ঠিকঠাক দেখায়। এই হিসাব-নিকাশ দাওয়াতে আসা অনেক মধ্যবিত্ত অতিথিরই। ফলে বর-কনে পরে একে একে উপহারের বাক্স খুলে দেখে, একই রকম টেবিল ল্যাম্প দিয়েছে অনেকেই।

একই বিপত্তি হয় জন্মদিন, বাগদান আর বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গেলেও। এ কারণে সেজেগুজে দাওয়াত খেতে যেতে মনে আনন্দ হলেও কী উপহার দেওয়া যায় ভাবতে ভাবতে মুখ চুপসে আসে বহু জনের।

উপরন্তু বাজেট কম হোক আর বেশি, কারও কারও উপহার পছন্দের ধরনই উদ্ভট হয়; ওই উপহার অপরপক্ষের ভালোও লাগে না এবং কাজেও লাগে না কোনোভাবে।

আবার কেউ কেউ বলেন, ছাতা খুব কাজের হলেও বিয়ে বা বিবাহবার্ষিকীতে এসে ছাতা উপহার দেওয়া মোটেও ভালো দেখাবে না।

উপহার নিয়ে কুসংস্কার

ছাতা উপহার দেওয়া-নেওয়াকে অনেকে অশুভ মানেন। ঠিক যেমন রুমাল উপহার দিলে সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় বলে জোরদার ধারণা ছিল কোনও এক সময়।

উপহারে পোশাক দিতে গেলে রঙ নিয়ে হতে হবে একটু সতর্ক। বিয়ের অনুষ্ঠানে যেমন কালো রঙ এড়িয়ে চলা যায়, তেমন বিশেষ করে পোশাক উপহার দিলে কোনোভাবেই কালো রঙের দেওয়া যাবে না।

ধারালো কোনও বস্তুও উপহারে এড়িয়ে চলেন অনেকে। ঘড়ি এবং জুতাও উপহারের জন্য শুভ নয় এমন বলেন কেউ কেউ।

৫০০ টাকায় মনের মতো উপহার

বছরে একাধিক সামাজিকতার আয়োজনে যেতেই হলে একেকটিতে বাজেট সীমিত করে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। এক্ষেত্রে ৫০০ টাকার মধ্যে কিছু কিনে সুন্দর মোড়কে মুড়িয়ে নিয়ে অনুষ্ঠানে হাজির হতে হয়। তবে এই স্বল্প বাজেটের মধ্যে ভালোবাসা ও আন্তরিকতার ছোঁয়া দেওয়া যেতে পারে; এজন্য কম দামের মধ্যেও চমৎকার একটি উপহার বাছাই করতে হবে।

বাজেট অল্প থাকলে বড় ব্র্যান্ড দোকান এড়িয়ে যাওয়া যায়। আবার বড় দোকানেও ছোট ছোট অনেক কিছু মেলে যা একত্রে কিনে নির্দিষ্ট টাকার মধ্যেও উপহারের বাক্সে ভরে ফেলা যায়।

যে কোনো আড়ং আউটলেটে গেলে মাটি ও সিরামিকের বাসন, হাতের কাজের কুশন, টেবিল রানার, মোমবাতি, ফুলদানি কেনা যায় কম খরচে। দোয়েল চত্বর এবং আরো অনেক ফুটপাতে বসে গৃহসজ্জার সামগ্রীর বিশাল পসরা।

রাজধানীর উত্তরা, ধানমণ্ডি এলাকার কিছু মোড়ে ভ্যানগাড়িতে সিরামিকের বাসনের বিশাল পসরা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একশ টাকা থেকে শুরু করে থালা, বাটি, মগ মেলে এখানে। ফেইসবুকে রিল বানাতে রঙিন বাসনের কদর বেড়েছে আজকাল। তাই এমন উপহার পেলে যে কেউ খুশি হবে; অন্যদিকে আপনার পকেটেও বিশেষ চাপ পড়বে না।

মিরপুর ১ নম্বরে এবং উত্তরা-ধানমণ্ডি এলাকা ভ্যান গাড়িতে বিছানার চাদর ও পর্দা বিক্রি হয়। আড়াইশো থেকে ৫শ টাকার মধ্যে পর্দা ও বিছানার চাদর অনায়াসে কেনা যাবে। রঙ এবং কাপড়ের মান ভালো থাকায় এমন উপহারে যে কারো ঘর উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

ভালো ব্র্যান্ডের বড় বোতলের সুগন্ধি কেনা মানে কয়েক হাজার টাকার ব্যাপার। তবে কিছু কিছু গিফট শপে ছোট ছোট বোতলে সুগন্ধি পণ্য পাওয়া যায়; যা ৫০০ টাকার মধ্যেই কেনা যাবে।

জন্মদিনে অনেকে ছোট কেক উপহার দেন। যদি বান্ধবীর জন্মদিনে ঢাকঢোল পেটানো আয়োজন না হয়, সেক্ষেত্রে ৫০০ টাকার মধ্যে লিপস্টিক, সানস্ক্রিন দিয়ে খুশি করা যাবে সহজেই।

বিদেশ থেকে কী উপহার আনবেন

বিদেশ ঘুরে এলেই সবাই মনে করে নিশ্চয়ই লাগেজ ভরে উপহার আনা হয়েছে। এমন ভাবনা বাড়তি উচ্ছ্বাসের হলেও বাস্তবে তাতে অনেক খরচা হয়ে যাবে। তবে বাইরের দেশে পর্যটন সংস্কৃতি গোছানো বলে স্ট্রিট শপ থেকে কম খরচে অনেক রকম স্যুভেনির কেনা সম্ভব।

চাবির রিং, কোনো বিশেষ স্থাপনার ক্ষুদে আকৃতি, ফ্রিজে বসানোর ম্যাগনেট, টুপি, ফতুয়ার উপরে পরার ছোট ওড়না বা স্কার্ফ, ব্রেসলেট কম দামে কেনা যাবে স্ট্রিট মার্কেট থেকে। আবার বড় দোকান থেকে চকলেট না কিনে স্ট্রিট শপে চকলেটের প্যাকেট নিলে খরচ কম হবে।

তবে বিদেশ থেকে বিশেষ কারো জন্য উপহার হিসাবে ব্যাগ, কলম, পারফিউম, লিপস্টিক, টাই, ছাতা, ডার্ক চকলেট, বাদাম, খেজুর দেওয়া চকলেট আনা গেলে মুখের উজ্জ্বল হাসি দেখা যাবে শতভাগ।

অফিসের সহকর্মীদের জন্য চকলেট নিতে চাইলে বড় প্যাকেট নিন, তাতে অনেক চকলেট পাওয়া যাবে কম খরচে।

মালয়েশিয়া ঘুরতে পর্যটকরা মাইডিন সুপার শপে একবার হলেও ঘুরে আসেন; কারণ সস্তায় কেনাকাটা করা যায় বলে মাইডিনের নাকডাক রয়েছে সেখানে।

সৌখিন উপহার

সৌখিনতা মানুষের সহজাত আচরণ। যদিও এই সৌখিনতার সঙ্গে আর্থিক সামর্থের বিষয়টি জড়িয়ে আছে। সামর্থ না থাকলে অনেকে নিজে হাতে জামা সেলাই করে উপহার দিতে পারে। কম বাজেটের মধ্যে রঙিন কাগজে মুড়ে উপহার দিতে পারে। আর যদি একটু সামর্থ থাকে তবে এর সঙ্গে নান্দনিক রুচি জুড়ে উপহারের রাজ্যে বিচরণ করা যায়। সামর্থ কম থাকলেও যেমন উপহার বাছাই করতে গিয়ে ভাবতে হয়, তেমনি সামর্থ থাকলে দামি উপহার কিনতে গিয়েও দ্বিধা বেড়ে যায়। আবার মগে নিজের ছবি ছাপানো উপহার পেলে যে কেউ খুশিতে নেচে উঠবে।

বাজেট যদি ভালো হয়, তবে কাছের মানুষকে শাড়ি উপহার দেওয়া যায়। দামি ব্যাগ উপহার দিয়েও চমকে দেওয়া যায়। অনেক খরচা করে সোনার গয়না দিতে হবেই এমন নয়; মুক্তোর মালা কিংবা পাথর বসানো ইমিটেশনের ঝলমলে হার-দুল উপহার দিয়ে মন জয় করে নেওয়া যায়।

এসবের বাইরে মাঝামাঝি খরচে ফটো অ্যালবাম উপহার হিসাবে বেশ ভালো। ডিজিটাল যুগে ফটো অ্যালবামের চল কমে গেলেও, এমন উপহার মানুষকে আবেগ তাড়িত করবে।

আর বাজেট বাড়ানো সম্ভব হলে পারফিউম অবশ্যই চমৎকার উপহার হবে।

রান্না করতে পছন্দ করেন এমন কাউকে উপহার দেওয়ার কথা ভাবলে হ্যান্ড ব্লেন্ডার, কফি মেকার, এয়ার ফ্রায়ার, রাইস কুকার, ইলেকট্রিক চুলা, মিনি জুসার, ওয়াফেল মেকার কেনা যেতে পারে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যেই।

উৎসবে পুরো পরিবারকে একই নকশার শাড়ি-পাঞ্জাবি উপহার দিলে সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়বে বহুগুণ।

নতুন মায়ের উপহার

নতুন মা এবং নবজাতক শিশুর জন্য উপহার দেওয়ার সামাজিকতা করতে গিয়েও অনেকে বিপাকে পড়েন। কারণ নতুন বাবা-মা হয়তো আগেই সন্তানের জন্য কেনাকাটা সেরে ফেলেছেন। যদি ওই পরিবার ও আপনার মাঝে সখ্য থাকে, তাহলে উপহার কেনায় তাড়াহুড়ো না করে আগে বুঝে দেখুন তাদের কী কী প্রয়োজন আছে।

যদি ওই পরিবারের আর্থিক সামর্থ কম থাকে, তাহলে এই সময় মা ও সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁথা, জামা, জুতা, রুমাল, ফল ইত্যাদি যতটুকু সম্ভব হয় শুভেচ্ছা উপহারে দিন।

কম খরচের মধ্যে চমৎকার উপহার বাছাই করা মাঝে মাঝে কঠিন হয়ে ওঠে

টেকি উপহার

সময়ের বদলে উপহারে আরেকটু বৈচিত্র্য এসেছে। সম্পর্কের ধরন অনুসারে এবং যাকে উপহার দিচ্ছেন তার কাজ বুঝে উপহার কিনে একেবারে একশতে একশ নম্বর বাগিয়ে নেওয়া কঠিন কিছু নয়। আজকাল যেহেতু গ্যাজেট কেনায় দুহাতে খরচা করে অনেকেই, তাই উপহারের প্যাকেটের ভেতরে এমন কিছু থাকলে তা আনন্দদায়ক হবে সবার কাছেই।

সেলফি ও রিল বানাতে সবার একটা ভালো ফোন দরকার হয়। কাছের মানুষ হলে তাকে মোবাইল উপহার দেয়া যায়। আবার স্ট্যান্ড মাইক অথবা ওয়ারলেস মাইক হলে ভিডিও বানানোর কাজে এসব খুব সহায়ক হয়ে ওঠে।

৫শ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে মাইক কেনা যায় উপহারে; চাইলে আরও বেশি খরচা করেও কেনা যাবে। আবার রিং লাইট, ওয়ারলেস স্পিকার কিনেও উপহার দেওয়া যায়।

সেরা উপহার বই

এক সময় জন্মদিনে গানের ক্যাসেট এবং বই উপহার দেয়ার চল ছিল। ক্যাসেট-সিডি কেনার দিন এখন আর নেই। বই কেনা যায় যদিও; যদিও অনেকেই বলছেন, মানুষের পাঠাভ্যাস কমে গেছে। এরমধ্যেও বই পড়তে ভালোবাসে এমন কারো জন্য বই হলো সেরা উপহার।

বই যে কোনও ছুতোনাতায় উপহার দেওয়া যায়। এমনকি বিয়ের মতো বড় উৎসবমুখর অনুষ্ঠানেও।

২০২২ সালে বিয়ে করে বগুড়া ধুনট উপজেলার শান্তনা খাতুন ও নিখিল নওশাদ। বিয়েতে দেনমোহর হিসেবে শান্তনা খাতুনকে ১০১টি বই উপহার দেন নিখিল নওশাদ। এই বইগুলোর মোট আর্থিক মূল্য ছিল ২ লাখ ২ হাজার টাকা।

উপহারে গাছ-ফুল

বইয়ের মতো আরো অর্থবহ উপহার হতে পারে গাছ। বিশেষ করে জন্মদিনে এমন উপহার দেয়া যায়। আবার পাড়ার কোনো আয়োজনে, বিদ্যালয়ে অথবা কোনো সাংগঠনিক কাজে গাছ উপহার দিয়ে সুনাগরিকের পরিচয় দেওয়া সম্ভব।

উপহারে ফুল দেওয়ার আলাদা সৌন্দর্য আছে। সম্পর্ক ও আনুষ্ঠানিকতার ধরন অনুসারে বাজেট করে ফুলের তোড়া বানিয়ে নেয়া যেতে পারে। করপোরেট অনুষ্ঠানে, সভা-সেমিনারে তোড়া উপহার দেওয়া হয়। আবার বিয়ের অনুষ্ঠানেও ফুলের তোড়া দেয়া যায় অন্য উপহারের সঙ্গে। প্রেমিকার জন্য একটি গোলাপ কিংবা বেলী ফুলের মালা দারুণ রোমান্টিক উপহার হতে পারে, তবে বিবাহবার্ষিকীতে বড় তোড়া দিলে সম্পর্কের সুবাস বেশি করে ছড়াবে।

পিকনিকে উপহার

শীতের আগে-পরে পিকনিকের হিড়িক ওঠে। অফিসের সহকর্মীরা, পুরনো স্কুল-কলেজ বন্ধুরা, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা, কোনো সংগঠনের সদস্যরা মিলে এক যোগে চাঁদা তুলে পূর্বাচল, গাজীপুর, সাভার ঘুরে আসেন একদিনের জন্য।

অবশ্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরে রিসোর্টের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে এখন সারা বছরই দল বেঁধে কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে।

এক সঙ্গে ১৫-২০ জন গেলে মজা করার জন্য র‌্যাফেল ড্র পর্ব রাখা হয়। পিকনিকে র‌্যাফেল ড্র আয়োজনের পাশাপাশি থাকে মিউজিকাল চেয়ার, হাঁড়ি ভাঙ্গা খেলাও। এসব মজার খেলায় আবার উপহারের ব্যবস্থাও রাখা হয়।

এসব উপহারের খরচ আসে সাধারণত পিকনিকে বা ভ্রমণের জন্য জমা করা চাঁদা থেকে। চাইলে দলের মুরুব্বী বয়সী কিংবা অফিসের ম্যানেজার বাড়তি কিছু অর্থ স্পন্সর করতে পারেন।

পিকনিকের উপহার সাধারণ খুব দামি কিছু হয় না। শিক্ষার্থীদের পিকনিক হলে চাঁদার পরিমাণ সীমিত থাকে; তাই উপহারের বাজেট কম ধরা হয়।

র‌্যাফেল ড্র খেলা হলে সাধারণত প্রথম পুরস্কারের দিকেই মনোযোগ থাকে সবার। অন্যদিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার ছাড়া এরপরের বেশ কিছু উপহার নিছক মজার জন্যই দেয়া হয়।

বাজেট যেহেতু কম, তাই সহজ কৌশল হলো উপহারের ক্রম কাগজে লিখে প্রতিটির পাশে বাজেট লিখে ফেলা ধারাবাহিক ভাবে। অর্থ্যাৎ প্রথম পুরস্কারে সবচেয়ে বেশি বাজেট এবং দশম পুরস্কারে সবচেয়ে কম বাজেট।

এ ধরনের অল্প খরচের উপহার কেনার জন্য নিউ মার্কেটের ভেতরে ও বাইরে, গাউছিয়া মার্কেটের গলি বেশ কাজের। এছাড়া দোয়েল চত্বরের ওদিকে স্ট্রিট শপ ঘুরে এলেও কম খরচে অনেক কিছু চোখে পড়বে।

মোটে একশ টাকা দিয়ে সোনালী রঙের চামচ কেনা যাবে। এছাড়াও দামের ওঠানামায় কেনা যাবে ছোট আকারের মগ, রুমাল, টিপের পাতা, বালিশ, চুলের ব্যান্ড, কুশন কভার, ব্যাগ, ফটো স্ট্যান্ড, ফ্রেমে বাঁধানো ছবি, ফুলদানি এমন রকমারি উপহার।

আবার চাঁদায় কুলিয়ে উঠতে পারলে এমন দলীয় আয়োজনে একই ধরনের টিশার্ট বানিয়ে নেয় অনেক সংগঠন ও সংস্থা। ধরা যাক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী হচ্ছে। এখানে নিবন্ধনকারী সব শিক্ষার্থীর জন্য উপহারের ব্যাগে সবার জন্য একই রঙ ও লোগো-স্লোগান বসানো একটি টিশার্ট থাকছেই আজকাল।

উপহারে গিফট ভাউচার

বাজেট কম হোক বা বেশি প্রতিবার উপহার বাছাই করতে গিয়ে মাথা চক্কর দিয়ে উঠবেই। উপহার কি আপনার পছন্দের কথা ভেবে কিনবেন? না কি যাকে দেবেন তার পছন্দের কথা ভেবে উপহার কিনবেন? এসব প্রশ্ন প্রতিবার ধাঁধার মতো মনে হয়। আবার আপনি যে উপহার কিনে দিলেন তা আরো কেউ কিনে দিলে উপহারের পুনরাবৃত্তি হবে। এসব জটিলতা থেকে উদ্ধার করবে গিফট ভাউচার।

আড়ং অনেক বছর ধরে ৫শ এবং এক হাজার টাকার গিফট ভাউচার বিক্রি করছে। প্রতিটি ভাউচারের মেয়াদ থাকে এক বছর এবং আড়ংয়ের যে কোনো আউটলেট থেকে ওই গিফট ভাউচার দিয়ে কেনাকাটা করা যাবে। এতে সুবিধা হলো, যাকে উপহার দিচ্ছেন, তিনি নিজের সুবিধা ও সময় মতো আউটলেটে গিয়ে দরকারি জিনিস কিনে নিতে পারবেন।

মাঝে মাঝে আর্টিসান, রকমারি, টপ টেন মার্ট এমন অনেক আউটলেটে ভাউচার কার্ড নেয়া যায় কাউকে উপহার দিতে।

টিকেট উপহার

উপহার দেয়াকে আরো খানিক নাটকীয় করে তুলতে কারো জন্য সিনেপ্লেক্সে সিনেমার টিকেট বুকিং দিয়ে রাখা যায়। বেইলী রোড কি শিল্পকলা একাডেমিতে কোনো মঞ্চ নাটকের টিকেটও উপহার দেয়া যেতে পারে। কিংবা কনসার্টের টিকেট। আবার বিয়ের পর কক্সবাজার ভ্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা করা নবদম্পতির জন্য বাসের বিজনেস ক্লাস, ট্রেন অথবা প্লেনের টিকেটও বুকিং দিয়ে চমকে দেয়া যায়।

অনলাইন শপিং উপহার

এখন অনলাইনে কেনাকাটা করা যায়; তাই বাজার, পদ্মার ইলিশ, গ্রীষ্মে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম, শীতে খেজুরের গুড় যখন যেটা মেলে কিনে উপহার হিসাবে পাঠিয়ে দেয়া যায় প্রিয়জনের ঠিকানায়। এমনকি চার-ছয় জনের জন্য পোলাও-কোর্মা-কাবাব সাজানো এক ডালা খাবারও পাঠানো যায় উপহারে।

উপহারে কার্ড

ঈদের সময় কার্ড দেয়ার চল এখন আগের মতো নেই। তবে বিয়ের কার্ড এখনও বেশ চলছে। বড় আকারের কার্ড নিয়ে এক সহকর্মীর বিদায়ী আয়োজনে বাকি সহকর্মীরা স্মৃতিচারণ ও শুভেচ্ছা বাণী লিখে উপহার দেয়। এ ধরনের উপহার পরেও আবেগ তাড়িত করবে যে কাউকে।

উপহার বহনে সাবধানতা

যদি কাঁচ বা সিরামিকের উপহার দেয়া হয় তাহলে অবশ্যই মোটা প্যাকেটে ভরে নিতে হবে। বড় অনুষ্ঠানে অনেক উপহার সামগ্রীর মধ্যে পড়ে থাকবে, এমন হলে কাঁচের সামগ্রী এড়িয়ে চলা যেতে পারে। অথবা পরে বাড়ি গিয়ে সরাসরি হাতে তুলে দেয়া যায়।

যাকে উপহার দিচ্ছেন তার সঙ্গে সম্পর্কের ধরন বুঝে উপহার নির্বাচন করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সহপাঠীকে উপহার দিতে গেলে মন খুলে যা খুশি দেয়াই যায়, কিন্তু সহকর্মীর বেলায় উপহার কিছুটা আনুষ্ঠানিক হয়ে উঠবে।

সাজতে পছন্দ করেন না এমন কাউকে কসমেটিকস দেয়ার আগে ভেবে নিতে হবে। আবার কেউ কেউ ব্র্যান্ডের কসমেটিকস ছাড়া মুখে কিছু দেন না। সুতরাং তাকে ওইরকম মানের কসমেটিক ছাড়া কম দামের মধ্যে কিছু দেয়ার ভাবনা একেবারেই বোকামি হবে।

ব্যক্তিগত ভাবে টিশার্ট-পাঞ্জাবি উপহার দিতে চাইলে এমন কাউকেই দিতে হবে, যার মাপ আপনি ঠিকমতোই জানেন।

ছবি: হোয়াট মমস লাভ ডটকম

উপহারের মোড়ক

উপহার বড় হোক বা ছোট, দামি হোক বা কম বাজেটের, একটি চমৎকার মোড়ক আপনার আন্তরিকতাকে বাড়িয়ে দেবে। আগে চকচকে মোড়কের চল ছিল, এখন হালকা রঙের কাগজের মতো মোড়ক দিয়ে উপহার মুড়িয়ে নিতে ভালো লাগে সবার। আবার দোকানে রঙিন কাগজের ব্যাগও মেলে; ওতে উপহার ভরে নিলে দেখতে ভালো লাগে।

যদি কোনো বড় আউটলেট থেকে কিছু কেনা হয়, তাহলে ওই ব্র্যান্ডের ব্যাগ পাওয়া যাবে। এই ব্যাগে দিলেও দেখতে ভালো লাগবে। তবে অনেক লোকজন উপহার নিয়ে আসবে এমন আয়োজনে আলাদা করে মোড়ক বা ব্যাগ কিনে ওতে ভরে উপহার নেয়া ভালো।

যদি রাজকীয় আয়োজনে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়, তাহলে উপহারের মোড়ক ফিতা দিয়ে ফুল বানিয়ে বেঁধে দিলে তা বয়ে নিতে যেতে নিজের কাছেও ভালো লাগবে।

যৌথভাবে উপহার

বন্ধু কিংবা সহকর্মীর বিয়েতে এককভাবে উপহার দিলে তাতে ভালো কিছু কেনা সম্ভব হয় না। এর সহজ সমাধান হলো, সহকর্মী বা বন্ধুরা নির্দিষ্ট বাজেটে টাকা জমা করে নিন। মোট টাকা দিয়ে তাহলে বড় কোনো উপহার দেয়া যায়।

কেউ কেউ জমা করা মোট টাকা খামে ভরে হাতে তুলে দেন; যেন নবদম্পতি ওই টাকা নিজের প্রয়োজন মাফিক কাজে লাগাতে পারে। এভাবে সবাই মিলে টাকা জমা করলে এককভাবে কারো উপর দামি উপহার কেনার চাপ থাকে না, আবার বিয়েতে ভালো একটা উপহার দিতে পারার বাড়তি তৃপ্তিও পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত