Beta
শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪

চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ‘শর্তসাপেক্ষে’ স্থগিত

শনিবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত চিকিৎসকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হট্টগোলের একপর্যায়ে ঢামেক হাসপাতাল ভাঙচুর করা হয়।
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

ঘোষণার সাড়ে চার ঘণ্টার মাথায় সারাদেশে চিকিৎসকদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।

চিকিৎসকদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাসে এই কর্মসূচি স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। ফলে দেশের সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় এখন সেবা পাওয়া যাবে।

আন্দোলনরত চিকিৎসকরা সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান।

রবিবার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলন স্থগিতের এ ঘোষণা আসে।

কর্মবিরতিতে যাওয়া চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। পরিচালকের কক্ষে চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে উপদেষ্টা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ।

সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আশ্বাস দিলে সময় বেঁধে দিয়ে কর্মবিরতি স্থগিত করেন চিকিৎসকরা।

আলোচনার পর কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন ডা. আব্দুল আহাদ।

তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে যখন সারাদেশে জরুরি সেবা চালুর জন্য নিরাপত্তা চাওয়া হয়, তখন তিনি শুধুমাত্র বিভাগীয় হাসপাতালগুলোতে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য জনবল রয়েছে বলে জানান। তাই বিভাগীয় হাসপাতালগুলোয় একজনের অনুপাতে একজন নিরাপত্তারক্ষী, আমি আবার বলছি একজন চিকিৎসকের সঙ্গে একজন সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্য; সেটা পুলিশ হতে পারে, সেটা আর্মি হতে পারে-ওয়ান ইসটু ওয়ান অনুপাতে সিকিউরিটি নিশ্চিত করা হবে যেসব হাপসাতালে, সেসব হাসপাতালে কেবলমাত্র জরুরি বিভাগের সেবা চালু থাকবে। কোনও ধরনের রুটিন সেবা, আউটডোর সেবা চালু থাকবে না।”

একটি হাসপাতালে যে কয়জন চিকিৎসক কর্মরত থাকবেন সেই অনুপাতে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বহাল করা হলেই কেবল সেবা চালু হবে বলেও জানান তিনি।

আব্দুল আহাদ বলেন, “যদি এখনি এটা নিশ্চিত করা হয়, তাহলে আমরা এখনি জরুরি সেবায় ফিরে যাব। এটা শুধুমাত্র আগামী ২৪ ঘণ্টার জন্য। এই সময়ের মধ্যে যদি অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে তা প্রকাশ করা না হয় তাহলে আগামীকাল রাত ৮টার পরে আবার এই শাটডাউন কর্মসূচি চলবে।

“আমি আরও বলতে চাই, আগামী সাতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে সব ধরনের আউটডোর এবং রুটিন সেবা বন্ধ থাকবে। এই সাতদিনের মধ্যে আমাদের যে দুটি দাবি ছিল সেগুলো মানতে হবে। সেগুলো হচ্ছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে স্বতন্ত্র স্বাস্থ্য পুলিশের নিয়োগ এবং এটা নিশ্চিত করা। সেইসঙ্গে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য চিকিৎসক সুরক্ষা আইন করা।”

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসব দাবি মেনে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা আউটডোর এবং রুটিন সেবায় ফিরে যাবেন বলে জানান তিনি। শর্তসাপেক্ষে কেবল জরুরি বিভাগের সেবা চালু থাকবে।

চিকিৎসকরা সেবা বন্ধ করতে পারেন কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমন রানা বলেন, “একজন চিকিৎসক হিসেবে সার্বক্ষণিক কেবল জরুরি সেবা না, সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আমরা কমিটেড।”

সম্প্রতি যে ছাত্র আন্দোলন হয়েছে তখন চিকিৎসকরা ৭২ ঘণ্টাও দাযিত্ব পালন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক চিকিৎসক আহতদের রক্তও দিয়েছেন।

সুমন রানা বলেন, “আমরা সেই ডাক্তার, এখনও আমরা সেবা দিতে চাই, কিন্তু আপনারা আমার কথা শোনেন, গতকাল রাতের একটা ঘটনা ইতিহাস ‘ব্রেক’ করেছে। একজন আহত রোগী হাসপাতালে ভর্তি, বাইরের থেকে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা এসেছে চাপাতি, রামদা নিয়ে তাকে খুন করার জন্য।

“ভর্তি রোগীকে খুন করা হয়েছে, এই ইতিহাস আপনারা আর কোথাও দেখাতে পারবেন? এমন অনিরাপত্তায়, অরক্ষিত অবস্থায় একজন চিকিৎসক কীভাবে সেবা দেবেন?”

সোহরাওয়ার্দী ও মুগদা হাসপাতালে হামলার ঘটনা তুলে এই চিকিৎসক বলেন, “চিকিৎসকদের নিরাপত্তা শুন্যের কোটায়। আগামীকাল রাত ৮ টার মধ্যে যদি সকল দোষীদের গ্রেপ্তার করে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন না করা হয়, সারাদেশে আবার সব ধরনের চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যাবে।”

দায়ীদের গ্রেপ্তারের পর স্বাস্থ্য পুলিশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের জন্য সাত দিন সময় দেওয়া হবে জানিয়ে নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর বলেন, সে পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে জরুরি সেবা চালু থাকবে।

নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিতসহ চার দফা দাবিতে দেশে সব চিকিৎসাকেন্দ্রে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ নামে এই কর্মসূচি চলাকালে বন্ধ ছিল সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা।

দুপুর ২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার আব্দুল আহাদ এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারসহ সব কিছুতেই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বহাল থাকবে।

তাদের ৪ দাবি হচ্ছে– অপরাধীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা; ঢামেকসহ সারাদেশের হাসপাতালে আর্মিসহ সিকিউরিটি ফোর্স নিযুক্ত করা, যারা ২৪ ঘণ্টা অস্ত্রসহ নিয়োজিত থাকবে; স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে স্বাস্থ্য পুলিশ নিয়োগ নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।

সেই ঘোষণার সাড়ে চার ঘণ্টার মাথায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে আপাতত কর্মবিরতি তুলে নেন চিকিৎসকরা। দাবি বাস্তবায়নে সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত সময়ে বেধে দিয়েছেন তারা। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে নতুন ঘোষণা দেবেন তারা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার রাতে তিন দফায় চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে রাতেই কাজ বন্ধ করে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। অন্য চিকিৎসকরাও তাদের কর্মবিরতিতে সংহতি জানালে রবিবার সকাল থেকে হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যায়।

হামলার বিষয় নিয়ে একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছে সকাল সন্ধ্যা। তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত তিনটি ঘটনা ঘটেছে। এমনকি হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে আরেক রোগীকে কুপিয়ে আহত করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। পরে সেই রোগীর মৃত্যু হলে, সেসময় থেকেই কাজ বন্ধ করে দেন চিকিৎসকরা।

রবিবার সকাল নাগাদ অন্য চিকিৎসকরাও তাদের সঙ্গে সংহতি জানান। ফলে সকাল থেকেই কার্যত হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে প্রতিবাদ হিসেবে চিকিৎসকরা তাদের ব্যক্তিগত চেম্বারও বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। চিকিৎসকদের সঙ্গে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন নার্সসহ অন্যরাও।

এছাড়া সকালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডেও রোগীর মৃত্যুর জের ধরে চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালানো হয়। এসময় বেশ কয়েকজন চিকিৎসক আহত হন, যার মধ্যে দুইজন নারী চিকিৎসকও রয়েছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত