Beta
বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

সন্তানের প্রতি কেমন হবেন? ‘লাইটহাউস প্যারেন্টিং’ দিচ্ছে উত্তর

ভালো মা-বাবা হতে সন্তানের জন্য বেছে নিন 'লাইটহাউস প্যারেন্টিং’
[publishpress_authors_box]

অভিভাবকত্ব মানে সন্তানের যত্নআত্তির দায়িত্ব নেয়া। এই দায়িত্ব নেয়া খুব সহজ নয়। সন্তানের সুরক্ষা ও সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তাদের কতটুকু চোখে চোখে রাখবেন, কখন-কোথায় বাধা দেবেন কিংবা কখন-কোথায় ছাড় দেবেন তা নিয়ে একেক বাবা-মা একেক রকম পন্থা বেছে নেন। কেউ অতিরিক্ত নজরদারিতে রাখেন। আবার কেউ সন্তানের অনেক বিষয়ে সঠিক ভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন না।

বাবা-মা আসলে সন্তানের প্রতি কেমন হবেন?

এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে লাইটহাউস প্যারেন্টিং।

মনোবিদরা বলছেন, লাইটহাউস প্যারেন্টিং থেকে বরং সন্তান আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে বেড়ে উঠবে; নিজের ভুল থেকে শিখবে, জীবনযুদ্ধ মোকাবিলার দক্ষতা বাড়বে। সব মিলিয়ে সন্তান ও বাবা-মায়ের মাঝে সম্পর্কের সেতুবন্ধন হবে দৃঢ়।

প্যারেন্টিং মানে কী

কর্মক্ষেত্রে যতই ব্যস্ত দিন কাটাতে হোক অথবা ব্যবসার কাজে কপাল চাপড়ানোর দিন দেখার অভিজ্ঞতা হোক না কেন, অভিভাবক হওয়ার ঝক্কি সব কিছুকে ছাড়িয়ে যায়।

অভিভাবক হওয়া মানে কখনও নিজের ইন্দ্রিয়ের উপর ভরসা করে চলতে হবে, কখনও অন্তর্দৃষ্টি কাজে লাগাতে হবে, আবার কখনও এক রোখার মতো সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

যদিও বাবা-মা হওয়ার বড় শর্ত হচ্ছে, ধৈর্য ধরার পাশাপাশি পদে পদে শেখা।

সহজ কথায়, প্যারেন্টিং মানে সন্তানকে যত্ন করা, সুরক্ষা দেয়া, শিশুকাল থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত পথ প্রদর্শন করা। এরমধ্যে দিয়েই সন্তানের শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক এবং শিক্ষার বিকাশ হয়।

প্যারেন্টিং মানে শুধু জন্মসূত্রে বাবা-মা হয়ে সন্তাদের দায়িত্ব নেয়াকেই বোঝায় না। যারা সন্তানের পরিচর্চা করেন, দত্তক নেন তাদের বেলাতেও এসব রীতি প্রযোজ্য।

লাইটহাউস প্যারেন্টিং যেভাবে এলো

চিলড্রেনস হসপিটাল অব ফিলাডেলফিয়ার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ কেন গিনসবার্গ ২০১৫ সালে ‘রাইজিং কিডস টু থ্রাইভ ব্যালেন্সিং লাভ উইথ এক্সপেকটেশনস অ্যান্ড প্রোটেকশন’ বইতে লাইটহাউস প্যারেন্টিং নিয়ে লিখেছেন।

সেন্টার ফর প্যারেন্ট অ্যান্ড টিন কমিউনিকেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রোগ্রাম পরিচালক কেন গিনসবার্গ হাফপোস্টের কাছে বলেন, “এই লাইটহাউস প্যারেন্টিং টার্ম আসলে রূপক অর্থে বলা হয়েছে।

“তরুণদের দরকার হলো একটু পরামর্শ এবং একটু সুরক্ষা অনুভব করা। সন্তানরা নিজের মতো করে বিশ্ব চড়ে বেড়াবে পারবে এমন আস্থা রাখতে হবে। আবার একই সঙ্গে অভিভাবক হিসাবে তাদের বিপদে পাশে থাকতেও হবে।”

অর্থনীতিবিদ এমিলি ওস্টার প্যারেন্টিং নিয়েও লেখালেখি করেন।

সিবিএস মর্নিং প্লাসকে তিনি বললেন, “বাবা-মা মানে হলো তারা বাতিঘরের ভূমিকায় রয়েছেন। তারাই পথ দেখাবে, তারাই বলে দেবে কোথায় হোঁচট খেতে পারে সন্তান।

“তবে এসবের সঙ্গে সঙ্গে সন্তানকে কিছুটা স্বাধীনতাও দিতে হবে। বাবা-মা সন্তানের জাহাজটি চালনা করছেন, এমন হলে বুঝতে হবে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ দেখানো হচ্ছে। আবার সন্তান পাথরে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছে, এর অর্থ বাবা-মা দেখভালে গাফিলতি করছেন। অভিভাবকত্ব হলো এই দুইয়ের মাঝামাঝি থাকা।”

সন্তানের জন্য বাতিঘর হয়ে উঠতে বাবা-মাকে কী করতে হবে তাহলে?

মনোবিদ কারা দামিয়ানো গুডউইন হাফপোস্টের কাছে বলেন, “বিপদের সমূহ সম্ভাবনার কথা সন্তানকে অবহিত করুন। তবে সন্তানকে নিজের নৌকা নিজেই চালাতে দিন।

“সন্তানের হোমওয়ার্কের খাতা নিজেই বয়ে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার চেয়ে হোমওয়ার্ক করে স্কুলে ঠিকমত নিয়ে যাওয়ার মতো দায়িত্ব শেখান তাকে।”

“ভাই-বোনের মাঝে দ্বন্দ্বে বাবা-মায়ের সবসময় রেফারির ভূমিকায় নামা ঠিক নয়। বরং তাদের নিজেদের মধ্যে আলাপ করে বিবাদ মিটিয়ে নেয়ার মতো মনোভাব গড়ে তোলার সুযোগ দিতে হবে।”

লাইটহাউস প্যারেন্টিং বাড়াবে সন্তানের আত্মবিশ্বাস

শিশুদের পদে পদে হাত ধরে চলা জরুরি হলেও, কিশোর-তরুণরা পৃথিবীকে জানতে চায় নিজের মতো করে। বাবা-মা এখানে উৎসাহদাতার ভূমিকায় কাজ করবে, যেন সন্তানের ইচ্ছায় হস্তক্ষেপ না হয়।

”সন্তানের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগাতে হবে যে, বাবা-মা তাদের পাশেই আছে। সন্তানকে ভুল করতে দিতে হবে, সংশোধন করারও সুযোগ দিতে হবে”, পরামর্শ দিয়ে বললেন গুডউইন।

ধরা যাক, সন্তান স্কুলের হোমওয়ার্ক সময় মতো সেরে নিচ্ছে না। এ সময় তার হয়ে হোমওয়ার্ক করে দেয়া থেকে বিরত থাকুন। সন্তানকে বুঝতে দিন, হোমওয়ার্ক না করে গেলে স্কুলে কী ঘটতে পারে; যেন এই অভিজ্ঞতা থেকে সন্তান নিজেই উদ্বুদ্ধ হয় সময় মতো হোমওয়ার্ক জমা দিতে।

গিনসবার্গ বলছেন, কিশোর বয়সী সন্তানরা ভালোবাসা-যত্ন চায়

”তবে কেউ তাদের হুকুম করুক বা আঙ্গুলের ইশারায় চলতে বাধ্যতে করুক এমন আচরণ তারা মেনে নিতে পারে না। ওরা শুধু একজন পথ প্রদর্শকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।”

লাইটহাউস প্যারেন্টিং যেভাবে করবেন

অভিভাবক হিসাবে পথ প্রদর্শক হয়ে উঠতে হবে। তবে বাবা-মায়ের নিজের কর্তৃত্বেরও সীমা মেনে সন্তানকে নিজের দায়িত্ব নিতে শেখার পরিবেশ দিতে হবে।

সন্তান কখনও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়লে তার পাশে থাকতে হবে। সন্তানের মনোবল বাড়াতে হবে যেন সে নিজের সমস্যা নিজেই মেটাতে পারে।

সন্তানের সাফল্য তার সঙ্গে উদযাপন করতে হবে বাবা-মাকেও।

সন্তানের ব্যর্থতায় বাবা-মায়ের গাল-মন্দ করা ঠিক নয়। বরং এখান থেকে শেখার কী আছে তা শেখায় সহায়তা করুন সন্তানকে। এতে সন্তানের মানসিক ভাবে দৃঢ় এবং সুদূরপ্রসারী চিন্তায় সমর্থ হয়।

সন্তানের সঙ্গে মনের সেতুবন্ধনে মজবুত করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে অভিভাবকের। সন্তানের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাবা-মায়ের জন্য এসব মন্ত্রই বাতলে দিচ্ছে লাইটহাউস প্যারেন্টিং।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত