খুব খারাপ সময়ে কি ঘন ঘন খেলে অস্থিরতা কমে আসে? যেমন ধরা যাক, সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটার পর মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় অনেকের।
এমনও হতে পারে, কখন খুব খেতে ইচ্ছে করছে; আবার কখনও খাওয়ার ইচ্ছে উবে যাচ্ছে নিজেরই অজান্তে।
অনেকে মনে করেন, নারীর প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (পিএমএস) দেখা দিলে যখন-তখন মুখরোচক খাওয়ার ইচ্ছে বেড়ে যায়। আবার গর্ভকালে হুটহাট করে বিশেষ কোনো খাবার না খাওয়া পর্যন্ত শান্ত হন না অনেকে।
ইন্ডিয়া টুডে বলছে, এমন ঘটনা নারীর সঙ্গেই ঘটে তা নয়; পুরুষের বেলাতেও এ ধরনের আচরণ দেখা যায়।
হুটহাট করে কিছু খাওয়ার ইচ্ছে আসলে কেন হয়? মানসিক কোনো কারণ কী এর পেছনে কাজ করে?
“এই যে খাবারের তীব্র আকাঙ্ক্ষা তার পেছনে কাজ করে মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেম; যা সাধারণত ডোপামিন হরমোন নিঃসরণ করে”, বললেন ড. শম্ভভী জৈমন।
চারটি হ্যাপি হরমোনের একটি হলো এই ডোপামিন।
গুরুগ্রামের ফোর্টিস মেমোরিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শদাতা জৈমন বললেন, মিষ্টি, নোনতা ও চর্বি জাতীয় খাবার খেলে ডোপামিনের উদ্দীপনা ঘটে; তাতে আমাদের মাঝে আনন্দদায়ক অনুভূতি দেখা দেয়। আর এতে ওই খাবারের প্রতি আরও ঝুঁকে পড়ি আমরা।
এভাবে চলতে থাকা মানে মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেম এতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এরপর মানসিক চাপ, হরমোনের ওঠানামা এবং পুষ্টির অভাবেও সেসব খাবারের ঝোঁক চাঙ্গা হয়ে ওঠে হরহামেশাই।
আহমেদাবাগের একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. সার্থক দাভে ব্যাখ্যা করে বলেন, ডোপাপিন হরমোন পরিচালিত এই খাবারের আকাঙ্ক্ষা স্বাদ, গন্ধ ও পরিবেশনা থেকেও প্রভাবিত হয়।
যেমন গাসটেটোরি বা স্বাদজনিত ক্ষেত্রে, কোনো খাবারের স্বাদ জিভে লেগে আছে এমন স্মৃতি তাড়িত করতে পারে।
বিশেষ করে সোশাল মিডিয়াতে খাবারের ছবি-ভিডিও দেখতে দেখতে সেসব খাওয়ার ইচ্ছে আরও বেড়ে যায় অনেকেরই।
রেস্তোরাঁর পাশ দিয়ে গেলে, পাশের বাড়ির রান্নাঘর থেকে অথবা কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের টেবিল থেকে খাবারের সুগন্ধ ভেসে এলে অনেকের খিদে চাঙ্গা হয়ে ওঠে; একে অলফ্যাক্টরি ক্রেভিং বলে।
ড. দাভে বলেন, কারো ঘন ঘন খাওয়ার বাসনা আসলে নির্ভর করে তার মানসিক অবস্থার উপর।
“অনেক সময় মন খুব ভালো থাকলেই বরং খাওয়ার ইচ্ছে বেড়ে যায়। কারণ অস্থিরতা বা অবসাদের সময় ডোপামিন নিঃসরণ কমে আসে। তখন মজার কিছু খেলেও ডোপামিনের প্রভাব দেখা যায় না।”
এই হিসাবে এটা-সেটা খাওয়ার খিদে একভাবে আনন্দে থাকারই লক্ষণ।
কিন্তু এর অন্যদিকও আছে; ওই ব্যক্তি হয়ত অপরিমিত খাওয়ার রোগে ভুগছেন। আর এমন সমস্যাকে বলে ’বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডার’।
আর মন খারাপের দিনে বেশি খাওয়ার অভ্যাসকে বলে ‘ইমোশনাল ইটিং’।
ইচ্ছেমত খাওয়ার অভ্যাস থেকে মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যাও হয়।
দিল্লি শহরে স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের সাইকিয়াট্রিক বিভাগের ভাইস চেয়ারপারসন ড. রাজিব মেহতা উদাহরণ টেনে বললেন, ভীষণ চাপের মধ্যে থাকলে কারো কারো চকলেট, স্ন্যাকস খাওয়ার আগ্রহ বেড়ে যায়।
যেহেতু বেশি খাওয়ার অভ্যাসের কারণে স্থূলতা দেখা দেয়, তাতে আবার অনেকের কাছে হাসির পাত্র হতে হয়।
এসব কারণে এক সময় অনেকে লজ্জিত হন এবং নিজের কাছে নিজেকে অপরাধীও মনে করেন অনেকে, বললেন ড. জৈমন।
হুটহাট খিদে মেটানোর অভ্যাসে লাগাম টানা যায় কীভাবে?
যদি অসময়ে ও বেশি খাওয়ার অভ্যাস থেকে নিজে সরিয়ে রাখা যায় তারমানে নিজের উপর দারুণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আপনার।
মনে রাখতে হবে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে সবসময় বেশি বেশি খাওয়া কোনোভাবেই ভালো উপায় নয়, বললেন ড. মেহতা।
খেয়াল করে দেখতে হবে, কোনটি আসল খিদে আর কোনটি অস্থিরতা থেকে খিদে বলে মনে হচ্ছে। এতেই আসলে নিজের খাওয়ার চাহিদাকে পরিমিত করে আনা যাবে।
ড. ভাবনা গার্গ পরামর্শ হিসাবে বলছেন, সব সময় পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। খাবারে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি, ফাইবার এবং জটিল কার্ব থাকা চাই। এতে করে শরীরে শর্করার মাত্রায় ভারসাম্য থাকবে এবং হুটহাট করে খিদে অনুভব হবে না।
সময় মত খেয়ে নিলে অসময়ে এটাসেটা খাওয়ার চাহিদা কমে আসে। ঘুম কম হলেও খিদে বাড়তে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। অবসাদ ও মানসিক চাপ কমাতে হালকা শরীরচর্চা, মেডিটেশন খুবই কাজের।