পারলেন না কমলা হ্যারিস; পারলে ইতিহাস হতো। যুক্তরাষ্ট্র পেত প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। কিন্তু বিজয়ী হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই জয়ও ইতিহাসের অংশ হয়ে গেল, তবে নেতিবাচকভাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দুই-দুইবার অভিশংসিত হওয়ার পরও পুনর্বার প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন তিনি। ফৌজদারি মামলায় দোষি সাব্যস্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট হওয়াও দেশটির ইতিহাসে এই প্রথম। দুই মিলিয়ে কলঙ্কের দাগ নিয়েই ট্রাম্প চার বছর পর ফিরছেন হোয়াইট হাউসে।
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জনমত জরিপগুলো হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছিল। দেশটির নাগরিকদেরও পক্ষেও বোঝা মুশকিল হয়ে উঠেছিল, কে হবেন তাদের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট।
মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ শুরুর পরও সেই অনিশ্চয়তা ছিল; যদিও দেশটির ১৬ কোটি ভোটারের প্রায় অর্ধেকের দেওয়া আগাম ভোটে কমলার পাল্লা ভারী হওয়ার খবরই এসেছিল। কিন্তু গণনা শেষে দেখা যাচ্ছে ট্রাম্পের পাল্লাই ভারী হচ্ছে।
বুধবার নাগাদ যে ফলাফল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ইলেকটোরাল কলেজের ২৭০টি ভোটের বেশি পেয়ে গেছেন ট্রাম্প।
বিবিসি দেখাচ্ছে, ট্রাম্প ২৭৯টি ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত করে ফেলেছেন, কমলা পেয়েছেন ২২৩টি। সিএনএনের টালিতে সংখ্যাটি দেখাচ্ছে ট্রাম্পের ২৭৬, কমলার ২২৩। ফক্স নিউজ দেখাচ্ছে, ট্রাম্প পেয়েছেন ২৭৭টি, কমলা পেয়েছেন ২২৬টি।
দেশটির ৫০টি রাজ্য এবং ওয়াশিংটন ডিসি মিলিয়ে ইলেকটোরাল কলেজে মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। তার মধ্যে ২৭০টি পেলেই প্রেসিডেন্ট হওয়া নিশ্চিত।
ফলে আরও কয়েকটি রাজ্যের ফল বাকি থাকলেও ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে ফেরার পথে আর কোনও বাধা রইল না। এখন চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পর আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন তিনি।
কমলা হ্যারিস এখনও হার স্বীকার করেননি; যদিও তার দল ডেমক্রেট শিবিরে হতাশা নেমে এসেছে। ভোটের রাতে তার বক্তব্য দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা দিচ্ছেন না। পূর্ণাঙ্গ ফল না আসা পর্যন্ত তিনি দেখতে চাইছেন বলে তার প্রচার শিবিরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেছে রিপাবলিকান শিবির। জয় নিশ্চিত হওয়ার আগেই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করে ট্রাম্প বলেছেন, “আমেরিকার জনগণের জন্য এটা এক দুর্দান্ত বিজয়। আমাদের আবার আমেরিকাকে মহিমান্বিত করার সুযোগ করে দেবে এ বিজয়।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট যিনি এক মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর দ্বিতীয়বার নির্বাচনে হেরে তৃতীয়বার নির্বাচন করে হোয়াইট হাউসে ফিরছেন।
১৩০ বছর আগে মাত্র আর একবারই যুক্তরাষ্ট্রে এমন ঘটনা ঘটেছিল। ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের ঝুলিতেই এতদিন এই রেকর্ডটি ছিল। ক্লিভল্যান্ড প্রথমবার ১৮৮৫-১৮৮৯ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের (২২তম) প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তবে দ্বিতীয়বার তিনি পরাজিত হন। এরপর ১৮৯৩ সালে টানা তৃতীয়বার নির্বাচন করে জয়ী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ২৪তম প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।
শুধু যে ইলেকটোরাল কলেজে জয়ী হচ্ছেন ট্রাম্প, তাই নয়, পপুলার ভোটেও তিনি এগিয়ে রয়েছেন। সিএনএন জানিয়েছে, ট্রাম্প পেয়েছেন ৭ কোটি ৮ লাখ ৭৯১ ভোট; অন্যদিকে কমলার ভোট সংখ্যা ৬ কোটি ৫৮ লাখ ২৭ হাজার ২৭৮ ভোট।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি কংগ্রেসের সেনেটের ৩৪টি আসনেও ভোটগ্রহণ হয় মঙ্গলবার। সেখানেও রিপাবলিকানদের জয়জয়কার। ১০০ আসনের সেনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্প আগের চেয়ে শক্তিমান হয়েই ক্ষমতা চর্চার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন।
‘কাম ব্যাক’
ব্যবসায়ী ট্রাম্প ১৯৮৮ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশের (সিনিয়র বুশ) রানিংমেট হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বুশ তার অনুরোধকে ‘অদ্ভুত এবং অবিশ্বাস্য’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু মনে স্বপ্ন রেখে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ২০১৬ সালে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন নিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন তিনি। সেবার তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটন।
সেবার জনমত জরিপগুলো ট্রাম্পের বিপক্ষেই ছিল। কিন্তু ভোটের মাঠে বাজিমাত করেন ট্রাম্পই। পপুলার ভোটে হারালেও ইলেকটোরাল ভোটে জিতে হোয়াইট হাউসে যান তিনি।
নিজের প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে পুরো বিশ্বকে মাতিয়ে রেখেছিলেন। জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘ভুয়া’ আখ্যায়িত করে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিসহ অন্তত ১০০টি জলবায়ু ও বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন তিনি। ৭টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। অভিবাসন সংক্রান্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেন।
ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধও শুরু করেন এবং ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে তিনবার দেখা করলেও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে কোনও অগ্রগতি দেখাতে পারেননি তিনি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়।
কোভিড-১৯ মহামারী ঠেকাতে ট্রাম্প ধীরে ধীরে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকেও বিপদে ফেলেছিলেন। বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেক সুপারিশ উপেক্ষা বা বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। অপ্রমাণিত চিকিৎসা পদ্ধতির প্রচার করে ভুল তথ্যও ছড়িয়েছিলেন। টিকা না নেওয়ায় অবশেষে তিনি নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন।
নানা ঘটনায় বিতর্কিত আচরণের কারণে সেই মেয়াদে কংগ্রেসে দুই বার অভিশংসিত হয়েছিলেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্প তৃতীয় প্রেসিডেন্ট, যাকে অভিশংসিত হতে হয়েছে এবং একমাত্র প্রেসিডেন্ট যাকে দুবার অভিশংসিত হতে হয়েছে; যদিও তিনি দুবারই পার পেয়ে যান।
২০১৯ সালে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তিনি ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে ‘নেতিবাচক কোনও বিষয়’ খুঁজে বের করার জন্য ইউক্রেন সরকারকে চাপ দিয়েছিলেন। এজন্য ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি পরিষদে তাকে অভিশংসিত করা হলেও রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন সেনেটে তিনি খালাস পেয়ে যান।
প্রথম মেয়াদ শেষে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প ডেমোক্রেট প্রার্থী বাইডেনের কাছে হেরে যান। কিন্তু ট্রাম্প তার এই পরাজয় মেনে নিতে পারেননি। এমনকি তিনি তার সমর্থকদের পার্লামেন্ট ভবনে হামলা করতেও উস্কে দেন। এতে ট্রাম্পকে দ্বিতীয়বার অভিশংসিত হতে হয়। তবে এবারও তাকে বেকসুর খালাস দেয় সেনেট। এই ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এখনও দুটো ফৌজদারি মামলা চলছে।
পার্লামেন্ট ভবনে হামলার পর ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সেখানেই শেষ বলে ধারণা করা হয়েছিল। দলের অর্থদাতা এবং শীর্ষ সমর্থকদের অনেকে আর কখনও তাকে সমর্থন করবেন না বলেও জানিয়েছিল। এমনকি তার ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে অস্বীকার করেছিল।
ট্রাম্পের সমালোচকরা তার অযোগ্যতার প্রমাণ হিসাবে যেসব বিষয় সামনে এনেছিল, তার মধ্যে রয়েছে— প্রথমবার প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে দুবার অভিশংসন প্রস্তাব, রাজ্য ও ফেডারেল স্তরে একাধিক অপরাধমূলক অভিযোগ এবং ফৌজদারি অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া।
গণতন্ত্রের জন্য হুমকি ছাড়াও ট্রাম্প নারীবিদ্বেষী, বর্ণবাদী, সিরিয়াল মিথ্যাবাদী এবং ধর্ষক তকমাও পেয়েছিলেন।
তবে তার পেছনে বিশাল ভক্তবাহিনী থাকায় রিপাবলিকান পার্টিতে ট্রাম্পের ব্যাপক প্রভাব বজায় থাকে। তার ওপর ভর করে টানা তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে রিপাবলিকানদের মনোনয়ন জিতে নেন তিনি। নির্বাচনের আগে ট্রাম্প এমন ঘোষণাও দিয়েছিলেন, ঈশ্বর তাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য রাখাল হিসাবে পাঠিয়েছেন।
এবার ভোটের প্রচারের সময় দুই বার আক্রমণের শিকার হন ট্রাম্প। একবার হামলাকারীর গুলি তার কান ফুটো করেও বেরিয়েছিল।
মঙ্গলবার রাতে বিজয় ভাষণে সেই প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প বলেন, তাকে (স্রষ্টার) বাঁচিয়ে রাখার এটিই কারণ ছিল।
ট্রাম্পের এই ‘কাম ব্যাক’ নিয়ে বিবিসির উত্তর আমেরিকা প্রতিনিধি অ্যান্থনি জার্চার লিখেছেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও করে দেখালেন। তার এই বিজয় অসাধারণ প্রত্যাবর্তনের বড় উদাহরণ।
“জরিপ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে দুটি বিষয়ে তার প্রতিম্রুতিকে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ গুরুত্ব দিয়েছে। তা হলো অভিবাসন ও অর্থনীতি।”
এবারের নির্বাচনে দুই প্রার্থীর প্রচারে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির চেয়ে অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। কমলা হ্যারিস জোর দিচ্ছিলেন জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট মোকাবেলা ও গর্ভপাতের অধিকারে। অন্যদিকে ট্রাম্প গুরুত্ব দিচ্ছেলেন অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যস্ফীতিতে লাগাম দেওয়ায়। ট্রাম্প এবার স্লোগান তুলেছিলেন ‘মেক আমেরিকা অ্যাফোর্ডেবল এগেইন’।
৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী এবার কমলা ছিলেন না। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনই প্রার্থী হয়ে প্রচার শুরু করেছিলেন। কিন্তু মাঝপথে তার শারীরিক সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্নে উঠলে চাপের মুখে ভোটের ময়দান ছেড়ে দিতে হয় বাইডেনকে।
তখন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন ৬০ বছর বয়সী কমলা। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে যিনি আগেই ইতিহাসে নাম লেখান।
ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাইকেল পেন্স। এবার তিনি রানিংমেট হিসাবে বেছে নেন ওহাইওর সেনেটর জেডি ভান্সকে।
‘প্লেবয় প্রেসিডেন্ট’
রাজনীতিতে আসার ও প্রেসিডেন্ট হওয়ার অনেক আগে থেকেই ট্রাম্প তারা নানা কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যের জন্য আলোচিত ও বিতর্কিত। ধনকুবেরের সন্তান ট্রাম্প জাঁকালো জীবনযাপনের জন্যও আলোচিত ছিলেন। সিনেমায়ও মুখ দেখিয়েছিলেন তিনি।
১৯৪৬ সালের ১৪ জুন জার্মান ও স্কটিশ বংশোদ্ভুত আমেরিকান পরিবারে জন্ম ট্রাম্পের। তার বাবা ফ্রেড ট্রাম্প ছিেলন আবাসন ব্যবসায়ী। ব্রুকলিন ও কুইন্সজুড়ে ছিল তার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য।
উত্তরাধিকার সূত্রে ধনী ট্রাম্প শৈশবে বেশ দুষ্টু ছিলেন। সেজন্য শৃঙ্খলা শেখাতে ১৩ বছর বয়সেই তাকে সামরিক একাডেমিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নিউ ইয়র্ক মিলিটারি একাডেমি থেকে হাইস্কুল শেষ করার পর ট্রাম্প দুই বছরের জন্য ফোর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটিতে পড়েন। তারপর তিনি ভর্তি হন পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটিতে; সেখান থেকে তিনি ১৯৬৮ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি নেন।
পড়াশোনা শেষে ট্রাম্প প্রথমে কিছুদিন নিজে ব্যবসা করে এরপর বাবার কোম্পানিতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে ট্রাম্প তার বাবার হাত থেকে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নেন এবং নতুন নাম রাখেন ট্রাম্প অর্গানাইজেশন। তার বাবা ১৯৯৯ সালে মারা যান।
ট্রাম্পের কর্মজীবন ব্র্যান্ডিংয়ের দক্ষতা এবং বিভিন্ন হাই-প্রোফাইল চুক্তির জন্য নিরলস সাধনায় পরিপূর্ণ। তার অধীনে তাদের পারিবারিক ব্যবসা ব্রুকলিন ও কুইন্সের আবাসিক প্রকল্প থেকে চাকচিক্যময় ম্যানহাটনে প্রসারিত হয়।
এই সময়েই বিখ্যাত ফিফথ এভিনিউতে ‘ট্রাম্প টাওয়ার’ তৈরি করেন ট্রাম্প, যা তার সবচেয়ে নামি-দামি সম্পত্তির মধ্যে একটি এবং বহু বছর ধরে তার বাসস্থান ও কার্যালয়।
গত শতকের ৮০ এর দশকে ট্রাম্প ক্যাসিনো, কনডোমিনিয়াম বা কন্ডো (এমন আবাসন প্রকল্প যেখানে পৃথক মালিকানাধীন আবাসিক ইউনিট রয়েছে), গলফ কোর্স ও হোটেল ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন।
অল্প সময়ের মধ্যেই ট্রাম্প নিউ ইয়র্ক থেকে শুরু করে শিকাগো ও লাস ভেগাস এবং ভারত, তুরস্ক ও ফিলিপাইন পর্যন্ত বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।
এরপর ট্রাম্প আসেন বিনোদন জগতে। তার খ্যাতি তৈরি হয় প্রথমে মিস ইউনিভার্স, মিস ইউএসএ এবং মিস টিন ইউএসএ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার আয়োজক সংস্থার মালিক হিসাবে। তারপর এনবিসি রিয়েলিটি শো ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’র মাধ্যমে তিনি টেলিভিশন পর্দার একজন পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন।
ট্রাম্প ১৯৮৮ সালেই বিলিয়ন ডলারের মালিক তথা শতকোটিপতি হয়েছিলেন। ফোর্বসের রিয়েলটাইম হিসাব অনুযায়ী, ট্রাম্পের মোট সম্পদের মূল্য এখন ৬ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে তিনি এখন বিশ্বের ৫৪৯তম ধনী ব্যক্তি।
তিনটি বিয়েসহ ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জীবনও তার পেশাগত জীবনের মতোই গণআলোচনার বিষয়। একাধিকবার যৌন নির্যাতন ও বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এবারে নির্বাচনের আগেও তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের আগের এক ঘটনা প্রকাশ্যে আনেন এক মডেল।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্পই প্রথম প্রেসিডেন্ট যাকে ফৌজদারি অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
১৯৮০ সালে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প রাজনীতিকে ‘মিন লাইফ’ (খুবই নিচুস্তরের জীবন) হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন; বলেছিলেন, ‘সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিরা’ রাজনীতির পরিবর্তে ব্যবসার জগতকে বেছে নেন।
তবে সেই ট্রাম্পই ১৯৮৭ সালে তিনটি প্রধান সংবাদপত্রে পূর্ণ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি এবং ফেডারেল বাজেট ঘাটতি দূর করার বিষয়ে তার মতামত প্রকাশ করে রাজনীতিতে যোগ দেন।
নারীদের সঙ্গে সম্পর্কের মতোই ট্রাম্প একটানা বেশিদিন কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শে স্থির থাকতে পারেননি। অন্তত পাঁচবার তিনি রাজনৈতিক দল বদল করে ২০১২ সাল থেকে রিপাবলিকান পার্টিতে রয়েছেন।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং বন্দুকের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র নীতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা সবকিছুকেই হুমকির মুখে ফেলবে।
নির্বাচনের কয়েক মাস আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক রক্ষণশীল থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হেরিটেজ ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্রকে খোলনলচে বদলে ফেলার জন্য প্রকল্প-২০২৫ নামে ডানপন্থী শাসন মডেলের একটি ব্লুপ্রিন্টও তৈরি করে। এতে যুক্তরাষ্ট্রকে খোল নলচে বদলে ফেলার এক গভীর পরিকল্পনা করা হয়েছে।