বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপলের সঙ্গে দেখা করেছেন জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দেওয়া আর্চার রোমান সানা। রবিবার টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে সেই আলোচনায় রোমানকে সব অভিযোগ তুলে নিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেছেন চপল। তবে রোমান সানার স্পষ্ট কথা, “আমি কোনও অপরাধ করিনি। আমি ক্ষমা চাইতে পারব না।”
বাংলাদেশ আর্চারির পোস্টারবয় রোমান সানা। আর্চারিতে যত আন্তর্জাতিক সাফল্য এসেছে এর বেশিরভাগই রোমানের হাত ধরেই। ২০১৯ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জেতেন রোমান। টোকিও অলিম্পিকে সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়েছেন। বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপেও আন্তর্জাতিক পদক জিতেছেন। যদিও বিপরীতে তেমন কিছুই পাননি।
অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সংবাদ মাধ্যমে নিজের কষ্টের কথা তুলে ধরেন রোমান। পদকজয়ী হয়েও প্রাপ্য সম্মান, সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ তোলেন। অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ফেডারেশনকেও চিঠি দিয়েছিলেন রোমান। তবে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে কোনও প্রকার যোগাযোগ না করায় সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। রোমানের এই ঘোষণায় তোলপাড় শুরু হয় গোটা ক্রীড়াঙ্গনে। এ নিয়ে মুখ খোলেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চপল। পাল্টা অভিযোগ রোমানের বিরুদ্ধে তোলেন তিনি। রোমানকে মানসিক রোগী বলে আখ্যা দেন। আরচারি খেলে কোটিপতি হয়েছেন রোমান সানা, খুলনায় নিজ বাড়িতে পাঁচতলা বাড়ি তুলেছেন, পদক জয়ের পর আকর্ষণীয় অর্থ পুরস্কার দেওয়ার মতো অনেক কথাই বলেছেন চপল।
জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ ও দিয়া সিদ্দিকীর উপস্থিতিতে কথা হয় দু জনের মধ্যে। সেখানেই চপল রোমানকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে খেলা শুরু করতে বলেন। রোমান অবশ্য বলেছেন, ক্ষমা তিনি চাইবেন না।
তিনি বলেন, “আমি তো কোনও অপরাধ করিনি। ক্ষমা কেন চাইবো? আমি তো ব্যক্তিগতভাবে কারও বিরুদ্ধে কিছু বলিনি। কারো সঙ্গে আমার কোন সমস্যাও নেই। আমি একটা পরিবর্তনের কথা বলেছি। যাতে কেবল আমি নই সবাই উপকৃত হয়। আর ক্ষমা চেয়ে জাতীয় দলে ফেরার আর কোনও ইচ্ছা নেই আমার।”
নিজেকে সুস্থ দাবী করে রোমান চপলের মানসিক রোগী দাবীর তীব্র প্রতিবাদ করেছেন, ‘দেখুন, বিশ্বের সব দেশের আরচারি দলের সঙ্গে একজন মনোবিদ থাকেন। পাশের দেশ ভারতেরও আছে, যুক্তরাষ্ট্রের আছে। অন্যদের মত আমিও দুনিয়াজুড়ে সব আরচার মানসিক রোগী। আমার রাগ একটু বেশি। এজন্য একবার মনোবিদের কাছে গিয়েছিলাম। সেটা নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। মনোবিদের মেডিক্যাল সার্টিফিকেট বিশ্ব আরচারিতে পাঠাতে হয়েছে। তাই বলে আমি মানসিক রোগী হয়ে গেলাম?’
খুলনায় পাঁচ তলা বাড়ির যে কথা চপল বলেছেন সেটা বানোয়াট দাবী করে রোমান বলেন, ‘প্রথমত স্যার বলেছেন আমি খুলনা শহরে পাঁচতলা বাড়ির মালিক। এটা মিথ্যা কথা। খুলনার রূপসায় জয়পুরে রোমানের বাড়ি বললে সবাই দেখিয়ে দেবে। আমি আর আমার বাবা মিলে পৈত্রিক সম্পত্তিতে কোনওমতে এক তলা একটা বাড়ির কাজে হাত দিয়েছি। অর্থের অভাবে সেটাও শেষ করতে পারিনি। উনি কোথা থেকে আমার পাঁচ তলা বাড়ি পেলেন সেটা উনিই বলতে পারবেন।’
রোমান যোগ করেন, “স্যার একজন শ্রদ্ধেয় মানুষ। উনার বুঝে শুনে কথা বলা উচিত। আমি না হয় ছোট মানুষ। না বুঝে অনেক কিছু বলতে পারি। করতে পারি। কিন্তু স্যার তো বয়স্ক একজন ব্যক্তি। উনি কিভাবে এটা বলতে পারেন।”
সতীর্থদের মানসিক অত্যাচার করতেন রোমান, এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “এর চেয়ে দুঃখের কোনও কথা হতে পারে না। এসব কথা উনার ভেবে চিন্তে বলা উচিত। এমন বড় খেলোয়াড় যদি আরেকজন খেলোয়াড়ের খারাপ চায়, এটা কখনও কি সম্ভব? আমি যদি কখনও হেরেও যেতাম, তখন অন্যদের পেছনে দাঁড়িয়ে সমর্থন, পরামর্শ দিতাম। আর এগুলো সবই কোচ জানেন। উনারা তো মাঠে থাকেন না। কিভাবে এগুলো জানবেন। উনারা মাঠে আসেন খেলার পরে।”