কৃষকের কাছে সার সরবরাহ কার্যক্রম কোনোভাবেই যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলেছেন কৃষিমন্ত্রী ড.মো. আব্দুস শহীদ। সার কেনার জন্য বরাদ্দ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা যেন সময়ক্ষেপণ না করেন সে বিষয়েও সতর্ক করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, “সার কেনার জন্য বরাদ্দ নিয়ে বসে থাকা চলবে না। সার না আসা মানে কৃষক আটকা পড়বেন। আর কৃষক আটকা পড়া মনে উৎপাদন কমে যাওয়া, উৎপাদন বন্ধ হওয়া।”
রবিবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) ২০২১ সম্মাননা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
বৈশ্বিক অর্থনীতির কারণে তৈরি হওয়া নানা সংকটের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এবারের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর সঙ্গে ভর্তুকি আছে। ৫৪ টাকার সার ২২-২৩ টাকায় দেওয়া হচ্ছে। বেলারুশসহ নানা দেশ থেকে সার আমদানি করা হচ্ছে।”
দেশে বর্তমানে কৃষিখাতে উৎপাদন পরবর্তী ক্ষতি বা পোস্ট হার্ভেস্টিং লস্ট ৩০ শতাংশের কাছাকাছি বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা এই ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে নানা কৌশল উদ্ভাবন করছেন বলে জানান মন্ত্রী। সেইসঙ্গে কৃষি সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশের দাম আরেকটু সাশ্রয়ী করা যায় কিনা সে দিকে নজর দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন কষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার।
এআইপি সম্মাননা-২০২১
অনুষ্ঠানে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ২২ জনকে এআইপি সম্মাননা-২০২১ দেওয়া হয়।
স্বীকৃত বা সরকার নিবন্ধিত কৃষি সংগঠন শ্রেণিতে কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাইখ সিরাজ, পরিবেশবিষয়ক সংগঠক হিসেবে চট্টগ্রামভিত্তিক সংগঠন তিলোত্তমার প্রতিষ্ঠাতা সাহেলা আবেদীন ও সমবায় উদ্যোক্তা হিসেবে সাতক্ষীরার ধানদিয়া সিআইজি মহিলা সমবায় সমিতির সভাপতি শিখা রানী চক্রবর্তী এআইপি সম্মাননতা পেয়েছেন।
জাত বা প্রযুক্তি উদ্ভাবন শ্রেণিতে নির্বাচিতরা হলেন- এসিআই অ্যাগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট একেএম ফারায়েজুল হক আনসারী, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিষমুক্ত নিরাপদ সবজির কৃষি উদ্যোক্তা এমএ মতিন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য চুয়াডাঙ্গার জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. ওলি উল্লাহ এবং জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাশ।
কৃষি উৎপাদন, বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প শ্রেণিতে ১০ জন এআইপি হয়েছেন।
এরা হলেন- উন্নত জাতের ফলচাষের জন্য টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মো. ছানোয়ার হোসেন, পেঁয়াজ বীজ চাষের জন্য ফরিদপুরের খান বীজ ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী শাহীদা বেগম, সাথী ফসল উৎপাদন করে জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য খুলনার ডুমুরিয়ার কৃষি উদ্যোক্তা সুরেশ্বর মল্লিক, ফলচাষের জন্য চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের গ্রিন প্ল্যানেট অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মো. রুহুল আমীন, জলাবদ্ধতা নিরসণে কাজ করায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার অ্যাগ্রো বেইজড সোশিও ইকোনমিক্যাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন, দুগ্ধ উৎপাদনে পাবনার ঈশ্বরদীর তন্ময় ডেইরি খামারের স্বত্বাধিকারী মো. আমিরুল ইসলাম।
মাছ চাষে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আল বারাকা মৎস্য খামার অ্যান্ড হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী মাছুদুল হক চৌধুরী, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মৌচাষী কৃষি উদ্যোক্তা মো. রফিকুল ইসলাম, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ফলচাষী সিরাজ বহুমুখী খামারের স্বত্বাধিকারী মো. সিরাজুল ইসলাম ও শেরপুর সদর উপজেলার ফলচাষী মা-বাবার দোয়া ফ্রুট গার্ডেন নার্সারি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. হযরত আলী।
রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদন শ্রেণণিতে বৃক্ষরোপণ ও বনসাই নার্সারির জন্য গাজীপুর সদর উপজেলার লিভিং আর্ট গার্ডেনের পরিচালক কেএম সবুজ ও বারোমাসি আম চাষি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মোহা. রফিকুল ইসলাম এআইপি সম্মাননা পেয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শ্রেণিতে জৈবসার ও কেঁচোসার উৎপাদক নীলফামারীর ডোমার উপজেলার অন্নপূর্ণা অ্যাগ্রো সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী রাম নিবাস আগরওয়ালা, বাণিজ্যিক কৃষি খামারি হিসেবে ঢাকার নবাবগঞ্জের অমিত ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মায়া রানী বাউল ও সফল বীজ উৎপাদকারী পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মো. আবদুল খালেককে এআইপি নির্বাচন করা হয়।
নীতিমালা অনুযায়ী, এআইপি কার্ডের মেয়াদকাল এক বছর। এআইপিরা সিআইপিদের মতো সুযোগ-সুবিধা পান। এর মধ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রশংসাপত্র, বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পাস, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ; বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে ভ্রমণ করার সময় সরকার পরিচালিত গণপরিবহণে আসন সংরক্ষণ অগ্রাধিকার; নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার এবং বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার সুবিধা।
২০১৯ সালে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) নীতিমালা করে কৃষি মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো ১৩ জনকে দেওয়া হয় এআইপি সম্মাননা।