আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকার কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, তার দল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনও সংঘাত চায় না। বরং তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে, তাদের কথা শুনতে চায় দলটি।
ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অবস্থান কর্মসূচির দিন ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এসব কথা বললেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি তাদের সঙ্গে বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। কোনও সংঘাত চাই না। আমরা সংঘাত এড়িয়ে চলেছি। বিতর্কে নয়, আমরা ঐক্যে বিশ্বাসী। আজকেও আমাদের নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। সেটি স্থগিত করা হয়েছে।”
এর আগে ১৫ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলন থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের এবং ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
শনিবারের সংবাদ সম্মেলন থেকে ঢাকার সব ওয়ার্ডে এবং দেশের সব জেলা ও মহানগরীতে রবিবার জমায়েতের কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। এছাড়া সোমবার বিকাল ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত শোক মিছিল করবে দলটি।
কোটা সংস্কারের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন এখন বেহাত হয়ে গেছে। চলে গেছে তৃতীয় পক্ষের হাতে।
“তারা বাংলাদেশকে অকার্যকর বানাতে চায় এবং দেশকে খাদের কিনারায় নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু তাদের এই অশুভ তৎপরতা আমরা সফল হতে দিতে পারি না।”
এর আগে শুক্রবারের কর্মসূচি থেকে চলমান আন্দোলনের মধ্যে সব হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চেয়ে সরকারের পদত্যাগের দাবি ওঠে। ঢাকায় পূর্বঘোষিত ‘দ্রোহযাত্রা’ কর্মসূচির পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও নাগরিক সমাজ অবস্থান নিয়ে এ দাবি তোলে।
কর্মসূচির আয়োজক গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক রাগীব নাঈম তার বক্তব্যে বলেছিন, “আজ ঢাকা শহর মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছে। মানুষ বার্তা দিয়ে দিয়েছে, খুনি সরকার আর না।
“রবিবারের মধ্যে কারফিউ তুলে দিয়ে সরকার ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ না করলে সারা বাংলাদেশে গণমিছিল হবে।”
এরপর শনিবার সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে দেশের মানুষের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশার কথা জানালেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “আমরা সকলের নিকট দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে এগিয়ে যাবে আমাদের এই বাংলাদেশ।”
“সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। দেশবিরোধী একটা মহল চলমান সংকট জিইয়ে রেখে ফায়দা লুটার তৎপরতা চালাচ্ছে। এরই মধ্যে তা পরিস্কার হয়ে গেছে।
“অবুঝ শিশুরা কোনও রাজনীতি করে না। তাদের হত্যা করে, তাজা প্রাণ ঝরিয়ে আমাদের কী লাভ? লাভ তাদের- যারা এই শিশুদের কাছ থেকে ফায়দা লুটতে চায়, যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে যারা দেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করতে চায়- তাদের প্রতিহত করতে আমরা যুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সবাই কাজ করব।”
সরকার ধৈর্য ও সংযমের মাধ্যমে পরিস্থতি মোকাববেলা করছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছেন। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্ত কমিশন বিচার বিভাগীয় গঠন করেছে। কমিটি কাজ শুরু করে দিয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে জাতিসংঘ যদি যুক্ত হয়, তবে তাতে আমাদের কোনও আপত্তি থাকবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম ও আফজাল হোসেন, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দোলোয়ার হোসেনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।