কুমিল্লার লালমাই ও বরুড়ায় অভিযান চালিয়ে শিশু অপহরণকারী চক্রের দুই সদস্যসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার এবং অপহৃত শিশু তাওসীনকে উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বলছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সুলতানা আক্তার ওরফে নেহা (২২) ও তার স্বামী সাইফুল ইসলাম (২৭) একটি শিশু অপহরণকারী চক্রের সদস্য। ৩৪ বছর বয়সী মো. শাহজাহান ৫০ হাজার টাকায় শিশুটিকে কিনেছিলেন।
বৃহস্পতিবার মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে অভিযান সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, ডিবির রমনা বিভাগ গত বুধবার এ অভিযান চালায়। চক্রের অন্যতম সদস্য নেহা মূলত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে চাহিদামতো শিশুদের সন্ধান নিতেন। পরে টার্গেট করা শিশুদের চকলেট, চিপস কিনে দিতেন। এমন নানা প্রলোভন দেখিয়ে কোনও একজনকে কোলে নিয়ে সটকে পড়তেন নেহা। পরে নিঃসন্তান দম্পতির কাছে মোটা অঙ্কের টাকায় ওই শিশুদের বিক্রি করা হতো।
তাওসীনের অপহৃত হওয়ার প্রসঙ্গে হারুন অর রশীদ বলেন, রাজধানীর হাজারীবাগ থানার নিউ মডেল টাউন এলাকার দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন রিকশাচালক নুরুল ইসলাম। তার ছয় বছর বয়সী মেয়ে তাবাসসুম ও আড়াই বছর বয়সী ছেলে তাওসীন গত ২১ মার্চ বিকালে বাসার সামনে খেলতে যায়। এ সময় তাদের নানি সঙ্গে ছিলেন।
কিছুক্ষণ পর বোরকা পরা এক নারী এসে শিশুদের নানির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণ পর শিশুদের নানি তাদের রেখে বাসায় যান। এই সুযোগে ওই নারী তাদের ডেকে নিয়ে চিপস কিনে দেন। চিপস নিয়ে তাবাসসুম বাসায় ফির যায়। তবে তাওসীনকে নিজের কাছে রেখে দেন ওই নারী। এক পর্যায়ে তাওসীনকে কোলে নিয়ে চলে যান।
ডিবি কর্মকর্তা হারুন জানান, ঘটনার পর তাওসীনের পরিবার তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে। না পেয়ে তার বাবা ২১ মার্চই হাজারীবাগ থানায় মামলা করেন। মামলার পর শিশুটিকে উদ্ধারে মাঠে নামে ডিবির রমনা বিভাগ। ছায়া তদন্তে নেমে অপহরণ চক্রটিকে শনাক্ত করে ডিবির রমনা বিভাগের ধানমন্ডি জোনাল টিমের সদস্যরা।
বুধবার কুমিল্লার লালমাইয়ে অভিযান চালিয়ে শাহজাহানের বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। ৫০ হাজার টাকায় শাহজাহানের কাছে তাকে বিক্রি করে সাইফুল-নেহা। একই দিন বরুড়া থেকে এই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, “যাদের সন্তান নেই বা হয় না, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা সঠিক পদ্ধতিতে শিশু দত্তক নিন। কারও কোলের শিশু চুরি করে বা অপহরণ করে নিয়ে আপনাদের কাছে দিল, আপনারা শিশুটিকে রাখলেন- এটা অপরাধ।
“এমন অপরাধে আপনারাও একই মামলার আসামি হবেন। পাশাপাশি সন্তানদের পিতা-মাতাকে বলব, শিশুরা বাসার বাইরে গেলে তাদের সঙ্গে পরিবারের বড় সদস্যরা থাকবেন। না হলে এমন ঘটনা আবারও ঘটতে পারে।”