Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

আট প্রতিষ্ঠান বেদখলের অভিযোগ ড. ইউনূসের

ss. yunus-press meet-15-02-24
[publishpress_authors_box]

তার নেতৃত্বে থাকা আটটি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব‍্যাংক দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেছেন, তাদের আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করেছে গ্রামীণ ব্যাংক। দখল করে নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান তারা তাদের মতো করে চালাচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে প্রতিকার চাইলেও কোনও সহযোগিতা পাননি।

‘জবরদখল’ হওয়া আট প্রতিষ্ঠানের একটি গ্রামীণ টেলিকম যার চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার সকালে টেলিকম ভবনের নিচতলায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।

এ সময় তিনি বলেন, “আমরা জীবনে বহু দুর্যোগ দেখেছি। এমন দুর্যোগ আর কখনও দেখিনি।” গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম মঈনুদ্দিন চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

শ্রম আইনের একটি মামলায় ইউনূসের সাজা এবং আরেক মামলায় তার বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগপত্র অনুমোদন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

ঢাকার মিরপুর ১ নম্বরে চিড়িয়াখানা সড়কে অবস্থিত গ্রামীণ টেলিকম ভবন। পুরো ভবনে মুহাম্মদ ইউনূসের কোম্পানি রয়েছে ১৬টি। যার প্রতিটির চেয়ারম্যান তিনি নিজেই।

১২ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ ভবনে অবস্থিত আটটি অফিসে তালা দিয়ে তা দখল করে নেওয়া হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূস।

বৃহস্পতিবার ইউনূস বলেন, “আমরা যখন একসঙ্গে এই ভবনটি গড়ে তুলি সবাই খুব আনন্দিত ছিলাম। সবাই যেন শান্তিতে কাজ করতে পারি এটাই লক্ষ্য ছিল। হঠাৎ চারদিন আগে আমরা বাইরের লোক হয়ে গেলাম তাদের কাছে। ওই দিন থেকে তারা ভবনে তালা মেরে রেখেছে। তালা মেরে দিয়ে রেখে যায়, সকাল বেলা এসে খুলে দেয়। সবই তাদের এখতিয়ারের মধ্যে। আজকে এখানে সংবাদ সম্মেলন করতে পারব কি না তারা আমাদের অনুমতি দিবেন কিনা সেটাও জানতাম না।

“নিজের বাড়িতে অন্য কেউ যদি তালা মারে, তখন কেমন লাগার কথা আপনারাই বলেন। তাহলে দেশে আইন–আদালত আছে কিসের জন্য? তারা আদালতেও যেতে চায় না। কি করব আমরা!”

এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, “ব্যবসার মুনাফার টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় হয়নি। যা হয়েছে আইন মেনে হয়েছে।”

১৯৮৩ সালে সরকারি অধ‍্যাদেশে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব‍্যাংকের ব‍্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে ড. ইউনূসকে কেন্দ্রীয় ব‍্যাংক অপসারণ করে ২০১১ সালের মার্চ মাসে।

সম্প্রতি গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণের পরিচালক পদে কয়েকজনকে মনোনীত করার পাশাপাশি এ দুই কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে ইউনূসের বদলে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল মজিদকে মনোনীত করা হয়েছে- এ কথা উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, “এটা দেশবাসীর সামনে আমাকে হয়রানি করা এবং আমার সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ধংস করার নীল-নকশা ছাড়া আর কিছু নয়।

তিনি বলেন, “আমার ঘর জবরদখল হয়ে যাচ্ছে। আমরা পুলিশকে জানিয়েছিলাম, একটা জিডি করেছিলাম। তারা প্রথমে আমলেই নেয়নি। তারপর আমি বর্ণনা করলাম। পরে জিডির কপি নিয়ে পুলিশ এসেছিল, কিন্তু কোনও সমাধান দেয়নি। আমরা অফিস করতে পারছি না।”

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালেও কয়েকজন নারী ঝাড়ু হাতে টেলিকম ভবনের সামনে মিছিল করেন। তারা কেউ ইউনূসের কাছে টাকা পান বলে দাবি করেন, আবার কারও দাবি, মোবাইলের কল রেট অনেক বেশি এ কারণে তারা ঝাড়ু হাতে নেমেছেন।

সেই প্রসঙ্গ ধরে ইউনূস বলেন, “আমি সকাল থেকে শুনছি এখানে ঝাড়ু নিয়ে মিছিল হচ্ছে, স্লোগান হচ্ছে। কেন হচ্ছে তাতো বুঝছি না। আমরা ঝাড়ুর যোগ্যতার হয়ে গেলাম হঠাৎ করে… এভাবে দেশ চলছে কীভাবে? আমরা আদালতের শরণাপন্ন হবো এই নিয়ে।”

ইউনূসের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ কমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লা এবং শাহ আলী থানার ওসি মওদুদ হাওলাদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

ইউনূসের ব্রিফিংয়ের পর মিরপুর দুই নম্বরে গ্রামীণ ব্যাংক ভবনের সামনে গেলে নিরাপত্তা কর্মীরা সাংবাদিকদের ভেতরে ঢুকতে দেননি। নিরাপত্তা কর্মীরা জানিয়ে দেন, ভেতরে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডি বা কথা বলার মতো অন্য কেউ নেই।

২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) এসএম আরিফুজ্জামান। মামলার নথি অনুসারে, আইএফইডি কর্মকর্তারা ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট ঢাকার মিরপুরে গ্রামীণ টেলিকমের অফিস পরিদর্শন করে শ্রম আইনের বেশকিছু লঙ্ঘন খুঁজে পান।

গত ১ জানুয়ারি ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান শেখ মেরিনা সুলতানা এক মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূস এবং এর পরিচালক আশরাফুল হাসান, নুরজাহান বেগম ও এম শাহজাহানকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাদের ৪ জনকেই ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ২৫ দিন কারাদণ্ড দেয় আদালত। রায়ের পর আলাদা আলাদা জামিন আবেদন করলে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৪ জনকেই জামিন দেন আদালত।

২৮ জানুয়ারি আদালতে উপস্থিত হয়ে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় শ্রম আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের অন্য ৩ শীর্ষ কর্মকর্তা।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূসের আবেদন খারিজ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টকে ৫০ কোটি টাকা জমা দিয়ে ২০১১ থেকে ১৩ করবর্ষের আয়কর আপিল ফাইল করার রায় দিয়েছে হাইকোর্ট।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত