শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেওয়া সাজার রায় স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে।
রবিবার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি করেছেন।
এ প্রসঙ্গে খুরশীদ আলম বলেন, “শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় প্রফেসর ড. ইউনূস এবং তার গংকে ছয় মাস সাজা এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে শ্রম আদালত রায় দিয়েছেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে তারা শ্রম আপিল আদালতে আপিল দায়ের করেন। আপিল আদালত তাদের আপিল মঞ্জুর করে পুরো রায় স্থগিত করে দিয়েছেন। আমাদের বক্তব্য হলো- উচ্চতর আদালতের রায় এবং ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে সাজা কখনো স্থগিত করতে পারে না।”
তিনি বলেন, “একটি রায়ের দুটি অংশ- একটি সাজা, আরেকটি সেন্টেন্স। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল পুরো রায়টি স্থগিত করে দিয়েছেন, এটা আইনসিদ্ধ হয়নি। এই কারণে বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে আমরা ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৩৯ ও ৪৩৫ ধারা অনুসারে একটি রিভিশন দায়েরের অনুমতি চেয়ে আবেদন করি। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে আমরা হাইকোর্টে আবেদনটি করেছি।”
আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানিয়েছেন, আবেদনে সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা যাতে আদালতের অনুমতি ছাড়া বিদেশ যেতে না পারেন এবং দ্রুত আপিল নিষ্পত্তির নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। তারা আশা করছেন শিগগিরই বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী এবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের শুনানি হবে।
শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলায় গত ১ জানুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে ৬ মাস কারাদণ্ড, ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানার রায় দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান শেখ মেরিনা সুলতানা। তবে আপিলের শর্তে এক মাসের জামিনও মঞ্জুর করে আদালত।
এ রায়ের বিরুদ্ধে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন ড. ইউনূস। সেই আপিল গ্রহণ করে গত ২৮ জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ চারজনকে জামিন দেয় শ্রম ট্রাইব্যুনাল। শ্রম আদালতের দেওয়া সাজাও স্থগিত করে ট্রাইব্যুনাল।
সাজাপ্রাপ্ত অপর তিনজন হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর শ্রম ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করা হয়। গত বছরের ৬ জুন অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করা হয়। ২২ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় ৯ নভেম্বর। গত ২৪ ডিসেম্বর যুক্তিতর্কের শুনানি শেষ হয়।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, শ্রম আইন ২০০৬ ও শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবীশকাল পার হলেও তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয়নি।
গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয়নি।