দেশের প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যবসায়ীদের সামাজিক ব্যবসা চালুর আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, মুনাফার জন্য নয়, অন্যের সহায়তা বা সুবিধার জন্য বিনিয়োগ করবেন।
বৃহস্পতিবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ন্যাশনাল বিজনেস সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা একথা বলেন। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি) এবং জাতীয় পর্যায়ের ১৫টি বাণিজ্যিক সংগঠন এ সংলাপের আয়োজন করে।
সংলাপে অংশ নিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আপনার গ্রাম, উপজেলা কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এলাকায় সামাজিক ব্যবসা গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও পরিবেশ উন্নয়নমূলক সামাজিক ব্যবসা করা যেতে পারে। আপনি বিনিয়োগ করবেন মুনাফার জন্য নয়, অন্যের সহায়তা বা সুবিধার জন্য।”
বাসস জানিয়েছে, বক্তব্যে ছাত্রদের আকাঙ্ক্ষার নতুন বাংলাদেশ গড়তে সরকারের সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ড. ইউনূস বলেন, “আমরা অতীতের পচা বাংলাদেশ থেকে একটা নতুন তরতাজা বাংলাদেশের সৃষ্টি করতে চাই। আসুন, আমরা একসঙ্গে কাজ করি।
“এটা কোনও কল্পকাহিনী না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস- আপনারা মনস্থির করে এগিয়ে এলে খুব দ্রুত আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।”
এসময় উদ্যোক্তাদের দুঃসাহসের প্রশংসাও করেন তিনি। বলেন, “আমরা যে বড় কিছু করতে পারি তার প্রমাণ দেশের ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশীদের কাছে শিল্পপতি হওয়া ছিল দুঃস্বপ্ন, কিন্তু আপনারা সেটা করতে পেরেছেন। আপনারা বিশ্বমানের উদ্যোক্তা।”
তরুণদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, “যে কয়টা দিন সরকারে থাকি- আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আমাদের অঙ্গীকার হলো- নতুন বাংলাদেশের জন্য যা আছে তা করব। যেন বলে যেতে পারি- এই দেশ আমাদেরকে একটা সুযোগ দিয়েছিল, আমরা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছি।”
এসময় তিনি সবাইকে সংস্কারে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান। বলেন, সংস্কার কেবল সরকারের ওপর ছেড়ে দেবেন না। আসুন সবাই মিলে সংস্কার করি। যেখানে ভুল দেখবেন, আত্ম-জিজ্ঞাসা করবেন। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করবেন। ছেলেদের আত্মাহুতির দিকে তাকিয়ে ভুলপথ পরিহার করুন।
শিল্প প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক-মালিকের সুসম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান। নতুন সরকারের মেয়াদকালে শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক সুন্দরভাবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। দেশ এখনও জেনেভা কনভেনশনে যোগ দিতে পারেনি, সেকথা উল্লেখ করে সবাই মিলে আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষর করার ডাক দেন। পাশাপাশি শ্রমিকদের যা প্রাপ্য, মালিকদের তাতে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনায় এখনও অনেক বাধা রয়ে গেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস এসব বাধা পেরোতে যেতে সরকার, সরকারের বাইরের সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ নিম্ন মধ্য-আয়ের দেশ থেকে উচ্চ মধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত হলে রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা হারাবে। ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের প্রতিযোগিতায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।”