শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্থায়ী জামিন দিয়েছেন ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। এই মামলা হওয়া সাজার রায়ের বিরুদ্ধে রবিবার তিনি আপিল করার পাশাপাশি জামিন চেয়েও আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে ট্রাইব্যুনাল তার আপিল গ্রহণ এবং জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
রবিবার সকাল ১১টার দিকে ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ট্রাইব্যুনাল সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আপিল গ্রহণ করে আগামী ৩ মার্চ শুনানির দিন ধার্য করেছেন। আপিল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ড. ইউনূসকে স্থায়ী জামিন দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গত ১ জানুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয় আদালত। তবে এক মাসের মধ্যে আপিল করার শর্তে ওইদিন তাকে জামিন দেওয়া হয়।
সেই শর্ত মেনে রবিবার ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই মামলায় সাজা পাওয়া আরও তিনজনও এদিন আপিল করেন। তারা হলেন– গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। গত ৬ জুন চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।
অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে চারজনের পক্ষে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হলেও গত ২০ আগস্ট সেই আবেদন খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ।
২২ আগস্ট এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় এবং স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষ গত ৮ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেন তারা। তারপর থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শেষে ১ জানুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করা হয়।
১ জানুয়ারি রায় পড়ার সময় বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানার কথায় উঠে আসে ড. ইউনূসের নোবেলজয় প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, “আসামিপক্ষ এক নম্বর আসামির বিষয়ে প্রশংসাসূচক বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। যেখানে তাকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা নোবেলজয়ী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব বলা হয়েছে। কিন্তু, এ আদালতে নোবেলজয়ী ইউনূসের বিচার হচ্ছে না, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান হিসেবে বিচার হচ্ছে।”
মামলার অভিযোগ বলা হয়েছিল, শ্রম আইন-২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক ও কর্মচারীরা শিক্ষানবিশকাল পার করার পরেও স্থায়ী নিয়োগ পাননি। এছাড়া শ্রমিক ও কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি দেওয়া হয়নি, ছুটি নগদায়ন বা ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থও দেওয়া হয়নি।
পাশাপাশি গঠন করা হয়নি শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল। শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয়নি লভ্যাংশের ৫ শতাংশ পরিমাণ অর্থ।
এসব অভিযোগের বিপরীতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখিতভাবে আদালতকে জানিয়েছিলেন চার বিবাদী। সেখানে এটাও বলা হয়েছিল যে, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ফলে এর লভ্যাংশ বিতরণযোগ্য নয়। বরং তা সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।