গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগের মাসপূর্তিতে বার্তা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বার্তায় তিনি আন্দোলনে নিহত ও আহতদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, “আমরা বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম মাস উদযাপন করছি। ইতিহাসের অন্যতম গৌরবময় বিপ্লবের জন্য শত শত ছাত্র এবং সর্বস্তরের মানুষ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে।”
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় নতুন সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করা হয় শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। বার্তায় তিনি গণআন্দোলনের প্রাণ হারানো সাহসী তরুণ, শ্রমিক, দিনমজুর, পেশাজীবীদের স্মরণ করেন। সেই সঙ্গে যারা আহত হয়েছেন, প্রাণঘাতী আঘাতের শিকার হয়ে চিরজীবনের জন্য পঙ্গু হয়েছেন কিংবা চোখ হারিয়েছেন তাদের অভিবাদন জানান।
গত মাসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকার এ পর্যন্ত যেসব গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হাতে নিয়েছে তার একটা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “শহীদদের রক্ত এবং আহত ভাইবোনদের আত্মত্যাগকে জাতি হিসাবে আমরা কিছুতেই ব্যর্থ হতে দেব না। আজ তাদের স্মৃতিময় দিনে আবারও প্রতিজ্ঞা করলাম তাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়বোই।”
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা একটি দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র এবং একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি রেখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। আমাদের বাংলাদেশকে পূর্ণ গৌরবে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব আমাদের।
“আমাদের তরুণ বিপ্লবীরা দেশের মানুষের মনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছে তা পূরণে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শহীদদের আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করতে চাই। এক নতুন যুগের সূচনা করতে চাই।”
বার্তায় গণআন্দোলনে অংশ নেওয়া তরুণদের প্রশংসা করেন ড. ইউনূস। পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হওয়ায় তাদের এখন আবার পড়াশোনায় ফেরার সময় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, “বিপ্লবের সময়, তোমরা পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন ঘুমহীন রাত কাটিয়েছো এবং দিনে নিষ্ঠুর শাসনকে প্রতিহত করার জন্য পরস্পরের থেকে চির বিদায় নিয়ে রাস্তায় নেমেছো। বিপ্লব শেষ হওয়ার পর তোমরা দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের উপাসনালয় পাহারা দিয়েছো এবং সারা দেশে ট্রাফিক পরিচালনা করার দায়িত্ব নিয়েছো।
“আমি জানি তোমাদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই এখন সময় পড়াশোনায় ফেরার। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। আমি তোমাদেরকে ক্লাস ও ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। কেননা বিপ্লবের সুফল ঘরে তুলতে আমাদের একটি সুশিক্ষিত ও দক্ষ প্রজন্মের দরকার।”
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে প্রায় একমাস। ড. ইউনূস বলেন, এই সরকারের প্রথম কাজ জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। এসময় তিনি বিপ্লবের সময় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হাজার হাজার মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করার কথা বলেন।
বার্তায় ‘গুম সংস্কৃতির’ সমাপ্তি ঘটানোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার কথা জানান অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান। বলপূর্বক গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বার্তায় বলা হয়েছে, “আয়নাঘরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই আমরা বলপূর্বক গুমের শিকার ভাইবোনদের কষ্ট ও যন্ত্রণা সম্পর্কে জানতে পারব।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া পুরো বার্তাটি পড়ুন এখানে :