বাংলাদেশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলা করা যায় কি? এ বিষয়ে আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর করিম এ এ খানের কাছে জানতে চেয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
করিম খান ইতিবাচক জবাব দিয়েছেন, জানিয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা বাসস।
সংস্থাটির শুক্রবার প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, “অধ্যাপক ইউনূস করিম খানের কাছে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় গণহত্যার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইসিসিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়ের করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চান।”
বাংলাদেশ অবশ্যই হেগ-ভিত্তিক আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে পারে জানিয়ে করিম খান বলেন, “তবে আইসিসিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়েরের জন্য যথাযথ নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হয়।”
করিম খান বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন (ইউএনজিএ)’র ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর জানান সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। সেদিনই বোন শেখ রেহানাসহ দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা । শেষ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী হাসিনা ভারতেই অবস্থান করছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটার বিরোধিতা করে জুলাইয়ের শুরুতে আন্দোলনে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ১৬ জুলাই পুলিশের গুলি ও অজ্ঞাতনামাদের মারধরে ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থান মিলিয়ে ছাত্রসহ ছয় জন নিহত হয়। আন্দোলনে আসে নতুন গতি, যা অব্যাহত থাকে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এ সময়ে ছাত্র-জনতা মিলিয়ে এক হাজারের বেশি প্রাণহানি ঘটে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে সাতশ নিহতের নাম প্রকাশ হয়েছে।
বাসস জানায়, নিউ ইয়র্কে সাক্ষাতে ড. ইউনূসকে ২০১৯ সালে আইসিসি কর্তৃক রোহিঙ্গা নির্যাতন তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন করিম খান।
এ সময় তিনি জানান, এ বছরের শেষ নাগাদ তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন। তিনি রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে নতুন গতি আনতে অধ্যাপক ইউনূসের তিন দফা প্রস্তাবের প্রশংসা করেন।
বুধবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এই প্রস্তাব দেন। এ সময় সেখানে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলিও বক্তব্য রাখেন।
প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার নিমিত্তে জাতিসংঘ প্রধানের একটি জরুরি সম্মেলন আয়োজন ও করণীয় প্রস্তাব, রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকটে নিরসনে যৌথ সহায়তা পরিকল্পনা জোরদার এবং ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত গণহত্যার বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে আন্তরিক আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা।