রপ্তানি বাড়তে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ব্যান্ড ইমেজ কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা এতে একাত্মতা পোষণ করে তিন বছরের মাথায় একশ বিলিয়নের ইন্ড্রাস্টি করার আশা ব্যক্ত করেছেন।
বুধবার বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচলনা পর্ষদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বিজিএমইএর পরিচালক শোভন ইসলাম সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম মান্নান কচি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে এস এম মান্নান কচি পলাতক রয়েছেন। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে আছেন কে এম রফিকুল ইসলাম।
বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন নির্বাচনের দাবিতে গত ৭ আগস্ট বিজিএমইএতে বিজিএমইএর ‘বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট’ এস এম মান্নান কচিকে না পেয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট কে এম রফিকুল ইসলামের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
কে এম রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিলেন।
বিজিএমইএ পরিচালক শোভন বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস বলেছেন দেশের পরিস্থিতি দুই-একদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের গার্মেন্টস সেক্টর একটা চালিকা শক্তি। এই চালিকা শক্তি যেন সচল থাকে। আমাদের প্রতি ওনার আস্থা আছে। আমরা যেন সম্পূর্ণভাবে চেষ্টা করি। রপ্তানি বাড়াতে ওনার যে ব্র্যান্ড ইমেজ সেটাকে কাজে লাগাই।
“আমরাও একই বলেছি। আমরাও আস্থা ফিরে পেয়েছি।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়ায় বিদেশি যে ক্রেতা রয়েছে তাদের মধ্যেও ইতিবাচক মানসিকতা ও ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, “উনি নিজেই একটা ব্র্যান্ড নেইম। উনি আসাতে ক্রেতাদের মধ্যে চরম আস্থা ফিরে এসেছে। সেই আস্থা কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের রপ্তানি আদেশ বাড়াতে চাই। সেজন্য আমরা সচেষ্ট থাকব। উনি কথা দিয়েছেন এ ব্যাপারে কিছু টুইট করে আমাদের ব্র্যান্ড ইমেজকে উন্নত করার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবেন।”
বিজিএমইএ পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, “বিজিএমইএ পর্ষদ ভারপ্রাপ্ত সভাপতির নেতৃত্বে দেখা করেছেন। আমাদের সহসভাপতি ও পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। খুব স্বল্প সময়ের নোটিশে এটা আমরা করেছি।”
নিজেদের তেমন দাবি-দাওয়া ছিল না জানিয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, “তার (ড. ইউনূস) ওপর আমরা আস্থা জ্ঞাপন করার জন্য এখানে এসেছিলাম। আমাদের সেক্টরটি বহুদিন পর সচল হয়েছে। এতদিন আমরা লসের সম্মুখীন হয়েছিলাম। সেক্টরটি যে সচল হলো সেটিই তাকে জানাতে এসেছিলাম। আমাদের জরুরি ভিত্তিতে ও দীর্ঘমেয়াদে কিছু দরকার রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।”
“বিশেষ করে এই মুহূর্তে ১ মাসের বেতন ও কিছু অর্থনৈতিক দরকারে তার কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি, তাছাড়া সবার সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ দিয়েছি। এই টাস্কফোর্স যাতে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখতে পারে। বিজিএমইএ মালিকদের সমন্বয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বিদ্যুৎ, গ্যাস সবাই মিলে কীভাবে আমাদের নীতিগত সহায়তা দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে আমরা ৪২ থেকে ৪৭ বিলিয়নের যে ইন্ড্রাস্টি সেটাকে আমরা ২ থেকে ৩ বছরে ৮০ বিলিয়ন বা ১০০ বিলিয়নে নিয়ে যেতে পারি, সেটাই তার কাছে জানিয়েছি। এ ব্যাপারে উনি আশ্বস্ত দিয়েছেন।”
অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধান উপদেষ্টার প্রসঙ্গ টেনে শোভন বলেন, “উনি বিশ্বাস করেন আমরা যদি সকলে মিলে কাজ করি। এই সেক্টরটি তৃণমূলের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। বৈদেশিক মুদ্রার বড় অংশ এই তৈরি পোশাক খাত থেকেই আসে।”
তৈরি পোশাক খাত চালু রাখতে পারলে দেশে অর্থনীতির বিভিন্ন রকমের যে সংকট তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।
বৈঠকটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা বৃহত্তর পরিবেশ নিয়ে আলাপ করেছি। আমাদের বিদ্যুৎ এবং তারল্য সংকট নিয়ে তার সহায়তা চেয়েছি। উনি আশ্বাস দিয়েছেন ওনার সাধ্যমতো যা করার উনি চেষ্টা করবেন।”