বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ কিংবা শেখ হাসিনার ফেরার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
যাদের নেতৃত্বে আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে, তাদের পছন্দে ক্ষমতায় আসা ইউনূস ব্রিটিশ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন।
একদিকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি, অন্যদিকে আগামী নির্বাচনের তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি- এই দুই নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ড. ইউনূসের এমন বক্তব্য এল।
তিনি বলেন, “ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ধরে দেশে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এই দলের কোনও ঠাঁই নেই।
“নিশ্চিতভাবে অল্প সময়ের ভেতরে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের বাংলাদেশে জায়গা হবে না।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এর তিন দিন পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত প্রায় তিন মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রাণহানির ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২০০টিরও বেশি মামলা হয়েছে। গণহত্যার অভিযোগে তার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার উদ্যোগও নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলের সমালোচনা করে ড. ইউনূস বলেন, “তারা জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল। রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা নিজেদের কব্জায় রেখেছিল।
“গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনও ফ্যাসিস্ট দলের অস্তিত্ব থাকতে পারে না।”
শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিএনপিসহ আরও রাজনৈতিক দলেরও তাতে সমর্থন রয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার কথা বেশ কয়েকবার বলেছেন।
তবে এবিষয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে ভিন্ন কথা বললেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস।
তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন এড়াতে ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে সক্রিয় পদক্ষেপ নেবে না তার সরকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের রায় ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে তারা। এরপর প্রত্যর্পণ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
“শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। তার বিচারের রায় ঘোষণা হলে আমরা তাকে ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। রায়ের আগেই তাকে দেশে ফেরত আনার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।”
ক্ষমতা হারানোর পর জনরোষে পড়ে ৫ আগস্ট থেকে ছন্নছাড়া অবস্থা আওয়ামী লীগের।
আওয়ামী লীগ ভেঙে ছোট ছোট দলে পরিণত হতে পারে বলে ধারণা ড. ইউনূসের; তবে এই দলটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দায়িত্ব তার সরকারের নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো দলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের নয়। কারণ এটি রাজনৈতিক সরকার নয়।
“আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে কি না, তা নির্ভর করছে এনিয়ে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে পৌঁছানোর ওপর।”