Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

যুদ্ধাবস্থায় আছি, বিজয়ী হয়ে ফিরতে হবে : ড. ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
[publishpress_authors_box]

অভ্যুত্থানের জয় হলেও পরাজিতরা ফিরে আসতে নানা ষড়যন্ত্র করছে বলে পুলিশকে হুঁশিয়ার করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরিস্থিতির মাত্রা বোঝাতে বর্তমান সময়কে ‘যুদ্ধাবস্থা’ বলেছেন তিনি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভেঙে পড়া পুলিশ বাহিনীকে পুনরায় সংগঠিত করার প্রক্রিয়ায় সোমবার সারাদেশের মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের ঢাকায় নিজের কার্যালয়ে এনে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।

দীর্ঘ ভাষণে তিনি সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে পুলিশকে ধারণা দেন, পাশাপাশি এই বাহিনীর মনোবল চাঙা করতে দেন নানা দিক-নির্দেশনা। ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার সুযোগ ব্যবহার করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।   

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসন অবসানের তিন দিন পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন ড. ইউনূস।

পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এটা মাথায় যেন আমরা রাখি, আমরা একটা যুদ্ধাবস্থার মধ্যে আছি। ৮ আগস্টের পর ভুলে গেছি যে যুদ্ধ নাই, শেষ; এটা ঠিক না। আমরা কন্টিনিউয়াস একটি যুদ্ধাবস্থার মধ্যে আছি। এটা যেমন মনে থাকি। এই যুদ্ধাবস্থা থেকে আমাদের জয়ী হয়ে ফিরে আসতে হবে।”

কেন যুদ্ধাবস্থা বলছেন, তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “এই যুদ্ধটা কীভাবে হয়, তা পরিষ্কার। যারা পরাজিত শক্তি, তারা সুযোগ গ্রহণ করবে, কিছু উসকিয়ে দেবে, গোলমাল পাকিয়ে দেবে।

“তার চেষ্টা কিন্তু গোলযোগ পাকিয়ে দেওয়া। একটা কথা প্রচার করবে .. একটা ছবি ছাপিয়ে দেবে … একটা পোস্টার লাগিয়ে দেবে, এটা কন্টিনিউয়াসলি চলতে থাকবে।”

নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এটা আরও বাড়তে থাকবে বলে পুলিশকে সদা সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।

সন্দেহভাজন সবার কর্মকাণ্ডের পর পুলিশকে নিবিড় নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি বেআইনি কিছু না করতেও বলেন তিনি।

“এর মানে এই নয় যে কারাগারে ঢোকানো। তার ওপর নজর রাখা, দোষ করলেই যেন ধরে ফেলা যায়। আমরা যদি সতর্ক থাকি, তাহলে এটাকে বাড়ার সুযোগ দেওয়ার দরকার হবে না।”

নানা ধরনের অপপ্রচার চলবে বলে সেসব বিষয়ে পুলিশকে সচেতন থাকার পরামরশও দেন ড. ইউনূস।

“অপপ্রচারের মহা কারখানা আছে, তোমাকেও কনফিউজড করে ফেলবে, তোমাকেও সতর্ক থাকতে হবে।”

সংখ্যালঘুসহ রাষ্ট্রের সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশকে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি।

জুলাই অভ্যুত্থান পুলিশকে তার আগের ভাবমূর্তি থেকে উত্তরণ ঘটানোর সুযোগ এনে দিয়েছে মন্তব্য করে সেই সুযোগ কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টা।

পুরনো বাংলাদেশের ‘অন্ধকার দিন’ থেকে আলো ঝলমল নতুন বাংলাদেশে নতুন দিন আনার কথা বলে তিনি বলেন, “ওই অন্ধকার যুগে পুলিশ অ্যাকটিভ পার্টিসিপেন্ট ছিল—নিজের ইচ্ছায় না, সরকারি কাজ করতে গিয়ে হয়েছে।

“কাজেই নতুন বাংলাদেশে পুলিশকে দেখিয়ে দিতে হবে—আমরা মানুষ খারাপ না, খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়েছিলাম, সেখান থেকে বের হয়ে এসেছি।”

তিনি বলেন, “১৬ বছরের কালিমা সারা গায়ে মাখা আছে, রাতারাতি সেটা পাল্টাতে পারব না। পুলিশ সম্বন্ধে ইমেজ হলো, তারা খারাপটা আগে করে। কিন্তু আমরা ভালোটা আগে দেখব, এখন সম্পূর্ণ নতুন ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

পুলিশ দেখলে যেন মানুষ ভয় না পেয়ে বন্ধু ভাবে, সেই পরিবেশ তৈরি করতে আইনের অধীন থেকে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জইনয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। সেদিকে আমরা অগ্রসর হব।”

দেশের আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে সবাইকে একসাথে কাজ করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “দেশ বদলাতে হলে একক নির্দেশে নয়, বরং সবাইকে নিয়ে এক একটি টিম হয়ে কাজ করতে হবে এবং বাংলাদেশে যত টিম আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিম হলো পুলিশ। সরকার যা কিছুই করতে চায়, শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাত দিয়েই করতে হয়।”

এই সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বক্তব্য রাখেন। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ এবং রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ফারজানা ইসলাম।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত