Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূসকে অব্যাহতি

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
[publishpress_authors_box]

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হওয়ার আগে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস পেলেন শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় অব্যাহতি।

বুধবার ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) এম এ আউয়ালের (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) আদালত এ আদেশ দেন।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ছয় মাসের সাজার রায় স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে এদিন ড. ইউনূসসহ চার আসামিকেই অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এ মামলায় ড. ইউনূস ছাড়াও অন্য তিনজন হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।

এ আপিল আবেদনটি শুনানি এগিয়ে আনতে গত ১ আগস্ট আসামিপক্ষ ও বাদী পক্ষ উভয়েই আবেদন করে। তাদের আবেদনের ভিত্তিতে শুনানি এগিয়ে আনা হয়।

আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, এ মামলাটি শুনানির জন্য আগামী ১৪ আগস্ট দিন ঠিক করা ছিল। হঠাৎ করে মামলাটি শুনানির জন্য এগিয়ে আনে আদালত।

আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন তার বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “এ মামলা দায়েরে আইনের কোনও বিধান মানা হয়নি। পরস্পরবিরোধী সাক্ষ্য, এছাড়া সাক্ষ্য-সাবদ দিয়ে মামলাটিতে কোনও অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি। এজন্য মামলা থেকে সবার অব্যাহতি চাই।”

অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের শপথ নিতে আইনগত কোনও বাধা আছে কি না—তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তার বিরুদ্ধে দুটি মামলায় একটি থেকে আজকে অব্যাহতি পেলেন, আরেকটি দুদকের মামলায় তার বিরুদ্ধে কোনও বিচারই শুরু হয়নি। এই ক্ষেত্রে শপথ নিতে তার কোনও বাঁধা হবে না।”

অন্যদিকে কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান উপস্থিত না থাকলেও মামলার বাদী কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের মো. তরিকুল ইসলাম আদালতে বক্তব্য দেন। আদালত তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আদললত যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমাদের কোনও আপত্তি নাই।

তবে রাষ্ট্রপক্ষের কোনও আইনজীবীকে দেখা যায়নি। আর রায়ের সময় ড. ইউনূসসহ অন্য আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।

গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ প্রতিষ্ঠানটির চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ২০২১ সালে মামলা করেছিল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।

গত ১ জানুয়ারি ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা এ মামলার রায় দেন। রায়ে ড. ইউনূসসহ চারজনকে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যেককে শ্রম আইনের ৩০৩ ও ৩০৭ ধারায় ৬ মাসের কারাদণ্ডের সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। তবে সেদিন তাদের জেলে যেতে হয়নি।

রায় ঘোষণার পর পরই জামিন আবেদন করা হলে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার শর্তে তাদের এক মাসের জামিন দেয় বিচারক। এ জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন তারা।

গত ২৮ জানুয়ারি ইউনূসসহ দণ্ডিতদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে তাদের ৩ মার্চ পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়। এরপর কয়েক দফা জামিনের মেয়াদ বাড়ায় আদালত।

শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দণ্ড স্থগিতের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। এ আবেদনে গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক শুনানির পর রুলসহ আদেশ দেয় হাইকোর্ট।

গত ২৮ জানুয়ারি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ড স্থগিতের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

চূড়ান্ত শুনানির পর গত ১৮ মার্চ রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেয় উচ্চ আদালত। তার আগে গত ৩ মার্চ জামিনের মেয়াদ ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে আদেশ দেয় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। সে ধারাবাহিকতায় তাদের নিয়মিত জামিন চেয়ে এ আদালতে আবেদন করা হয়।  

শুনানিতে আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন ড. ইউনূসসহ চার দণ্ডিতের নিয়মিত জামিন এবং তাদের মধ্যে একজনের বিদেশ যাওয়ার অনুমতি চান। সেই সঙ্গে শ্রম আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তাদের আপিল শুনানি মুলতবি চাওয়া হয়। বাদী পক্ষের আপত্তি না থাকায় আদালত শুনারি শুলতবি করে ২৩ মে পর্যন্ত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

সেই আদেশের পর ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, “আইন অনুসারে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করলে নিয়মিত জামিন দেওয়া হয়। অন্য মামলায় এ বিধান অনুসরণ করা হলেও এ মামলায় তা হচ্ছে না। আদালত আগামী ২৩ মে পর্যন্ত জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছেন। সে পর্যন্ত আপিল শুনানি মুলতবি করা হয়েছে।

মামলা থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর শ্রম ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করা হয়। গত বছরের ৬ জুন এই মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করা হয়। ২২ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়, যা শেষ হয় ৯ নভেম্বর। গত ২৪ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়।

মামলায় অভিযোগে বলা হয়, শ্রম আইন ২০০৬ ও শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয়নি। গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয়নি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দেশে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে মঙ্গলবার।

গতকাল রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান এবং ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদিন।

এরপর বুধবার ড. ইউনূস পেলেন শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় অব্যাহতি।

এদিন ইউনূস সেন্টার থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা আসছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত