নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে, তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এই স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছাত্রদের সার্বক্ষণিক কাজ করে যাওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
রবিবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ছাত্র সংগঠক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার যে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে, তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তোমরা এর থেকে বেরিয়ে যেও না।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পান শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বাসস জানিয়েছে, সভার শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহত শিক্ষার্থীদের কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। এ সময় হতাহতদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ড. ইউনূস। কাঁদতেও দেখা যায় তাকে।
অধ্যাপক ইউনূস গত ১৫ বছরের অপশাসনের কথা স্মরণ করে শিক্ষার্থীদের বলেন, “এতদিন তারা চুপচাপ শুয়ে শুয়ে স্বপ্নের মধ্যে ছিল এবং আনন্দ সহকারে লুটপাট করে যাচ্ছিল। এরা কি এখন চুপচুপ বসে থাকবে?
“না, তারা খুব চেষ্টা করবে আবার তোমাদেরকে দুঃস্বপ্নের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার। চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখবে না । কাজেই যে কাজ শুরু করেছো, তা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এর থেকে বেরিয়ে যেও না।”
ছাত্ররা হাল ছেড়ে দিলে সব নষ্ট হয়ে যাবে উল্লেখ করে এই নোবেলজয়ী বলেন, বাংলাদেশের জন্ম থেকে এ সুযোগ আর আসেনি। যে সুযোগ তোমরা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছো। এ সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশের আর কোনও ভবিষ্যৎ থাকবে না।
“এটা যেন শুধু রাষ্ট্র না, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। যেহেতু তরুণরা হাল ধরেছে তাই এটা ইউনিক বা অনন্য।”
তরুণরা কোন যাদুমন্ত্রে বাংলাদেশে বিপ্লব সংগঠিত করেছে, তা দেখতে সারা দুনিয়ার মানুষ এদেশে আসবে এমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দুনিয়ার মানুষ দেখতে আসবে, তোমাদের কাছ থেকে শিখতে আসবে। তোমাদের কাছে জানতে চাইবে- কোন মন্ত্র দিয়ে এই বিপ্লব করেছো। এই মন্ত্র তারা শিখতে চাইবে।”
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তোমাদের মন্ত্র কী, সেটা হয়ত তোমরা বুঝতে পারছো না। এটা একটা বড় মন্ত্র। এই মন্ত্র ধরে রাখো। মন্ত্র যদি শিথিল হয়ে যায়, আমাদের কপালে অশেষ দুঃখ আছে। সেই দুঃখ যেন আমাদেরকে দেখতে না হয়।”
অভ্যুত্থান পরবর্তীতে তরুণরা দেশের হাল ধরেছে, তারা অনন্য এক বাংলাদেশ তৈরি করে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান।
শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ চিন্তায় অনড় থাকার পরামর্শও দেন তিনি। তরুণদের চিন্তা স্বচ্ছ ও সঠিক, তাই নিজ নিজ চিন্তায় অনড় থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যদি কেউ স্বপ্ন পূরণের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দেয়, তা গ্রহণ করো না।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ও নিহতদের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “তোমাদের দিকে তাকাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম, তোমরাও শহীদ হয়ে যেতে পারতে। যখন হাসপাতালে শিক্ষার্থীদের দেখার জন্য যাই, তাদের দিকে তাকাতে কষ্ট হয়। আহতদের যতবার দেখি ততবার মনে প্রশ্ন জাগে, কী বাংলাদেশ আমরা বানিয়েছি যে এতগুলো তাজা প্রাণ পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হলো। আমরা যারা আজকে এখানে বসে কথা বলছি, তাদের একমাত্র দায়িত্ব তাদের এই ত্যাগ, এই জীবনের মূল্যের স্বপ্ন পূরণ করা।”
ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের যোগ্যতা না থাকতে পারে, ক্ষমতা না থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের প্রতিজ্ঞা রইল, আমরা স্বপ্ন পূরণ করব। হাসপাতালের দৃশ্য এবং আন্দোলনের প্রতিদিনের ঘটনা মানুষকে জানাতে হবে, বোঝাতে হবে এর পেছনে কী ছিল।”