অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়ে বিচারিক আদালতের আদেশ বাতিল চাইতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্ত হবেন শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় দণ্ডিত ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০২৩ সালের ৩০ মে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় ইউনূসসহ ১৪ আসামির বিরুদ্ধে বুধবার (১২ জুন) ঢাকার জজ আদালত অভিযোগ গঠন করে ১১ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ঠিক করে দেয়।
এ মামলায় অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ ও মামলা বাতিল চেয়ে ঈদের পর হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হবে বলে জানান তার আইনজীবী।
তিনি বলেন, “আমরা হাইকোর্টে রিট দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ঈদের ছুটির পরই হাইকোর্টে ফাইল করা হবে।”
এক যুগ আগে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকে সরকারের সঙ্গে তার টানাপড়েন চলছে।
১৯৮৩ সালে সরকারের অংশীদারত্বে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে ছিলেন ইউনূস। দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রেখে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য ২০০৬ সালে ব্যাংকটির সঙ্গে ইউনূসও যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
বয়সের কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে ইউনূসকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করে আওয়ামী লীগ সরকার। তার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়েও হেরে যান তিনি। এরপর গ্রামীণ ব্যাংকের পাশাপাশি এর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বও হারাতে থাকেন এই নোবেলজয়ী।
সরকারের সঙ্গে ইউনূসের টানাপড়েনের মধ্যে শ্রম আইন লঙ্ঘন করে শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করে।
ড. ইউনূস ছাড়াও মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- ড. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম, এস এম হুজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম ও দপ্তর সম্পাদক মো. কামরুল হাসান।
গত ২ এপ্রিল ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আস সামছ জগলুল হোসেন। তিনি পরবর্তী বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বদলির আদেশ দেন। এ মামলায় গত ১ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, দণ্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং আইনে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে স্থানান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
গত বছরের ৩০ মে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ সংস্থার উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।