অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় বিচারিক আদালতে অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা আবেদনের বিষয়ে আগামী ২১ জুলাই আদেশ দেবে হাইকোর্ট।
আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের এ দিন ঠিক করে দেন।
আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন, দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ।
এক যুগ আগে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকে সরকারের সঙ্গে তার টানাপড়েন চলছে।
১৯৮৩ সালে সরকারের অংশীদারত্বে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে ছিলেন ইউনূস। দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রেখে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য ২০০৬ সালে ব্যাংকটির সঙ্গে ইউনূসও যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
বয়সের কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে ইউনূসকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করে আওয়ামী লীগ সরকার। তার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়েও হেরে যান তিনি। এরপর গ্রামীণ ব্যাংকের পাশাপাশি এর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বও হারাতে থাকেন এই নোবেলজয়ী।
সরকারের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। সেই মামলায় এ বছরের জানুয়ারিতে ড. ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার শ্রম আদালত। তবে এই মামলায় আগামী ১৪ আগস্ট পর্যন্ত জামিন পেয়েছেন তিনি।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার কার্যক্রম চলার মধ্যেই শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের ৩০ মে ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ সংস্থার উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
ড. ইউনূস ছাড়াও মামলায় অন্য আসামিরা হলেন– গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম, এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম ও দপ্তর সম্পাদক মো. কামরুল হাসান।
এই মামলায় গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আছাদুজ্জামানের আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। গত ১২ জুন ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। ১৫ জুলাই এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করা আছে।
মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়ে বিচারিক আদালতের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ৮ জুলাই হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূস। সেই আবেদনের ওপর দীর্ঘ শুনানি বৃহস্পতিবার শেষ হলে হাইকোর্ট আদেশের দিন ঠিক করে দেয়।