মাছের শুটকি ভুনা ও ভর্তা কতটা মজার তা সবাই জানেন। কিন্তু মাংসের শুটকি হতে পারে, তা আজকাল কারও কারও কাছে নতুন আলাপ ঠেকবে। ফ্রিজ না থাকার দিনে এবং গ্রামে বিশেষ করে কোরবানির ঈদে মাংস অনেকদিন সংরক্ষণ করতে শুটকি বানিয়ে রাখা হতো। পরে যখন যেমন সুবিধা হয়, রান্না করে খাওয়া হতো।
আজকাল তো অনেক উদ্যোক্তা মাংসের শুটকি বানিয়ে বিক্রি করছেন অনলাইনে। এখন ঘরে ঘরে ফ্রিজ হলেও, কোরবানির ভাগে যেটুকু মাংস আসবে তা থেকে খানিকটা দিয়ে সহজেই শুটকি বানিয়ে রেখে দিতে পারবেন।
গরুর মাংসের শুটকি বানাতে যা যা লাগবে
মাংস – আধা কেজি
পানি – ৩ কাপ
দারুচিনি – ১টি
তেজপাতা – একটি পাতার অর্ধেক
এলাচ – ৩টি
লবঙ্গ – ২টি
আদা বাটা – ১ চা চামচ
রসুন বাটা – ১ চা চামচ
লবণ – স্বাদ মতো
হলুদ গুঁড়া – আধা চা চামচ
লাল মরিচের গুঁড়া – আধা চা চামচ
জিরা গুঁড়া – আধা চা চামচ
ধনিয়া গুঁড়া – আধা চা চামচ
শুটকি বানানোর ধাপ
চর্বি ছাড়া মাংস নিতে হবে। চর্বি থাকলে শুটকি বেশি দিন ভালো থাকবে না। মাংস ছোট ছোট টুকরা করে কাটতে হবে। চুলায় কড়াই বসিয়ে পানি দিন। তাতে আস্ত ও বাটা মশলা দিন একে একে। পানির সঙ্গে সব মিশিয়ে নিন। এবার মাংস ঢেলে দিন পানিতে। মাঝারি আঁচে প্রায় ১০-১৫ মিনিট মাংস জ্বাল দিয়ে নিতে হবে।
অনেকে আবার কোনো পানি ছাড়া শুধু হলুদ-লবণ দিয়ে মাংস সিদ্ধ করে নেন; অর্থ্যাৎ মাংসের পানিতে মাংস সিদ্ধ করতে হবে।
তবে মাংস বেশি সিদ্ধ করা যাবে না; তাতে শুটকির স্বাদ ভালো হবে না।
এবার ছাকনিতে মাংস ঢেলে নিতে হবে, যেন পানি ঝরে যায়। মশলা মাখা মাংস সিদ্ধ এই পানি চাইলে কেউ স্যুপ রান্নায় দিতে পারেন।
এবার একটা ট্রে বা থালাতে পানি ঝরিয়ে নেওয়া মাংস বিছিয়ে দিতে হবে। এভাবে রোদে শুকানো যায়। রোদ না পেলে চুলার তলে রেখেও মাংস শুকিয়ে নেওয়া যাবে। এমনকি ফ্যানের বাতাসেও মাংসের শুটকি শুকানো যেতে পারে।
শুকিয়ে গেলে মাংসের আকার একটু ছোট হয়ে আসবে। কাঁচের বোতলে ভরে রাখা যাবে শুটকি। শুটকি ভরা বোতল ফ্রিজে অনেকদিন ধরে সংরক্ষণ করা যায়।
মাংসের শুটকির ঝোল রান্নায় যা যা লাগবে
পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ
তেজপাতা – বড় ১টি টুকরা করা
দারুচিনি (মাঝারি) – ২টি
লবঙ্গ – ৭/৮টি
ছোট এলাচ – ৮/৯টি
বড় কালো এলাচ – ১টি
জয়ত্রী – সামান্য
আদা বাটা – ১ চা চামচ
রসুন বাটা – ১ চা চামচ
হলুদ গুঁড়া – ১ চা চামচ
ধনে গুঁড়া – আধা চা চামচ
জিরা গুঁড়া – আধা চা চামচ
লাল মরিচের গুঁড়া – ১ চা চামচ
রান্না পর্ব
মাংসের শুটকি আগে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর একেবারে গরম পানিতে ভিজিতে রাখতে হবে মাংস। মাংস ভিজে যেন নরম হয়ে আসে অনেকখানি। এরপর মাংস খানিক থেঁতলে নিতে হবে। হামানদিস্তায় বা পাটায় মাংস থেঁতলে নেওয়া যায়।
এবার কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি করে ভাজতে হবে। ভাজা হলে একে একে দিতে হবে গোটা মশলা। মশলার সুগন্ধ ছড়ালে আদা ও রসুন বাটা দিতে হবে। আদা যেন ছিটে না আসে তাই এখন একটু লবণ দেওয়া যায়। নেড়ে দিয়ে তারপর দিতে হবে গুঁড়া মশলা।
কড়াই মাঝে মাঝে ঢেকে দিয়ে মশলা কষিয়ে নিতে হবে।
কষানো মশলায় থেঁতো করা মাংসের শুটকি ঢেলে দিতে হবে। কষানোর সময় মাংস আরও খানিক নরম হয়ে ফুলে উঠবে। মাঝে মাঝে পানি যোগ করে শুটকি কষাতে হবে। লবণ চেখে দেখে নেওয়া যায় একবার এসময়। শুটকি কষানো হলে ঝোলের জন্য গরম পানি দিতে হবে।
গরুর মাংসের শুটকি রান্না করতে বেশ খানিক সময় লাগে। এই রান্নায় দুই-আড়াই ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই।
একবার গরম পানি দেওয়ার পর মাংসের শুটকি হয়তো আধা সিদ্ধ হবে; এরপরও আরও দুই দফা গরম পানি দিতে হবে।
মাংসের শুটকি ঝাল ঝাল খেতে মজা হয়; ঘন ঝোলে কাঁচা মরিচ ভেঙ্গে দিতে হবে।
রুটি-পরটা অথবা পোলাও দিয়ে মাংসের শুটকি রান্না খেতে মুখোরোচক লাগবে।