নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বরাবরই উচ্চকণ্ঠ ইসরায়েল; ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে প্রমাণও তারা দেখিয়েছিল। কিন্তু লেবানন থেকে ওড়া ড্রোন কীভাবে ফাঁকি দিল ইসরায়েলের নজরদারি?
শনিবার খোদ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাড়িতে একটি ড্রোন হামলার পর উঠেছে এই প্রশ্ন।
ড্রোন আঘাত হানার সময় নেতানিয়াহু কিংবা তার পরিবারের কেউ ওই অবকাশ নিবাসে ছিলেন না। ফলে তাদের ক্ষতি হওয়ার প্রশ্নও আসে না।
কিন্তু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কোথায় গলদ, তা নিশ্চিত করেই ভাঁজ ফেলেছে ইসরায়েলের সামরিক কর্মকর্তাদের কপালে। কারণ যাকে তারা দেখছে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চেষ্টার ঘটনা হিসাবে, তা ঠেকানো কেন গেল না?
আবার যে শহরে ড্রোনটি আঘাত হেনেছে, সেই সিজারিয়া শহরটি সীমান্তের কোনও শহরও নয়। ফলে ইসরায়েলের প্রায় মাঝামাঝি এলাকার এই শহরে হামলাটি যে কতটা গুরুত্ব বহন করে, তা তুলে ধরলেন আজ জাজিরার সাংবাদিক নূর ওদেহ।
তিনি বলেছেন, “ড্রোনটি লেবানন সীমান্ত দিয়ে ঢুকে ৭০ কিলোমিটার পথ পািড় দিয়েছে এবং তা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শনাক্ত করতে পারেনি, সেকারণে কোনও সাইরেন বাজেনি। এটি ঠিকই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। আর এটাই ইসরায়েল সরকারে এবং তাদের নিরাপবতা কর্মকর্তাদের বড় উদ্বেগের বিষয়।”
গাজায় অভিযানের এক বছর পেরুনোর ঠিক আগে এখন লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছে ইসরায়েল। প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলের গোলাবর্ষণ হচ্ছে দক্ষিণ লেবাননে। হিজবুল্লাহও রকেট ছুড়ে তার জবাব দিচ্ছে। কিন্তু ইসরায়েলের এতটা ভেতরে এবং প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে হামলার ঘটনা এটাই প্রথম।
নেতানিয়াহুর সরকারি বাড়ি জেরুজালেমে। এর বাইরে তার সিজারিয়া ও জেরুজালেমে তার ব্যক্তিগত দুটি বাড়ি রয়েছে। সিজারিয়ার বাড়িতে তিনি অবকাশ যাপনের সময়ই সাধারণত ওঠেন।
ভূমধ্য সাগর তীরের সিজারিয়া শহরটি মূলত অভিজাত ও ধনী ব্যক্তিদের আবাস। সেখানকার ভিলাগুলোও বেশ বিলাসী। তারই একটি নেতানিয়াহুর, যিনি ১৭ বছর ধরে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে রয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, একটি ড্রোন বাড়িটিতে আঘাত হানে।
তবে ড্রোন বাড়িটির কতটা ক্ষতি করেছে, সেই বিষয়ে ইসরায়েলি কোনও কর্তৃপক্ষের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দ্য টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ড্রোন আঘাত হানার আগে সিজারিয়ায় কোনও সাইরেন বাজেনি। তবে তেল আবিবের উত্তর গিলত সাইরেন বেজেছে, যেখানে আইডিএফের এবং গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দপ্তর।
সিজারিয়ার এক বাসিন্দা টাইমস অব ইসরায়েলকে বলেন, “আমরা হেলিকপ্টার ওড়ার শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। তাকে কিছু ঘটেছে বলে আঁচ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু কোনও সাইরেন না বাজায় বুঝতে পারিনি যে বড় কোনও কিছু ঘটতে যাচ্ছে।”
তবে ড্রোন আঘাত হানার পর বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়ার কথা জানান এই ব্যক্তি।
“তবে এটা ড্রোন হামলা না কি ড্রোন ভূপাতিত করার শব্দ, সেটা বুঝতে পারিনি। তবে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে এমটি বড় ঘটনা ঘটেছে, যার কোনও আভাস দেওয়া যায়নি। এটা বেশ উদ্বেগের।”
ওলেক মোর নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, “হঠাৎই বিস্ফোরণের বিকট শব্দ কানে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। বুঝতে পারছিলাম না যে কী ঘটেছে।”
নেতানিয়াহুর বাড়ি থেকে মোরের বাড়িটি হাঁটা দূরত্বের। তাই বিস্ফোরণের বিকট শব্দে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন।
আঘাত হানার আগে কেন ড্রোনটি শনাক্ত করে ভূপাতিত করা গেল না এবং তার আগেও কয়েকটি ঘটনায়ও কেন একই রকম ঘটল, তা নিয়ে তদন্ত চলছে বলে আইডিএফ জানিয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, লেবানন থেকে তিনটি ড্রোন পাঠানো হয়েছিল, দুটি ভূপাতিতও করা হয়, তবে একটি ফাঁকি দেয়।
এদিকে ড্রোন হামলার পর নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেন, হিজবুল্লাহর সঙ্গে এই যৃুদ্ধ থেকে কোনোক্রমেই পিছু হটছেন না তিনি এবং ইসরায়েলই বিজয়ী হচ্ছে।
নিজেকে নিরুদ্বেগ দেখাতে ভিডিওতে নেতানিয়াহু কথা বলছিলেন একটি পার্কে হাঁটতে হাঁটতে। তার চোখে ছিল রোদচশমা, গায়ে কালো রঙের পলো শার্ট।
গাজায় হামলা চালিয়ে হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার বিষয়টি তুলে ধরে নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা এই যুদ্ধের শেষ দেখে ছাড়ব।
“তাকে (সিনাওয়ার) আমরা বিদায় করে দিয়েছি। ইরানের হয়ে যারা প্রক্সি লড়াই চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও আমাদের যুদ্ধ চলবে।”