শেয়ার থেকে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যসীমা উঠানো নিয়ে পুঁজিবাজারে যে আতঙ্কে বিক্রির চাপ আসছিল, তাতে মঙ্গলবার ঢাল হয়ে কাজ করেছে ব্যাংক খাত। এদিন বেশিরভাগ শেয়ারের দর কমলেও লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচকের পয়েন্ট আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে এদিন বেশি লেনদেন হওয়া ২০টি শেয়ারের মধ্যে ১০টি ছিল ব্যাংক খাতের। এক্ষেত্রে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকের পারফর্মেন্স ছিল ভালো।
দীর্ঘদিন অবিক্রিত অধিকাংশ শেয়ারের দর লোভনীয় অবস্থানে থাকায় সুযোগের অপেক্ষা করা অন্য বিনিয়োগকারীদেরও এদিন ক্রয়প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, এতে পুঁজিবাজারে জেগেছে আরও আশা।
ফলে এদিন ডিএসইর লেনদেন হয়েছে প্রায় ৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ, ১,১৭৬ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১,০৪২ কোটি টাকার কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট।
দেড় বছর পর দুই দফায় ১২টি ছাড়া অন্য কোম্পানিগুলোর শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
প্রথম দফায় গত সপ্তাহের শেষ দিন ১৮ জানুয়ারি ৩৫টি বাদে সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর সোমবার পুঁজিবাজারের লেনদেন শেষে এক আদেশে আরও ২৩টির ফ্লোর প্রাইস উঠানোর কথা জানায় বিএসইসি।
তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৩৯২টি, এর মধ্যে ৩৮০টির শেয়ারদরের সর্বনিম্ন সীমা তুলে নেওয়া হলো।
ফ্লোর প্রাইস উঠানোর পর প্রথম দিন গত রবিবার বিক্রির চাপে বড় পতন হয় পুঁজিবাজরে, ডিএসইএক্স পড়ে ৯৬ পয়েন্ট। তবে পরের দিন সোমবার বেলা আড়াইটার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূলসূচকে আসে কিছুটা উত্থান, বাড়ে ১৪ পয়েন্ট।
সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজারে ইতিবাচকতা লক্ষ্য করা যায়, ডিএসইএক্স ২২ পয়েন্ট বাড়ার মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। সূচক দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৭৬ দশমিক ২৫ পয়েন্ট।
এদিন শুরুতে সূচক কিছুটা পড়ে গেলেও দ্রুত সামলে উঠে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। বেলা সোয়া ১১টায় সূচক পৌঁছায় ৬ হাজার ২৯৯ পয়েন্টে। পরের সোয়া এক ঘণ্টায় সূচক কিছুটা কমলেও সোয়া ১২টার পর আবার বাড়তে শুরু করে। সাড়ে ১২টায় ডিএসইএক্স ৬ হাজার ২৭৮ পয়েন্টে পৌঁছায়, যা আগের দিনের চেয়ে ২৩ পয়েন্ট বেশি। শেষ পর্যন্ত ২২ পয়েন্ট বাড়ার মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়।
মঙ্গলবার অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইর শরীয়াহ্ সূচক ডিএসইএস ৩ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৮৪ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১০ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৫৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এদিন ১ হাজার ১৭৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, যা সাড়ে সাত মাসের সর্বোচ্চ। গত বছরের ৫ জুন ডিএসইতে ১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।
ডিএসইতে এদিন মোট ৩৯৩ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বাড়ে ১২৬টির, কমে ২২৭টির ও অপরিবর্তিত থাকে ৪০টির।
তবে অন্য বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৭৬ দশমিক ৯১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৮ হাজার ১৫৮ দশমিক ৫৮ পয়েন্টে।
এ বাজারে এদিন লেনদেন হয়েছে ২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সোমবার লেনদেন হয় ২১ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার ২৭৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০৫টির, কমেছে ১৫০টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির দর।
পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে এ বাজারের বিশ্লেষক ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভীর সঙ্গে।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে দেওয়া নিয়ে যে ভয়-আতঙ্ক ছিল তা কেটে গেছে। এখন বাজার ভালোর দিকে যাবে বলেই মনে হচ্ছে। তার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে। মূল্যসূচকের পাশপাশি টানা দুই দিন লেনদেনও বেশ বেড়েছে।
“কারণ অনেকে দীর্ঘদিন শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি। ফলে মূল্যস্তরে উঠে যাওয়ায় যাদের নগদ অর্থের বেশি প্রয়োজন ছিল, তাদের অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে দেন।”
“এতদিন মূল্যস্তরের কারণে শেয়ার লেনদেন হয়েছে কম। এখন বাড়ছে। এটা ইতিবাচক। বাজার স্বাভাবিক ধারায় ফিরবে বলে মনে হচ্ছে”, যোগ করেন শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।