ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যসীমা উঠার পর পুঁজিবাজারে চাঙাভাব ফেরার যে আভাস পাওয়া যাচ্ছিল দুই দিন না যেতেই তা উবে গেছে।
বড় মূলধনি কোম্পানির বিক্রির চাপ অব্যাহত থাকায় বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৭০ পয়েন্ট কমে নেমেছে ৬১৫৬ পয়েন্টে, যা দেড় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থান।
আর এদিন ডিএসইর লেনদেন আগের দিনের চেয়ে ২৫.৮ শতাংশ কমেছে। এদিন লেনদেন হয়েছে ৮৭০ কোটি ৯১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট, যা আগের দিন ছিল ১,১৭৩ কোটি টাকা।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বেশিরভাগ সাধারণ বিনিয়োগকারী দীর্ঘদিন ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা শেয়ারগুলো বিক্রি করে হাতে নগদ টাকা তুলে নিচ্ছেন। বুধবারও ছিল এ ধরনের বিক্রির চাপ।
এছাড়া বড় মূলধনি কোম্পানি যেমন- ইউনাইটেড পাওয়ার, ওয়াল্টন, বিকন ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা ও বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলের শেয়ারদরে উল্লেখযোগ্য সংশোধন দেখা গেছে, যা দেশের প্রধান পুঁজিবাজারের মূল্যসূচককে টেনে নামিয়েছে। এই ৫টি শেয়ার বৃহস্পতিবার ডিএসইএক্সের ২৮ পয়েন্ট পতনের জন্য দায়ী।
বুধবার ওয়ালটন, ইউনাইটেড পাওয়ার, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল, সামিট পাওয়ার ও বিকন ফার্মাসহ অনেকটা বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দামে উল্লেখযোগ্য সংশোধন হয়। এতে সেদিন এই পাঁচটি শেয়ার ডিএসইর প্রধান সূচকের ২৫ পয়েন্ট পতনের প্রায় অর্ধেকের জন্য দায়ী ছিল।
অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বুধবার কমেছিল ৩৪৭ দশমিক ২৭ পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার আরও ২৫৯ দশমিক ১৮ পয়েন্ট হারিয়ে ১৭ হাজার ৫৫২দশমিক ১২ পয়েন্টে নেমেছে।
বাজারের এই পতনে ছোট-বড় সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা ফিরিয়েছে। তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ভয় বা আতঙ্কের কিছু নেই। বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে।
দেড় বছর পর দুই দফায় ১২টি ছাড়া অন্য কোম্পানিগুলোর শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
প্রথম দফায় গত সপ্তাহের শেষ দিন ১৮ জানুয়ারি ৩৫টি বাদে সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর সোমবার পুঁজিবাজারের লেনদেন শেষে এক আদেশে আরও ২৩টির ফ্লোর প্রাইস উঠানোর কথা জানায় বিএসইসি।
তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৩৯২টি, এর মধ্যে ৩৮০টির শেয়ারদরের সর্বনিম্ন সীমা তুলে নেওয়া হলো।
ফ্লোর প্রাইস উঠানোর পর প্রথম দিন গত রবিবার বিক্রির চাপে বড় পতন হয় পুঁজিবাজরে, ডিএসইএক্স পড়ে ৯৬ পয়েন্ট। তবে পরের দিন সোমবার বেলা আড়াইটার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূলসূচকে আসে কিছুটা উত্থান, বাড়ে ১৪ পয়েন্ট।
সপ্তাহের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার ডিএসইএক্স ২২ পয়েন্ট বাড়ার মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়, সূচক দাঁড়ায় ৬ হাজার ২৭৬ দশমিক ২৫ পয়েন্টে। এদিন লেনদেন হয় ১,১৭৬ কোটি টাকার, যা ছিল প্রায় ৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগের দিন সোমবার ১,০৪২ কোটি টাকার লেনদেন হয়।
বুধবার ডিএসইএক্স ৪৯ পয়েন্ট কমে নামে ৬২২৬ পয়েন্টে, যা ছিল দুই মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে গত ২১ নভেম্বর এ সূচক ছিল ৬২২১ পয়েন্টে। এদিন লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কমে। লেনদেন হয় ১,১৭৩ কোটি টাকার কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট।
আগের দুই দিনের সূচক উত্থানের পাশাপাশি তিন দিনের হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছিল।
গত বছরের জুনের প্রথম সপ্তাহের পর এই প্রথম টানা তিন দিন এই চিত্র দেখা যায়।
বুধবার ৫০ পয়েন্ট সূচকের পতনকে ‘মূল্য সংশোধন’ ভেবে স্বাভাবিক মনে করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বৃহস্পতিবারের আবার বড় দরপতনে স্বস্তিতে নেই তারা।
রেজাউল করিম নামের একজন ছোট বিনিয়োগকারী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অনেক দিন পর হাউসে যাওয়া শুরু করেছিলাম। শেয়ার কেনা-বেচা করছিলাম। আশা করছিলাম ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠব। কিন্তু পর পর দুই দিনের বড় পতনে হতাশ হয়েছি। জানি না আগামী দিনগুলো বাজার কেমন যাবে।”
তবে ‘ভয়ের কিছু নেই’ বলে আশ্বস্ত করেছেন বাজার বিশ্লেষক আহমেদ রশিদ লালী। তিনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “এটা ঠিক যে, পর পর দুই দিন বাজার পড়েছে। তার আগে কিন্তু দুই দিন বেড়েছে। লেনদেনের গতি কিন্তু বেশ বেড়েছে। লেনদেন বাড়াকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। আমি মনে করি বাজার ঠিক আছে। ফ্লোর পাইস উঠে যাওয়ার পর বিক্রির চাপ বেড়েছে। সে কারণে মূল্যসূচক কমেছে।
“তবে আমি মনে করি বাজার এখন ঠিক হয়ে যাবে যাবে; ভালোর দিকে যাবে। বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে। দেখেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আমি বলব, মূল্যসূচকের দিকে না তাকিয়ে শেয়ারের গতিপ্রকৃতি দেখে বিনিয়োগ করুন। আতঙ্কিত হয়ে কোনও শেয়ার বিক্রি করে দেবেন না। হুট করে কোনও সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভুল সিদ্ধান্ত হবে।”
বৃহস্পতিবারের বাজার
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইতে অধিংকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭০ দশমিক ২৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ২০ দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৫২ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২৪ দশমিক ৫২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
৮৭০ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন বুধবার লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৭৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৮৯ টি কোম্পানির। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৮৫টির, কমেছে ২৮২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির দর।
অন্যদিকে সিএসই সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৫৯ দশমিক ১৮৬ পয়েন্ট কমে ১৭ হাজার ৫৫২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
লেনদেন হওয়া ২৬০ টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬০টির, কমেছে ১৭৮ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির দর।
লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বুধবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।