Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

ডিএসইতে সাড়ে ৩ বছর আগের দশা

ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

পুঁজিবাজারের পতনদশা বাজেট পেশের পরও অব্যাহত রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের আরও হতাশ করছে।

গত ৬ জুন প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পর প্রথম কর্মদিবস রবিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৫ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট পড়েছিল। দ্বিতীয় দিন সোমবার প্রায় একই পরিমাণ পড়ে।

তৃতীয় দিন মঙ্গলবার ডিএসইএক্স আরও ৩৫ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭০ পয়েন্টে নেমেছে। এই সূচক ৪২ মাস বা সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৬৯ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট।

অন্য বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তবে মঙ্গলবার দুই বাজারেই লেনদেন বেড়েছে।

গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় আট লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন; তাতে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

পুঁজিবাজারে মন্দা কাটাতে কোনও দিকনির্দেশনা ছিল না নতুন বাজেটে; উল্টো মূলধনি মুনাফা বা ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ছিল করের প্রস্তাব। এই অবস্থায় বাজেট পেশের পর দরপতন অব্যহত রয়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে।

রবিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইর মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬৫ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১৭১ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে নেমে আসে। অন্য বাজার সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৬ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৭১ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৮৪০ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে নামে।

সোমবার ডিএসইএক্স আরও ৬৫ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৬ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১০৫ দশমিক ৮৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৬২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৬৭৮ দশমিক ৩৬ পয়েন্টে নামে।

তবে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাজেট উসিলা মাত্র। বাজেট পেশের অনেক আগে থেকেই তো বাজার পড়ছে; মন্দা চলছে। আর এজন্য অনেক কারণ আছে। এখন বাজার খারাপের জন্য শুধু বাজেটকে দায়ী করা ঠিক হবে না।

“দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবও বাজারে পড়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়েই চলেছে। ডলারের দাম আরেক দফা বেড়েছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে নেমে এসেছে। সব মিলিয়ে বাজারে অস্থিরতা চলছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজার ভালো হবে—এমনটা আশা করা ঠিক হবে না।”

বাজারের এই বেহাল দশায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)।

মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, “ভালো কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীর অভাবে রুগ্ন হয়ে গেছে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো।

“আমরা রুগ্ন হয়ে যাচ্ছি, হয়ে গেছি। তাহলে বাজারের হাল ধরবে কে? এর জন্য আমাদের নীতি-সহায়তা দরকার।”

সাইফুল ইসলাম বলেন, “গত ১৫ বছরে পুঁজিবাজারে ভালো মানের উল্লেখযোগ্য কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়নি। হাতে গোনা কয়েকটি ভালো কোম্পানি এসেছে মাত্র। বাজারে ভালো কোম্পানি না আসলে নতুন বিনিয়োগকারী আসবে না।”

মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি বাজারে না আসার কারণ নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “সার্বিকভাবে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, স্টক এক্সচেঞ্জ, তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সুশাসনের ঘাটতি আছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় নতুন করে ভালো মানের কোম্পানি বাজারে আসতে চাইছে না।”

বাজার নতুন বিনিয়োগকারীও আকর্ষণ করতে পারছে না। গত কয়েক বছরে বিনিয়োগকারীদের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব ৩৩ লাখ থেকে ১৭ লাখে নেমেছে।

এর প্রভাবে ৫০ শতাংশ ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান এখন রুগ্ন হয়ে পড়েছে জানিয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, “বাজারে ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীরাই ৮০ শতাংশ। এখন তারাই বাজারের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছে। আস্থা ফেরাতে ডিএসইকে আরো ক্ষমতায়ন করতে হবে। বিদ্যমান সবগুলো নিয়ম, নীতিমালা পুনর্মূল্যায়ন করে বাজারমুখী করার সময় হয়েছে।”

বিনিয়োগকারী আকর্ষণে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত আয় (কালো টাকা) বিনিয়োগের সুযোগ ও নতুন বিনিয়োগকারীদের তিন বছর করমুক্ত ঘোষণা করার দাবি জানান তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে মন্দা চলছে। ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীই হতাশ। অনেক বিনিয়োগকারী বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

বাজেটের আগে ডিএসইসহ বাজারসংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দাবি ছিল, ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে নতুন করে যেন করারোপ করা না হয়। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবে পুঁজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফায় কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, সেকেন্ডারি বাজারে শেয়ার লেনদেন করে কোনও বিনিয়োগকারী এক বছরে ৫৫ লাখ টাকা মুনাফা করলে তার ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত থাকবে, বাকি ৫ লাখ টাকা মুনাফা ওই বিনিয়োগকারীর মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে।

তাতে ওই বিনিয়োগকারীর নির্দিষ্ট একটি অর্থবছরে তার মোট আয়ের ওপর যে হারে কর প্রযোজ্য হবে, সেই হারে কর দিতে হবে।

তবে কোনও বিনিয়োগকারী যদি কোনও শেয়ার একটানা ৫ বছর ধরে রেখে ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করে, সে ক্ষেত্রে ওই মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপ হবে।

বাজার পরিস্থিতি

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর থেকে পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলছে। এই সময়ে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার বাজার মূলধন হারিয়েছে ডিএসই। পতন ঠেকাতে তিন শতাংশের সার্কিট ব্রেকার দিয়েছে বিএসইসি। তারপরও ধারাবহিক দরপতন ঘটছে দুই বাজারে।

বাজেট পেশের আগে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পড়তে পড়তে ৫ হাজার ২৫০ পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছিল। বাজেট প্রস্তাবের দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ২৩৭ দশমিক ৩২ পয়েন্ট।

দুদিন সাপ্তাহিক ছুটির পর রবিবার সেই সূচক ৬৫ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১৭১ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে দাঁড়ায়। সেমবারও ডিএসইএক্স প্রায় একই পরিমাণ ৬৫ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৬ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১০৫ দশমিক ৮৮ পয়েন্টে নেমে আসে।

মঙ্গলবার ডিএসইএক্স আরও ৩৫ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এই সূচক ৪২ মাস বা সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

এক বছর আগে ৯ জুন ডিএসইএক্স ছিল ৬ হাজার ৩৫৬ দশমিক ৩০ পয়েন্ট।

হিসাব বলছে, এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইএক্স কমেছে ১ হাজার ২৮৬ পয়েন্টের বেশি।

মঙ্গলবার ডিএসইর অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ৯ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৩ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। ডিএস-৩০ সূচক ৮ দশমিক ৭২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮০৩ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৭ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৫৭০ দশমিক ৩৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

গত বছরের ৯ জুন সিএএসপিআই ছিল ১৮ হাজার ৭৭৬ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক বছরে সিএএসপিআই কমেছে ৪ হাজার ২০৮ পয়েন্ট।

মঙ্গলবার ডিএসইতে ৪৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের সোমবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৩৫৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

এদিন ডিএসইতে মোট ৩৯৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে বেড়েছে ৫১টির। কমেছে ৩০৮টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৩৫টির দর।

মঙ্গলবার সিএসইতে ১০৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। সোমবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ২৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার সিএসইতে ২১১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২১টির। কমেছে ১৬৩টির। অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির দর।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত