ঈদের পর দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেনে বিপর্যয় দেখা গেছে। তবে মূল্যসূচক বেশ খানিকটা বেড়েছে দুই বাজারেই।
ঈদের তিন দিন (১৬ থেকে ১৮ জুন) এবং সাপ্তাহিক দুই দিনের (১৪ ও ১৫ জুন) ছুটির পর বুধবার লেনদেন শুরু হয় পুঁজিবাজারে। উঠানামার মধ্য দিয়ে লেনদেন চললেও শেষ দিকে এসে দুই বাজারেই মূল্যসূচক বেড়েছে।
প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৩ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট ৫ হাজার ১৬১ দশমিক ৩৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬১ দশমিক ২২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৬০৮ দশমিক ৪৬ পয়েন্টে।
তবে দুই বাজারেই লেনদেন তলানিতে নেমে এসেছে। ডিএসইতে আগের দিনের চেয়ে ৪২ শতাংশ লেনদেন কমেছে। মাত্র ২৪৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের এই অঙ্ক গত ১৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এই বাজারে ২৩১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। ঈদের ছুটির আগে শেষ লেনদেন দিবস ১৩ জুন লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৪২৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
সিএসইতে বুধবার ৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। ১৩ জুন লেনদেন হয়েছিল ১১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ঈদের আমেজ এখনও কাটেনি। অনেক বিনিয়োগকারী এখনও ঢাকায় ফেরেননি। সে কারণেই লেনদেন কম।”
“তবে আশার কথা হচ্ছে, মূল্যসূচক বেড়েছে। ঈদের ছুটির আগেও দুই দিন সূচক বেড়েছিল। মনে হচ্ছে, বাজার এখন ইতিাচক ধারায় ফিরবে।”
দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে মন্দা চলছে। ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীই হতাশ। অনেক বিনিয়োগকারী বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
এই অবস্থায় গত ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় আট লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন; তাতে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
পুঁজিবাজারে মন্দা কাটাতে কোনও দিক-নির্দেশনা ছিল না নতুন বাজেটে; উল্টো মূলধনি মুনাফা বা ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ছিল করের প্রস্তাব। এই অবস্থায় বাজেট পেশের পরও দরপতন অব্যহত থাকে বাজারে।
বাজেট উপস্থাপনের পর প্রথম লেনদেন দিবস ৯ জুন প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৫ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১৭১ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে নেমে আসে। সেদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৬ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৭১ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৮৪০ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে নামে।
পরের দিন ১০ জুন ডিএসইএক্স আরও ৬৫ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৬ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১০৫ দশমিক ৮৮ পয়েন্টে নেমে আসে। সিএসই’র সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৬২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ০৯ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৬৭৮ দশমিক ৩৬ পয়েন্টে নামে।
১১ জুন ডিএসইএক্স আরও ৩৫ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭০ পয়েন্টে নেমে আসে। ওই সূচক ছিল ৪২ মাস বা সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
তবে ঈদের ছুটির আগে দুই দিনে (১২ ও ১৩ জুন) ডিএসইএক্স ৪১ পয়েন্টের মতো বেড়ে ৫ হাজার ১১৭ দশমিক ৮১ পয়েন্টে অবস্থান করছিল।
বাজেট পেশের আগে ডিএসইসহ বাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দাবি ছিল, ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে নতুন করে যেন করারোপ করা না হয়। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবে পুঁজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফায় কর আরোপের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, সেকেন্ডারি বাজারে শেয়ার লেনদেন করে কোনও বিনিয়োগকারী এক বছরে ৫৫ লাখ টাকা মুনাফা করলে তার ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত থাকবে, বাকি ৫ লাখ টাকা মুনাফা ওই বিনিয়োগকারীর মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে।
তাতে ওই বিনিয়োগকারীর নির্দিষ্ট একটি অর্থবছরে তার মোট আয়ের ওপর যে হারে কর প্রযোজ্য হবে, সেই হারে কর দিতে হবে।
তবে কোনও বিনিয়োগকারী যদি কোনও শেয়ার একটানা ৫ বছর ধরে রেখে ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করে, সে ক্ষেত্রে ওই মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপ হবে।
বুধবারের বাজার পরিস্থিতি
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর থেকে পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলছে। এই সময়ে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার বাজার মূলধন হারিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। পতন ঠেকাতে তিন শতাংশের সার্কিট ব্রেকার দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তারপরও ধারাবহিক দরপতন ঘটতে থাকে দুই বাজারে।
বাজেট পেশের আগে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পড়তে পড়তে ৫ হাজার ২৫০ পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছিল। বাজেট প্রস্তাবের দিন ৬ জুন ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ২৩৭ দশমিক ৩২ পয়েন্ট।
ঈদের ছুটির আগে ১৩ জুন শেষ লেনদেন দিবসে ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ১১৭ দশমিক ৮১ পয়েন্ট।
তবে ঈদের ছুটির পর বুধবার প্রথম লেনদেনে ডিএসইএক্স ৪৩ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৬১ দশমিক ৩৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইর অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ১৩ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১২১ দশমিক ৩১ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। ডিএস-৩০ সূচক ২২ দশমিক ২৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮৪৪ দশমিক ১৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬১ দশমিক ২২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৬০৮ দশমিক ৪৬ পয়েন্টে।
তবে দুই বাজারেই লেনদেন তলানিতে নেমে এসেছে। ডিএসইতে মাত্র ২৪৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের এই অঙ্ক গত ১৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এই বাজারে ২৩১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। ঈদের ছুটির আগে শেষ লেনদেন দিবস ১৩ জুন লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৪২৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
সিএসইতে বুধবার ৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। ১৩ জুন লেনদেন হয়েছিল ১১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
বুধবার ডিএসইতে মোট ৩৯২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে বেড়েছে ২৩২টির। কমেছে ৯৬টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৬৪টির দর।
এদিন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ১৪৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৩টির। কমেছে ৭১টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ২১টির দর।